বাংলাদেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের দরজা খুলে দেওয়ার পথ প্রশস্ত

বাংলাদেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট চালু করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা পরিচালনার জন্য খসড়া নির্দেশিকা প্রকাশ করে জনমত চাওয়া শুরু করেছে। এই পদক্ষেপ জুলাই-আগস্টের জনগণের বিদ্রোহের শহীদের ত্যাগের সুফল ভোগ করার দিকে এক ধাপ এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ছবি - সংগৃহীত

এই পদক্ষেপ ডিজিটাল বৈষম্য দূরীকরণ, ব্যাকহোলিং, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং গ্রাহক তথ্য ব্যবহারের নতুন সুযোগের দরজা খুলে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে ইলন মাস্কের স্টারলিংসহ বিশ্বের অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশ করার পথ প্রশস্ত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

গত ২৯ অক্টোবর বিটিআরসি তাদের ওয়েবসাইটে `এনজিএসও স্যাটেলাইট পরিষেবা অপারেটরের জন্য নিয়ন্ত্রক ও লাইসেন্সিং নির্দেশিকা' প্রকাশ করে আগামী ১৮ নভেম্বরের মধ্যে জনমত চাওয়া শুরু করেছে।

এদিকে, মোবাইল ফোন অপারেটর এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্টরা স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের জন্য দরজা খুলে দেওয়ার পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, এটি দেশে ডেটা পরিষেবা ক্ষেত্রে বিপ্লব আনবে এবং ডিজিটাল বৈষম্য দূরীকরণের নতুন সুযোগ তৈরি করবে।

খসড়া নির্দেশিকা অনুসারে, ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের আওতায় নিবন্ধিত একক মালিকানা, অংশীদারিত্ব এবং কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে এনজিএসও স্যাটেলাইট সিস্টেম ও পরিষেবা নির্মাণ, মালিকানা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালনা করার জন্য লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবে।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে এনজিএসও স্যাটেলাইট সিস্টেম ও পরিষেবা নির্মাণ, মালিকানা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালনা করার জন্য ১০০ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগ, বিদেশি অংশীদারিত্ব, যৌথ উদ্যোগ বা অবাসী বাংলাদেশীদের (এনআরবি) বিনিয়োগ অনুমোদিত।

খসড়া নির্দেশিকা অনুযায়ী, লাইসেন্সের মেয়াদ পাঁচ বছর হবে।

এতে আরও বলা হয়েছে যে লাইসেন্সপ্রাপ্ত সংস্থা নিম্নলিখিত এনজিএসও স্যাটেলাইট পরিষেবা প্রদান করার অধিকার পাবে: ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা, ইন্ট্রানেট পরিষেবা (অভ্যন্তরীণ ডেটা যোগাযোগ), ইন্টারনেট অফ থিংস এবং মেশিন-টু-মেশিন যোগাযোগ, মোশনে আর্থ স্টেশন পরিষেবা, পৃথিবী অন্বেষণ স্যাটেলাইট পরিষেবা, দূর থেকে সেন্সিং / আবহাওয়া পরিষেবা এবং বিটিআরসির অনুমোদিত অন্যান্য পরিষেবা।

তবে, পরিষেবা প্রদানকারীরা ডাইরেক্ট-টু-হোম (ডিটিএইচ) পরিষেবা, প্রচার পরিষেবা, স্যাটেলাইট আইএমটি-ভিত্তিক পরিষেবা অথবা টেলিযোগাযোগ পরিষেবা প্রদানের অনুমতি পাবে না।

আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০০,০০০ টাকা, অধিগ্রহণ ফি ১০,০০০ ডলার এবং বার্ষিক ফি ৫০,০০০ ডলার। এছাড়া, প্রতিটি টার্মিনালের জন্য বার্ষিক স্টেশন / টার্মিনাল ফি ২০ ডলার।

লাইসেন্সপ্রাপ্ত সংস্থা তাদের বার্ষিক অডিটকৃত মোট আয়ের ৫.৫% বিটিআরসির সঙ্গে ভাগ বসাতে হবে। মোট আয়ের আরেকটি ১% ‘স্পেস ইন্ডাস্ট্রি উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনায় অবদান’ হিসেবে পরিশোধ করতে হবে।

লাইসেন্সপ্রাপ্ত সংস্থাকে পরিষেবা শুরু করার আগে বাংলাদেশে কমপক্ষে একটি গেটওয়ে সিস্টেম স্থাপন করতে হবে। তবে, বিটিআরসি লাইসেন্সপ্রাপ্তদের অতিরিক্ত গেটওয়ে স্থাপন করার জন্য উৎসাহিত করেছে।

বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে স্থাপিত কোনও ব্যবহারকারীর টার্মিনাল এই স্থানীয় গেটওয়ে দ্বারা প্রমাণীকরণ এবং পরিষেবা প্রদান করা হবে। বাংলাদেশের ভিতরে পরিষেবা প্রদানের জন্য এই টার্মিনাল থেকে সকল ট্রাফিক এই স্থানীয় গেটওয়ে দ্বারা পরিচালিত হবে।

এনজিএসও গেটওয়ে আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট ডেটা ট্রাফিক পরিচালনা করার জন্য আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবে।

বিএসএসের সাথে কথা বলে রবি এক্সিয়াটার প্রধান কর্পোরেট এবং নিয়ন্ত্রক অফিসার শাহেদ আলম বলেছেন, “আমরা আমাদের দেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিচয়ের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই এবং ডেটা পরিষেবা ক্ষেত্রে এর বিপ্লব আনার সম্ভাবনা বিবেচনা করি।”

তিনি উল্লেখ করেছেন যে এই উন্নয়ন ব্যাকহোলিং, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং গ্রাহক তথ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে নতুন সুযোগের পথ প্রশস্ত করতে পারে।

বাংলালিংকের প্রধান কর্পোরেট এবং নিয়ন্ত্রক বিষয়ক অফিসার তৈমুর রহমান বলেছেন, ‘এই নতুন পরিষেবা পরিচয়ের আগে জনগণের মতামত গ্রহণের জন্য নিয়ন্ত্রকের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয় এবং আমরা এটির প্রশংসা করি।”

তিনি আরও বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি এই প্রক্রিয়া এর ভবিষ্যত দিকনির্দেশনা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ অনুধাবন প্রদান করবে।’

গ্রামীণফোনের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান শারফুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, ‘গ্রামীণফোন মানুষের জীবনে, সমাজে, অর্থনীতিতে এবং সামগ্রিকভাবে দেশে ইতিবাচক পরিবর্তন আনয়নকারী কোনও নতুন প্রযুক্তিকে স্বাগত জানায়।’

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (আইএসপিএবি), গ্রাহকদের ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদান কারী সংস্থাগুলোর একটি প্ল্যাটফর্ম, কোনও নতুন প্রযুক্তিকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। তবে, এই প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা নিরূপণের পর এটিতে যাওয়া উচিত বলে তারা মনে করে।

আইএসপিএবি সভাপতি মোঃ এমদাদুল হক বিএসএসকে বলেছেন যে দেশ এবং সমগ্র শিল্পের জন্য যে প্রযুক্তি উপযুক্ত, তারা সর্বদা নতুন প্রযুক্তিকে স্বাগত জানান।

‘নতুন প্রযুক্তিকে স্বাগত জানানোর বিরোধ আমাদের নেই, কিন্তু প্রযুক্তিটি দেশ এবং তার জনগণের জন্য উপযুক্ত কিনা তা প্রথমে বিবেচনা করা উচিত,’ তিনি বলেছেন।