স্বৈরাচারী শাসনের পতন ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং কৌশলগত পরাজয় বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের মনে হয়, ভারত তাদের এই পরাজয় মেনে নিতে পারছে না। তারা এটা স্বীকার করার সাহস পাচ্ছে না।’

press transparency international bangladesh tibসংবাদ সম্মেলনের ছবি

‘নতুন বাংলাদেশ: স্বৈরাচারী শাসন পতনের পর প্রথম ১০০ দিন’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সকল দেশের সঙ্গেই পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহায়তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। আমরা ভারতের সঙ্গেও একই রকম সম্পর্ক আশা করি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে ‘ইতিবাচক পরিবর্তন’ আসার পরও ভারত প্রত্যাশিত ‘ইতিবাচক ভূমিকা’ পালন করতে বা ‘ইতিবাচক মনোভাব’ দেখাতে পারছে না, কারণ ভারত তাদের ঐতিহাসিক রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং কৌশলগত পরাজয় মেনে নিতে পারছে না।

‘তারা (ভারত) এখনও বাংলাদেশকে সেই দৃষ্টিতে দেখছে যা বাংলাদেশের স্বৈরাচারিতাকে সমর্থন করে,’ বলেন ড. ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি আরও বলেন, এ কারণে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির কিছু ক্ষেত্রে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করার ক্ষেত্রে ভারতের জন্য বিরাট ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘অনেকের ধারণা ছিল ভারতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে, জনগণ এবং গণমাধ্যমে ‘উদার চিন্তাধারা’ প্রচারিত হয়। আমাদের মনে হয়, ভারত (সেই উদার চিন্তাধারা থেকে) বদলে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘ভারতীয় গণমাধ্যম যেভাবে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করছে তা অন্তত ঝুঁকিপূর্ণ এবং বাংলাদেশের জন্য একটি ‘উদ্বেগজনক বিষয়’। এটি আমাদের (বাংলাদেশের) জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। কিন্তু আমরা মনে করি এটা ভারতের জন্যও অত্যন্ত বিব্রতকর এবং লজ্জাজনক। তাই, ভারতকে এই পথ থেকে সরে আসতে হবে।’

ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, তারা সবসময় সংলাপের দ্বার উন্মুক্ত রাখার পক্ষে।’

‘আমরা সবসময় সংলাপের দ্বার উন্মুক্ত রাখার কথা বলি। ভারত আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী। আমরা ভারতের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। এই ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ,’ তিনি বলেন।

বাংলাদেশের রূপান্তর প্রক্রিয়ায় ঝুঁকি রয়েছে উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভারতের ভূমিকা ইতিবাচক এবং অত্যন্ত নেতিবাচকও হতে পারে। সেই ঝুঁকি মাথায় রাখতে হবে।’

এর আগে, টিআইবির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শাহজাদা এম আকরাম ‘নতুন বাংলাদেশ: স্বৈরাচারী শাসন পতনের পর প্রথম ১০০ দিন’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন।

তার প্রতিবেদনে আকরাম বলেন, স্বৈরাচারী শাসন পতনের বাস্তবতা মেনে নিতে এবং নিজেদের ভুল স্বীকার করতে ভারতের ব্যর্থতা, পদচ্যুত সরকারের ভারতে ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে মিলিত হয়ে রূপান্তর প্রক্রিয়ায় অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে, এবং সর্বোপরি, ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন সরকার এবং বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগজনক হতে পারে।

তিনি বলেন, ভারত সরকার, রাজনীতিবিদ এবং গণমাধ্যম জনবিস্ফোরণের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের বাস্তবতা মেনে নিতে ব্যর্থ হয়েছে।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারত, এবং ভারতীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভুল তথ্য ও গুজব ছড়িয়েছে বলেও তিনি যোগ করেন।

বাংলাদেশের তীব্র প্রতিবাদের পরও 'সীমান্ত হত্যা' অব্যাহত রয়েছে বলে উল্লেখ করেন টিআইবির কর্মকর্তা।

তিনি তার প্রতিবেদনে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোভাব ইতিবাচক।

‘যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান, রাশিয়া, চীন, ইরান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য সমর্থন প্রকাশ করেছে,’ তিনি বলেন।

তিনি বলেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা অন্তর্বর্তী সরকারকে আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালনা পর্ষদের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও নীতি পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান এবং আউটরিচ ও কমিউনিকেশনস পরিচালক মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.