জলবায়ু ঋণ প্রত্যাখ্যান, ন্যায্য অর্থায়ন চায় বাংলাদেশ

জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাবে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী আর্থিক সহায়তা পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

বর্তমানে বাকুতে চলমান কপ-২৯ সম্মেলনে ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রিজওয়ানা বিশ্বব্যাপী জলবায়ু তহবিল ব্যবস্থাপনায় অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, অনুদানের পরিবর্তে অধিকাংশ তহবিল ঋণ হিসেবে দেওয়া হচ্ছে। আমরা আর ঋণের বোঝা বাড়াতে চাই না, এতে আমাদের আর্থিক চাপ বেড়ে যায়।

উন্নত দেশগুলির দ্বারা প্রশমন ব্যবস্থা গ্রহণে বিলম্বের ফলে জলবায়ু ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে এবং দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে বলে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এই বিলম্বের কারণে আমাদের ক্ষতি বেড়েই চলেছে এবং ঝুঁকিও বাড়ছে।’

রিজওয়ানা ক্ষতি ও ক্ষতিপূরণ তহবিলের দ্রুত ও পর্যাপ্ত বিতরণ নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়ে বলেন, লবণাক্ততা অনুপ্রবেশের মতো কিছু দুর্যোগ মোকাবেলায় আর্থিক ও প্রযুক্তিগত উভয় সমাধানের প্রয়োজন।

‘লবণাক্ততা মোকাবেলায়, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় খাদ্য ও ফসল উৎপাদন কিভাবে টিকিয়ে রাখা যায় সে বিষয়ে গবেষণার প্রয়োজন। পর্যাপ্ত তহবিল এবং প্রযুক্তি ছাড়া বাংলাদেশের পক্ষে এ ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করা চ্যালেঞ্জিং হবে,’ তিনি বলেন।

বাংলাদেশের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার কথা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, চলতি বছরের দুটি বড় বন্যায় ১.৭ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে, যা জাতীয় বাজেটের ১.৮% এর সমান। গত ১৮ মাসে, দেশটি ১৫টি জলবায়ু-জনিত দুর্যোগের শিকার হয়েছে, যার ফলে ১.২ মিলিয়ন মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে বলে জানান তিনি।

‘বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের মাত্র ০.৪% অবদান রাখলেও, বাংলাদেশ অসম প্রভাবের মুখোমুখি। ২০৩০ সালের মধ্যে নির্গমন ২২% কমানোর লক্ষ্য বাংলাদেশের, যার জন্য ৪৫ বিলিয়ন ডলার দেশীয় তহবিল এবং ১৩৫ বিলিয়ন ডলার আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রয়োজন,’ তিনি বলেন।

রিজওয়ানা বলেন, তিনি সম্মেলনে দীর্ঘমেয়াদী অভিযোজন তহবিল এবং টেকসই অর্থায়নের আহ্বান জানিয়েছেন।

বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর উপর অতিরিক্ত বোঝা এড়াতে অনুদান-ভিত্তিক তহবিল এবং কম-সুদের ঋণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি প্যারিস চুক্তির অধীনে উন্নত দেশগুলোকে তাদের প্রতিশ্রুতি পালনের আহ্বান জানান।

উপদেষ্টা অভিযোজন ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ তহবিলের ঘাটতির কথা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের প্রতি বছর ৮.৫ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন কিন্তু দেশীয় উৎস থেকে মাত্র ৩ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে, যার ফলে ৫.৫ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।

রিজওয়ানা বলেন, তিনি সম্মেলনে ‘থ্রি জিরোস ভিশন’ - শূন্য কার্বন নির্গমন, শূন্য দারিদ্র্য এবং শূন্য বেকারত্ব - এর আহ্বান জানিয়েছেন এবং এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা কামনা করেছেন।

সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের আরেক সদস্য ও প্রাক্তন অতিরিক্ত সচিব মনজুরুল হান্নান খান কপ-২৯ থেকে অর্থপূর্ণ ফলাফল পাওয়ার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

‘প্যারিস চুক্তির অধীনে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি থাকলেও বর্তমানে মাত্র প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার উপলব্ধ। উন্নত দেশগুলি তাদের প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ হচ্ছে,’ তিনি বলেন।

তিনি বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে প্রত্যক্ষ আর্থিক সাহায্য দেওয়ার পরিবর্তে ঋণ বা বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ প্রদানের জন্য উন্নত দেশগুলির পছন্দ নিয়ে সমালোচনা করেন।

এই কপ-২৯ কে 'ফিন্যান্স কপ' বলা হলেও, এটি কতটা সফল হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে বলে জানান হান্নান।

১১ নভেম্বর আজারবাইজানের বাকুতে কপ-২৯ নামে পরিচিত জাতিসংঘের জলবায়ু আলোচনার সর্বশেষ পর্ব শুরু হয়েছে।