তারেক রহমান: যেকোনো মূল্যে গণতন্ত্র রক্ষা করতে হবে

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মঙ্গলবার দেশবাসীকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে নতুন করে শপথ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দেশকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে যেকোনো মূল্যে গণতন্ত্র রক্ষা করতে হবে।

তারেক রহমান

‘গণতন্ত্র বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা বারবার বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আসুন, আমরা যেকোনো মূল্যে দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার প্রতিজ্ঞা করি,’ তিনি বলেন।

একটি কর্মশালায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই বিএনপি নেতা বলেন, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামে গত ১৭ বছরে ১৫০০-এরও বেশি মানুষ জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে জীবন দিয়েছেন। অনেক বিএনপি নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরা গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

‘যদি আমরা এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে পারি, তাহলে ব্যবহারিক কারণে রাতারাতি না হলেও ধীরে ধীরে অনেক সমস্যার সমাধান হবে। তাই আমাদের অবশ্যই গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখার প্রতিজ্ঞা করতে হবে, যাতে মানুষ ভোটকেন্দ্রে ভয়ভীতি ছাড়াই স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে,’ তিনি বলেন।

তারেক রহমান শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত হওয়া স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা হিসেবে অভিহিত করে সমালোচনা করে বলেন, সেই সরকারের আমলে হওয়া হত্যা, গুম, ব্যাপক অর্থপাচার ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের লুণ্ঠনের কোনো জবাবদিহিতা নেই।

‘তাই, যদি আমরা যেকোনো মূল্যে গণতন্ত্র বজায় রাখতে পারি, তাহলে সরকারের জনগণের প্রতি জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। যখন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা জনগণের মুখোমুখি হতে এবং জবাবদিহিতার ভয়ে ভীত হবেন, তখন ধীরে ধীরে সবকিছু সঠিক পথে আসতে শুরু করবে,’ তিনি বলেন।

বিএনপি নেতা দলের ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য জবাবদিহিতার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘কিন্তু প্রথমে আমাদের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ কমিটি সিলেট শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দলের ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবনা নিয়ে এই কর্মশালার আয়োজন করে।

তারেক রহমান বিএনপি নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, পতিত স্বৈরাচার এবং তাদের সহযোগীরা দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

‘আমি প্রায় প্রতিদিনই বলি যে, একটি ষড়যন্ত্র চলছে। যারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে, জাতীয় সম্পদ লুণ্ঠন করেছে এবং যারা বাংলাদেশকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে তারা বসে থাকবে না। আমি যেমন প্রতিদিন সতর্ক করে দিচ্ছি, তারা তাদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখবে,’ তিনি বলেন।

তারেক রহমান বলেন, ‘স্বৈরাচাররা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও তাদের সহযোগীরা এখনও সমস্যা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। দুই-তিন দিন যদি আপনারা খবরের কাগজ পড়েন তাহলে বুঝতে পারবেন, কোথাও না কোথাও কিছু না কিছু ঘটছে। ষড়যন্ত্রকারীরা বসে নেই।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। তারা বিশ্বাস করে যে, এই দলই গণতন্ত্র, ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার রক্ষাকর্তা।

দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, ‘জনগণের আস্থা ধরে রাখা আপনাদের দায়িত্ব। আপনাদের কথা, চলাফেরা, আচার-ব্যবহার, অঙ্গভঙ্গি এবং কর্মকাণ্ড জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।’

তিনি আরও সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বিএনপির কোনো ক্ষতি হলে দেশ ও গণতন্ত্রের ক্ষতি হবে। তাই আসুন, আমরা জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী নিজেদের গড়ে তুলি। জনগণ আপনাদের এবং আপনাদের কর্মকাণ্ড দেখেই বিএনপিকে বিচার করবে।

বিএনপি নেতা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, পলাতক স্বৈরাচারের অত্যাচার ও নির্যাতন থেকে বেঁচে যাওয়া দলের নেতা-কর্মীরা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে সংগ্রাম অব্যাহত রাখবেন। যদি আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রক্ষা করতে পারি, তাহলেই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারব।