বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডলারের মজুত ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন

বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডলারের পরিমাণ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ ৪২৫.৫ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা নভেম্বরে ছিল ৪৩৮.৩ কোটি ডলার। ২০১৯ সালের জুন মাসের পর এটি সর্বনিম্ন পর্যায়, যখন বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ ছিল ৪১৯.১১ কোটি ডলার।

মার্কিন ডলার

গত কয়েক মাস ধরে রিজার্ভ ক্রমাগত কমছে। জুলাই মাসে ৬০৮.৮ কোটি ডলার থেকে আগস্টে ৫২৬.৫ কোটি, সেপ্টেম্বরে ৪৯৮.১ কোটি এবং অক্টোবরে ৪৬১.৫ কোটি ডলারে নেমে এসেছে।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, স্বল্প সময়ের মধ্যে বিদেশি ঋণ পরিশোধের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা, কৃত্রিমভাবে রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য ডলার কেনা এবং বাজারের কারসাজি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা বৈদেশিক মুদ্রা বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। এর ফলে ডিসেম্বরে ডলারের দাম ১২০ টাকা থেকে বেড়ে ১২৮ টাকায় পৌঁছেছে, যা আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি এবং উৎপাদন ও ভোক্তা মূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

ব্যবসায়ীরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে ডলারের দাম বৃদ্ধি মুদ্রাস্ফীতিকে আরও বাড়িয়ে তুলবে, যা ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দেবে এবং দেশের অর্থনৈতিক সংকটকে আরও তীব্র করবে।

ডলারের দামের এই ঊর্ধ্বগতি ঋণগ্রহীতাদের ওপর বোঝা আরও বাড়িয়েছে। বিদেশি মুদ্রায় ঋণ পরিশোধের জন্য তাদের আরও বেশি টাকা দিতে হচ্ছে।

ব্যাংকাররা এই পতনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনাকে দায়ী করেছেন, যা ব্যাংকগুলোকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বিদেশি ঋণের একটি বড় অংশ পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়েছিল, যা ডলার সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। বাজারের চাপ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বড় অঙ্কের ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ায়নি বলে অর্থনীতিবিদরা সমালোচনা করেছেন।

রিজার্ভ আরও কমে যাওয়া রোধ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ডলার বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য ডলার কিনছে। এই দ্বৈত নীতি ইতিমধ্যেই চাপের মধ্যে থাকা বাজারকে আরও খারাপ করে তুলেছে।

সাম্প্রতিক মাসগুলিতে রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেলেও, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডলারের মজুত বাড়েনি। ২০২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স বেড়ে ১৩৭৭ কোটি ডলার হয়েছে, যা ২০২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১০৯০ কোটি ডলার। এদিকে রপ্তানি আয় ২১৭৪ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ২৪৫৩ কোটি ডলার হয়েছে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেছে, যা অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলোকে আরও জটিল করে তুলেছে।

নিউ এজ অবলম্বনে