ঋণের সুদহার বাড়াবে না বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী ছয় মাসের জন্য নতুন মুদ্রানীতি ফেব্রুয়ারিতে ঘোষণা করতে যাচ্ছে। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির ধীরগতির কারণে নীতি সুদহার বৃদ্ধি করা হবে না বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো

তারা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি পরামর্শক বোর্ড বর্তমান নীতি সুদহার বজায় রাখার সুপারিশ করেছে। পূর্বের সুদহার বৃদ্ধির ফলে বেসরকারি ঋণ প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে বোর্ড উল্লেখ করেছে।

বোর্ড ৮.৫ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তিনবার নীতি সুদহার বৃদ্ধি করেছে, যার ফলে বেসরকারি ঋণ প্রবাহ হ্রাস পেয়েছে।

‘সুদহার আরও বৃদ্ধি করলে কর্মসংস্থান এবং উৎপাদন শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাই, নীতি সুদহার আর বাড়ানো উচিত নয়,’ কর্মকর্তা বলেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে পাঁচবার নীতি সুদহার বৃদ্ধি করা হয়েছিল, ৭.৭৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক ২৭ আগস্ট ৯ শতাংশ, ২৫ সেপ্টেম্বর ৯.৫ শতাংশ এবং ২৭ অক্টোবর ১০ শতাংশে সুদহার বৃদ্ধি করে।

ফলস্বরূপ, ঋণের সুদহারও বেড়েছে। মে মাসে ঋণের সুদহার ছিল ১১.২৮ শতাংশ, জুনে ১১.৫২ শতাংশ এবং আগস্টে ১১.৫৭ শতাংশে বৃদ্ধি পায়।

আশুলিয়ার একজন পোশাক উদ্যোক্তা রুবায়েত ফেরদৌস ঋণের উচ্চ খরচ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

‘অনেক উদ্যোক্তা বর্ধিত সুদহারের কারণে সংগ্রাম করছেন, যার ফলে তহবিলের খরচ বেড়ে গেছে। অতিরিক্ত অর্থায়নের প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও, অনেক ব্যবসা উচ্চ খরচের কারণে ব্যাংক ঋণ নেওয়া থেকে বিরত থাকে,’ তিনি বলেন।

ফেরদৌস জানান, তার প্রতিষ্ঠান একটি নতুন উৎপাদন ইউনিট চালু করার পরিকল্পনা করেছিল কিন্তু তহবিলের ব্যয়বহুল খরচের কারণে এগোতে পারেনি।

‘রপ্তানিমুখী শিল্পগুলি ক্রেতাদের কাছ থেকে বর্ধিত মূল্য পাচ্ছে না, যার ফলে ঋণের উচ্চ খরচ বহন করা কঠিন হয়ে পড়ছে। যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংক কম খরচে তহবিল সরবরাহ নিশ্চিত করে, তাহলে অনেক বন্ধ প্রকল্প আবার চালু হতে পারে,’ তিনি আরও বলেন।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন স্বীকার করেছেন যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পূর্বে বৃহৎ ঋণগ্রহীতাদের সুবিধা দেওয়ার জন্য সুদহার কম রেখেছিল।

‘বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তার কারণে, সাম্প্রতিক সুদহার বৃদ্ধি ন্যায্য ছিল। তবে, দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এখন ঋণের সুদহার স্থিতিশীল করতে হবে,’ তিনি বলেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রাক্তন অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফা কে মুজেরি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বিস্তৃত অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য তৈরি হলেও, সেগুলি সবসময় জনপ্রিয় নয়।

‘এখন স্মার্ট এবং স্থিতিশীল নীতি প্রণয়নের সময়, যা বিভিন্ন ঘরোয়া অর্থনৈতিক কারণ বিবেচনা করে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, আমরা আরও নীতি সুদহার বৃদ্ধির সুপারিশ করি না,’ তিনি বলেন।

কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গত বৃহস্পতিবার জোর দিয়ে বলেছেন যে ব্যবসায়ীদের উচ্চ ঋণের সুদহার নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

এর প্রতিক্রিয়ায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক সেলিম রায়হান সামাজিক মাধ্যমে গভর্নরের অবস্থানের সমালোচনা করেছেন।

‘এই বিবৃতি বাস্তব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে মিল খায় না। যদিও সুদহার বৃদ্ধির লক্ষ্য মুদ্রাস্ফীতি কমানো, এটি ব্যবসার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জও উপস্থাপন করে,’ তিনি একটি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন।

ইউএনবি অবলম্বনে