শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘ

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার (ওএইচসিএইচআর)। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ওএইচসিএইচআর এর ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। 

শেখ হাসিনা

'হিউম্যান রাইটস ভায়োলেশন্স অ্যান্ড অ্যাবিউজেস রিলেটেড টু দ্য প্রটেস্টস অব জুলাই অ্যান্ড অগাস্ট ২০২৪ ইন বাংলাদেশ' শিরোনামের এই প্রতিবেদনে গত বছরের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় শেখ হাসিনার মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জুলাইয়ে ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের সময় বিক্ষোভ দমন করতে বিক্ষোভকারীদের হত্যা করার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। পাশাপাশি তাদের লাশ গুম করারও নির্দেশ দেন তিনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সংগৃহীত সমস্ত তথ্যের একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং স্বাধীন মূল্যায়নের ভিত্তিতে ওএইচসিএইচআর জানতে পেরেছে সাবেক সরকারের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পাশাপাশি আওয়ামী লীগও পদ্ধতিগতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত ছিল। এগুলোর মধ্যে রয়েছে শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যা, হাজার হাজার বিক্ষোভকারীর বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ সহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, আটক, নির্যাতন এবং বিভিন্ন ধরনের দুর্ব্যবহার করা। 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এই গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। এই বিষয়ে আরও তদন্ত হওয়া দরকার। এর ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের সংজ্ঞায় মানবতাবিরোধী অপরাধ ও নির্যাতনের ঘটনা কতোটা ঘটেছে, তার মাত্রা নির্ধারণ করা যাবে। এছাড়া বাংলাদেশের নিজস্ব আইনেও ভয়াবহ এসব অপরাধের মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। 

ওএইচসিএইচআর এর এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে 'কোর কমিটির' একটি বৈঠক হয়। সে সময় পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি প্রধান এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। 

জাতিসংঘ জানিয়েছে, বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিরাপত্তা সেক্টরের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে বিজিবি কমান্ডারকে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার করার নির্দেশ দেন। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য থেকে জানা যাচ্ছে, পরের দিন অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিক্ষোভকারীদের হত্যা করার নির্দেশ দেন। তিনি বিশেষভাবে বলেছেন, বিক্ষোভের মূল নেতাদের এবং দাঙ্গাবাজদের ধরুন, হত্যা করুন এবং তাদের লাশ গুম করুন।

এদিকে আন্দোলনের সময় মাঠপর্যায়ে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার করার নির্দেশ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয়। এর ফলে নিহতের সংখ্যা তিনগুণ হয়ে যায়। ওএইচসিএইচআর এর তথ্য অনুযায়ী, ১৮ জুলাই নিহতের সংখ্যা ১০০ জন হলেও পরেরদিন অর্থাৎ ১৯ জুলাই এই সংখ্যা প্রায় ৩০০ জনে পৌঁছায়।