সৌরজগতের বাইরে ট্যাটুইনের মতো গ্রহের সন্ধান, ঘুরছে দুটি ব্যর্থ নক্ষত্রকে ঘিরে

মহাকাশে আবারও বিস্ময়ের সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা। সৌরজগতের বাইরে বিখ্যাত ‘স্টার ওয়ার্স’ সিনেমার ট্যাটুইন গ্রহের মতো দেখতে একটি নতুন গ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে, যা দুটি ‘ব্যর্থ নক্ষত্রকে’ কেন্দ্র করে ঘুরছে। পৃথিবী থেকে প্রায় ১২০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এই এক্সোপ্ল্যানেটটি দুটি বাদামী বামন নক্ষত্রের (brown dwarfs) চারপাশে এক অস্বাভাবিক পথে, প্রায় সমকোণে ঘুরছে বলে বুধবার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন।

ছবি - সংগৃহীত

বাদামী বামন নক্ষত্রগুলোকে বিজ্ঞানীরা অনেক সময় ‘ব্যর্থ নক্ষত্র’ হিসেবে অভিহিত করেন। কারণ এগুলোর ভর সাধারণ নক্ষত্রের চেয়ে কম কিন্তু গ্যাসীয় দৈত্য গ্রহের চেয়ে বেশি হওয়ায় এরা ঠিক নক্ষত্রের মতো জ্বলতে পারে না। উল্লেখ্য, এক আলোকবর্ষ দূরত্ব প্রায় ৬ ট্রিলিয়ন মাইলের সমান।

বিজ্ঞানীরা জানান, এই বাদামী বামন নক্ষত্র জোড়াটি বেশ কয়েক বছর আগেই প্রথম নজরে আসে। তখন দেখা যায়, নক্ষত্র দুটি একে অপরকে গ্রহণ (eclipse) করছে, যার ফলে পৃথিবী থেকে দেখলে একটি নক্ষত্র সবসময় অন্যটির দ্বারা আংশিকভাবে ঢাকা থাকে।

সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে গবেষকরা দেখতে পান, এই বাদামী বামন দুটির পারস্পরিক গতিবিধি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। শুধুমাত্র একে অপরকে প্রদক্ষিণ করলে এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা কম, যা তৃতীয় কোনো বস্তুর (সম্ভাব্য গ্রহ) উপস্থিতির ইঙ্গিত দেয়। এই গবেষণাটি বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’-এ প্রকাশিত হয়েছে।

‘স্টার ওয়ার্স’ সিনেমার কাল্পনিক ট্যাটুইন গ্রহে দুটি সূর্য দেখা যেত এবং এটি ছিল লিউক স্কাইওয়াকারের বাসস্থান। বিজ্ঞানীরা এর আগেও দুটি নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণকারী এমন এক ডজনেরও বেশি গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন। তবে এই নতুন গ্রহটির অদ্ভুত, প্রায় ৯০ ডিগ্রি কোণের কক্ষপথ এটিকে অন্যদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করেছে।

তবে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, গ্রহটি এখনও সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। এর অস্তিত্ব নিশ্চিত করতে এবং এর ভর ও কক্ষপথ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আরও গবেষণার প্রয়োজন।

এই নতুন গবেষণার সাথে যুক্ত না থাকা আরহাস বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্পদার্থবিদ সাইমন আলব্রেখট বলেন, "আমি এখনও এই গ্রহটির অস্তিত্বের উপর বাজি ধরতে পুরোপুরি প্রস্তুত নই।"

অন্যদিকে, বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলের সদস্য টমাস বেক্রফট বলেন, ‘আমাদের সৌরজগতের বাইরের পরিস্থিতি কীভাবে আমাদের পরিচিত গ্রহগুলো থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের গ্রহ তৈরি করতে পারে, তা বুঝতে এই ধরনের অদ্ভুত মহাজাগতিক বস্তুগুলো পর্যবেক্ষণ করা সহায়ক।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘যমজ নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণকারী গ্রহগুলো বাস্তবে থাকতে পারে জানার কয়েক দশক আগে থেকেই সাইন্স ফিকশনে এদের অস্তিত্ব ছিল।’