সাবেক শিন বেথ প্রধান: জিম্মি উদ্ধার নয়, ক্ষমতা টিকিয়ে রাখাই নেতানিয়াহুর লক্ষ্য

ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা ‘শিন বেথ’-এর সাবেক প্রধান অমি আয়ালন বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে। তিনি বলেছেন, গাজার জিম্মিদের উদ্ধারের চেয়ে নিজের রাজনৈতিক ক্ষমতা ধরে রাখাকেই বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছেন নেতানিয়াহু। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক কলামে আয়ালন এই চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেন।

অমি আয়ালন ও নেতানিয়াহু

সাবেক এই নিরাপত্তা প্রধান তার কলামে লিখেছেন, `সত্যি বলতে, গাজার জিম্মিদের মুক্তির চেয়ে সরকারের ধর্মীয় আদর্শ এবং নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত ক্ষমতা লালনের ইচ্ছাই এখন মুখ্য হয়ে উঠেছে।' তিনি আরও অভিযোগ করেন, নেতানিয়াহু সরকার ইসরায়েলের গণতান্ত্রিক কাঠামো ধ্বংস করে কেবল নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। আয়ালনের মতে, এই সরকার ইসরায়েলকে `একটি অনন্ত যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, মৃত্যু ও ঘৃণা ছাড়া যার আর কোনো সামরিক লক্ষ্য নেই।'

আয়ালন জানান, ইসরায়েলি জনগণের প্রায় ৭০ শতাংশই এখন যুদ্ধের সম্পূর্ণ সমাপ্তি এবং দ্রুত নতুন নির্বাচন চায়। তিনি উল্লেখ করেন, হাজার হাজার সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তা ইতিমধ্যে গাজায় যুদ্ধ বন্ধ এবং জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন পিটিশন ও চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় দেড় লাখ ইসরায়েলি নাগরিক এ ধরনের আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করে তাদের মতামত জানিয়েছেন।

সাবেক শিন বেথ প্রধান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, `আমাদের বিদেশি বন্ধুদের উচিত ইসরায়েলি জনগণের পাশে দাঁড়ানো, উগ্রপন্থী বা চরমপন্থী সরকারের পাশে নয়। এই সরকার আমাদের রাষ্ট্রের অস্তিত্বকেই হুমকির মুখে ফেলছে। যদি আমরা এই গতিপথ পরিবর্তন করতে না পারি, তাহলে ইসরায়েলের ইহুদি ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে।'

ইসরায়েলি তথ্যানুসারে, বর্তমানে গাজায় আনুমানিক ৫৯ জন ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বর্তমানে সাড়ে নয় হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি বন্দি আটক রয়েছেন। এসব কারাগারে নির্যাতন, খাদ্যাভাব এবং চিকিৎসার অবহেলায় বহু ফিলিস্তিনি বন্দীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

উল্লেখ্য, গত ১৯ জানুয়ারি মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতায় এবং মার্কিন সমর্থনে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি ও বন্দী বিনিময় চুক্তি শুরু হলেও ইসরায়েল তা লঙ্ঘন করে।

এদিকে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের চালানো অভিযানে নিহতের সংখ্যা ৫২ হাজার ৩০০ ছাড়িয়েছে। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গণহত্যা হিসেবে সমালোচিত হচ্ছে।