অনিশ্চয়তায় মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা, প্রবৃদ্ধিতে ঝুঁকি দেখছে আইএমএফ

শুল্ক আরোপের বিভিন্ন পদক্ষেপ, সাম্প্রতিক সময়ের তুলনায় তেলের দাম কমে যাওয়া এবং বৈদেশিক সাহায্য হ্রাস পাওয়ার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা (মেনা) অঞ্চলের দেশগুলো প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে।

ছবি - সংগৃহীত

আইএমএফের মেনা অঞ্চলের আঞ্চলিক পূর্বাভাস প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ২০২৫ ও ২০২৬ সালে প্রতি ব্যারেল ৬৫ থেকে ৬৯ ডলারের মধ্যে থাকতে পারে। ২০২২ সালে এই তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১২০ ডলারেরও উপরে উঠেছিল। তেলের দামের এই নিম্নগতি জ্বালানি রপ্তানিকারক দেশগুলোর অর্থনীতিকে বাজারের অস্থিরতার ঝুঁকিতে ফেলছে।

আইএমএফের মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক জিহাদ আযুর বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের শুল্ক পরিকল্পনা এবং চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে তুলেছে। এই অনিশ্চয়তা মেনা অঞ্চলের অর্থনীতির ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করছে এবং এর ফলে দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি ২% থেকে ৪.৫% পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

দুবাইয়ে এক সাক্ষাৎকারে আযুর বলেন, ‘এ কারণে দেশগুলোকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে এবং নিজ নিজ অর্থনীতিকে সুরক্ষিত রাখতে প্রয়োজনীয় নীতি প্রণয়ন করতে হবে।’

আযুর আরও বলেন, এই অঞ্চলে বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ কমে আসাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দেশকে বিশ্বের একক বৃহত্তম সাহায্যদাতার অবস্থান থেকে সরিয়ে আনার পর এই ঝুঁকি আরও বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়া, বিশেষ করে নাজুক বা ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশগুলোর জন্য, এই অঞ্চলে নতুন ঝুঁকি তৈরি করছে।’

আযুর জানান, গত বছর মেনা অঞ্চলের গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ১.৮%। এ বছর তা বেড়ে ২.৬% হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে তিনি যোগ করেন, বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা এই পূর্বাভাসকে প্রভাবিত করতে পারে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, মহামারির পর থেকে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আসছে, যা তাদের জিডিপির প্রায় ২%। তবে মেনা অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ বেশ ধীর।

আইএমএফ জানিয়েছে, তারা সংকটে থাকা কয়েকটি দেশ এবং সিরিয়ার নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। আযুর আরও জানান, আইএমএফের কর্মী এবং লেবাননের কর্মকর্তারা লেবাননে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সিরিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সিরিয়ার পুনরুদ্ধার একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া হবে। এর জন্য প্রয়োজন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমর্থন। একইসঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি, অর্থনীতি সংস্কার এবং অবকাঠামো উন্নয়ন, শরণার্থী সমস্যা সমাধান ও নতুন সামাজিক চুক্তি পুনর্গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে মনোযোগ দিতে একটি সমন্বিত কর্মসূচি দরকার হবে।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও মেনা অঞ্চলের দেশগুলো কাঠামোগত সংস্কার এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বহুমুখী করার মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে।