‘হ্যামার স্ট্রাইক’ সামরিক মহড়া থেকে পাক সেনাপ্রধানের হুঁশিয়ারি

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আসিম মুনির ভারতের যেকোনো সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ‘তাৎক্ষণিক, কঠোর ও উচ্চ পর্যায়ের প্রতিক্রিয়া’ জানানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১ মে) টিলা ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জে সেনাবাহিনীর বৃহৎ পরিসরের সামরিক মহড়া ‘হ্যামার স্ট্রাইক’ পর্যবেক্ষণকালে তিনি এই কড়া বার্তা দেন।

সেনাদের উদ্দেশে বক্তব্য দিচ্ছেন সেনাপ্রধান আসিম মুনির

পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ম্যাংলাভিত্তিক স্ট্রাইক কোর পরিচালিত 'হ্যামার স্ট্রাইক' একটি যৌথ মহড়া। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল আধুনিক অস্ত্র ও কৌশলের সমন্বয়ে যুদ্ধ প্রস্তুতির সক্ষমতা নিরূপণ করা। মহড়ায় সেনাবাহিনীর বিভিন্ন শাখা অংশগ্রহণ করে, যার মধ্যে ছিল দীর্ঘ-পাল্লার কামান, কমব্যাট হেলিকপ্টার, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং আধুনিক প্রকৌশল কৌশলের প্রদর্শন। অংশগ্রহণকারীরা উন্নত দলগত সমন্বয়, দ্রুত রণকৌশল গ্রহণের সক্ষমতা এবং উচ্চ মনোবল প্রদর্শন করেন।

মহড়া পর্যবেক্ষণকালে জেনারেল মুনির বলেন, ‘পাকিস্তান আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী, তবে দেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় আমাদের প্রস্তুতি ও অঙ্গীকার অটুট।’

তিনি সেনাসদস্যদের পেশাদারিত্ব, সাহস ও লড়াকু মনোভাবের ভূয়সী প্রশংসা করে আরও বলেন, ‘এই মহড়া আমাদের অপারেশনাল শ্রেষ্ঠত্ব ও আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য প্রস্তুতিকেই প্রতিফলিত করে।’ অনুষ্ঠানে সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তা, ফর্মেশন কমান্ডার এবং বিভিন্ন বাহিনীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এই সামরিক মহড়া এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হলো, যখন ভারত-অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মিরের পাহেলগামে এক হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ভারত এই হামলার জন্য পরোক্ষভাবে পাকিস্তানকে দায়ী করলেও কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। পাকিস্তান এই অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে একটি নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। সম্প্রতি পাকিস্তানের গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক গোপন নথির সূত্রে এই হামলার জন্য ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এবং সে দেশের সরকারকে দায়ী করা হয়েছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বিষয়টিকে 'ভারতের দোষারোপের রাজনীতি' হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং যেকোনো নিরপেক্ষ তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এদিকে, উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারও বুধবার জানিয়েছেন, পাকিস্তান উত্তেজনা বাড়াতে চায় না, তবে যেকোনো উসকানির কঠোর জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, তুরস্ক ও কাতারসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভারত ও পাকিস্তান উভয় পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন এবং কূটনৈতিক উপায়ে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।