নির্বাচনের দাবিকে অপরাধ হিসেবে দেখানোর দৃশ্যমান প্রচেষ্টা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শুক্রবার বলেছেন, সংস্কারের নামে অন্তর্বর্তী সরকার কেন এত কালক্ষেপণ করছে, তা নিয়ে জনমনে সংশয় বাড়ছে।

tarique rahman 5তারেক রহমান

‘আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি’র পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র ও রাজনীতি মেরামতের জন্য সংস্কার প্রচেষ্টা চলছে। কিন্তু চলমান সংস্কারের দোহাই দিয়ে যদি রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনের দাবি উপেক্ষা করতে হয়, তবে সেই সংস্কারের তাৎপর্য কী? এই প্রশ্ন এখন অনেকের মনে।’

তিনি বলেন, ‘দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলই সংস্কারের পক্ষে। তবুও, অন্তর্বর্তী সরকার কেন সংস্কারের নামে এত কালক্ষেপণ করছে, তা নিয়ে জনমনে ধীরে ধীরে প্রশ্ন দানা বাঁধছে।’

বিএনপি নেতা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, রাজনৈতিক দল এবং জনগণের রায়কে উপেক্ষা করে যদি অরাজনৈতিকীকরণকে উৎসাহিত করা হয়, তবে তা শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রকেই ঝুঁকিতে ফেলবে।

তিনি আরও বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমি আবারও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাতে চাই, জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের আদালতের মুখোমুখি করার উদ্যোগ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকেই নিতে হবে।’

তারেক বলেন, জনগণের ভোটে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ একটি সংসদ ও সরকার গঠিত হলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুসংহত হবে।

‘একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো একবার রাজনৈতিক চর্চার মাধ্যমে সরকার গঠন ও পরিবর্তনে অভ্যস্ত হয়ে গেলে, বাংলাদেশকে কেউ আর তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারবে না,’ তিনি মন্তব্য করেন।

তারেক বলেন, রাষ্ট্র ও রাজনীতির গুণগত সংস্কার এবং দেশের নাগরিকদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সবসময় সরাসরি ভোটের মাধ্যমে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার ও সংসদ প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছে।

‘রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন চাইবে। এটি একটি স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক চর্চা। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে একটি সূক্ষ্ম অথচ ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা চলছে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করার, যেখানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি করাটা যেন একটি অপরাধ,’ তিনি বলেন।

বিএনপি নেতা বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে অবমাননাকর বিবৃতি বা মন্তব্য শুধুমাত্র পলাতক স্বৈরশাসককেই খুশি করে। কিন্তু অন্যদিকে, এটি গণতন্ত্রপ্রেমী জনগণের জন্য অপমানজনক।’

তিনি দেশের স্বার্থে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

তারেক বলেন, ‘শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের অবসানের পর অন্তত ২৫টি নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। আমরা তাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বাগত জানাই।’

‘গণতন্ত্রপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শে ভিন্নতা থাকতে পারে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, দেশের স্বার্থের প্রশ্নে প্রতিটি বাংলাদেশপন্থী শক্তির অবস্থান একই এবং অভিন্ন,’ তিনি বলেন।

বিএনপি নেতা বলেন, যে রাজনৈতিক দল তার গণতান্ত্রিক চরিত্র হারিয়েছে, ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বাংলাদেশকে একটি তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করেছে, এদেশের মানুষ তাদের কখনোই গ্রহণ করবে না।

‘সংবিধান লঙ্ঘনকারী ক্ষমতাচ্যুত ও পলাতক স্বৈরশাসক আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। আমাদের সংবিধানের ৬৫(২) অনুচ্ছেদে বলা আছে, সংসদ সদস্যরা জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবেন। কিন্তু সংবিধান লঙ্ঘন করে এই পলাতক স্বৈরশাসক জনগণের ভোট ছাড়াই তিনবার অবৈধ সংসদ ও সরকার গঠন করেছে,’ তিনি বলেন।

বিএনপি নেতা বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষ জানতে চায়, সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্তদের ভবিষ্যতে রাজনৈতিকভাবে অপ্রাসঙ্গিক করে তোলার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে বা নেবে।

‘দোষ চাপিয়ে দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। অন্তর্বর্তী সরকার যদি ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জনগণের ভোটে নির্বাচিত পরবর্তী সরকার অবশ্যই সংবিধান লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে,’ তিনি বলেন।

তারেক জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পক্ষে যারা বলছেন, তাদের সমালোচনা করে বলেন, এটি ‘পলাতক স্বৈরশাসক’ এবং তাদের সহযোগীদের – যারা জনগণের বিপুল পরিমাণ আত্মসাৎ করা অর্থ নিয়ে অপেক্ষা করছে – ক্ষমতায় ফেরার সোনালী সুযোগ করে দিতে পারে।

‘যারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পক্ষে কথা বলেছেন, তারা হয়তো বিষয়টি এভাবে বিবেচনা করেননি। আমি তাদের এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করব,’ বিএনপি নেতা বলেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের দুটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হলো ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা এবং ২০২৪ সালে সেই স্বাধীনতা রক্ষার লড়াই।

তারেক জোর দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করেছিল দিল্লির তাঁবেদার হওয়ার জন্য নয়। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থানও একই বার্তা বহন করে।’

তিনি পলাতক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনাকে জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা উপেক্ষা করে দেড় দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশকে একটি তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য সমালোচনা করেন।

তারেক আহ্বান জানান, কোনো শক্তি যেন আর কখনোই বাংলাদেশকে তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে না পারে এবং পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসররা যেন আর কখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এবি পার্টি জাতীয় প্রেসক্লাবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে, যেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতারা বক্তব্য রাখেন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.