প্রথম ইউরোপীয় সফরে সিরিয়ার আল-শারা, নিষেধাজ্ঞা তোলাই লক্ষ্য

সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা আজ বুধবার ফ্রান্সের প্যারিস সফরে যাচ্ছেন। গত ডিসেম্বরে সিরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের উৎখাতের পর এটিই আল-শারার প্রথম ইউরোপ সফর। এই সফরে তিনি সিরিয়ার ওপর আরোপিত ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা তুলে আন্তর্জাতিক সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা চালাবেন। খবর রয়টার্সের।

সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা

বাশার আল আসাদের পতন ঘটাতে সফল বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)। আল-কায়েদার সাবেক সহযোগী সশস্ত্র গোষ্ঠিটির নেতা হিসেবে আহমেদ আল শারা জাতিসংঘের সন্ত্রাসবাদ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছেন।

তবে এখন সিরিয়ার নেতা হিসেবে প্যারিস ভ্রমণের জন্য জাতিসংঘ থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন তিনি। সূত্র জানিয়েছে, প্যারিসে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে বৈঠক করবেন শারা।

ফরাসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উপায়, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা, আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদবিরোধী প্রচেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিলকরণ সহ সাহায্য ও অর্থনৈতিক সহায়তার সমন্বয় নিয়ে আলোচনা করবেন দুই নেতা।

ফরাসি প্রেসিডেন্সির একজন কর্মকর্তা বলেন, এটা স্পষ্ট যে সিরিয়া বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সিরীয় প্রধান ফ্রান্সসহ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের কাছ থেকে সমর্থনের প্রত্যাশা করছেন।

তিনি আরও বলেন, সিরিয়াকে স্থিতিশীল করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি স্পষ্ট ভূমিকা পালন করতে হবে।

ফ্রান্স ২০১২ সালে বাশার আল আসাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং কখনও সম্পর্ক পুনর্নবীকরণ করেনি। ফ্রান্স আসাদের পতনকে স্বাগত জানিয়েছে এবং শারার অন্তর্বর্তীকালীন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক গড়ে তুলেছে।

সীমান্তে উত্তেজনা কমানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ম্যাক্রোঁ সম্প্রতি শারা এবং লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউনের সঙ্গে একটি ত্রিপক্ষীয় ভিডিও বৈঠক করেছেন।

ফ্রান্স গত মাসে সিরিয়ায় দূতাবাস পুনরায় চালু করার পদক্ষেপ হিসেবে কূটনীতিকদের একটি ছোট দলসহ দামেস্কে একজন চার্জ ডি'অ্যাফেয়ার্স নিয়োগ করেছে।

ফ্রান্স ঐতিহ্যগতভাবে উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় ব্যাপকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ নির্বাসিত বিরোধী এবং কুর্দি বাহিনীকে সমর্থন করে, যেখানে ইতিমধ্যেই তাদের বিশেষ বাহিনী রয়েছে।

ফ্রান্স গত কয়েক মাস ধরে শারা এবং কুর্দিদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। নতুন সিরিয়ার নেতা আল শারা এই অঞ্চলটিকে দামেস্কের নিয়ন্ত্রণে ফিরিয়ে আনতে চান। ওই অঞ্চলটি থেকে এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের বাহিনীর ফিরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে।

বাশার আল আসাদের সময়ে বিগত ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধকালে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ব্রিটেন আসাদ সরকারের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। অবশ্য ইইউ এরইমধ্যে কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে।

আসাদের পতনের পর বিশ্বব্যাংক সিরিয়ার পুনর্গঠনে ২৫০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অনুদান দিতে সম্মত হয়েছে। গৃহযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ওই অনুদান পেতেও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের তীব্র প্রয়োজন নতুন নেতা আল শারার।