ভূখণ্ড ছাড়ার চাপ ‘আধুনিক তোষণনীতি’: ট্রাম্পের ইউক্রেন নীতির কড়া সমালোচনা বাইডেনের
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর বিবিসিকে দেওয়া প্রথম বিশেষ সাক্ষাৎকারে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, রাশিয়ার কাছে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার জন্য ইউক্রেনের ওপর ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের চাপ দেওয়া ‘আধুনিক তোষণনীতি’ ছাড়া আর কিছু নয়। সোমবার ডেলাওয়্যার থেকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আগ্রাসী মনোভাব এবং শান্তিচুক্তির নামে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার ধারণার তীব্র সমালোচনা করেন।
হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর বিবিসিকে দেওয়া প্রথম বিশেষ সাক্ষাৎকারে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
চলতি সপ্তাহে মিত্র দেশগুলো যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইউরোপে জার্মানির আত্মসমর্পণ দিবস (ভিই ডে) এর ৮০তম বার্ষিকী পালন করছে, ঠিক তখনই বাইডেন এই বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। তিনি ট্রাম্পের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ সম্পর্ক ভেঙে পড়া নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এটি ‘বিশ্বের আধুনিক ইতিহাস পাল্টে দেবে’।
বিবিসি রেডিও ৪-এর ‘টুডে’ অনুষ্ঠানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাইডেনকে ইউক্রেন বিষয়ে তার নিজের কার্যকালের পদক্ষেপ এবং ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আকস্মিক সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন করা হয়। একটি বিতর্ক অনুষ্ঠানে দুর্বল পারফরম্যান্সের পর তার শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল এবং ডেমোক্রেটিক পার্টি যে সংকটে পড়েছিল, সে বিষয়েও তিনি কথা বলেন।
নভেম্বরের নির্বাচনের মাত্র চার মাসেরও কম সময় আগে প্রার্থিতা প্রত্যাহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না এতে কিছু যেত আসত। আমরা এমন সময়ে সরে দাঁড়িয়েছি যখন আমাদের একজন ভালো প্রার্থী ছিলেন।’ পরিস্থিতি দ্রুত বদলাচ্ছিল এবং সিদ্ধান্তটি কঠিন ছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের মার্কিন মিত্রদের প্রতি আচরণের বিষয়ে বাইডেন পানামা খাল ফিরিয়ে নেওয়া, গ্রিনল্যান্ড অধিগ্রহণ এবং কানাডাকে ৫১তম অঙ্গরাজ্য বানানোর জন্য ট্রাম্পের আহ্বানের নিন্দা জানান। তিনি বলেন, ‘এখানে কী হচ্ছে এসব? কোন প্রেসিডেন্ট এভাবে কথা বলেন? আমরা স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সুযোগের পক্ষে, বাজেয়াপ্তকরণের পক্ষে নই।’
ইউক্রেন প্রসঙ্গে, রাশিয়ার সর্বাত্মক আগ্রাসন প্রতিরোধে কিয়েভকে তিনি পর্যাপ্ত সমর্থন দিয়েছিলেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বাইডেন বলেন, ‘তাদের স্বাধীনতার জন্য যা যা প্রয়োজন ছিল, আমরা তাদের সবকিছু দিয়েছি এবং পুতিন যদি আবারও অগ্রসর হতেন, তাহলে আমরা আরও কঠোরভাবে জবাব দিতে প্রস্তুত ছিলাম।’
ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে শান্তিচুক্তির জন্য ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, সে বিষয়ে বাইডেন বলেন, ‘এটি আধুনিক যুগের তোষণনীতি।’ তিনি ১৯৩০-এর দশকের শেষদিকে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নেভিল চেম্বারলেইনের হিটলার তোষণ নীতির প্রতি ইঙ্গিত করেন। বাইডেন আরও উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, ইউরোপ আমেরিকার নিশ্চয়তা ও নেতৃত্বের ওপর আস্থা হারাতে পারে।
উল্লেখ্য, মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ সম্প্রতি ইউক্রেনে শান্তি পরিকল্পনার বিষয়ে ভূখণ্ডগত সীমারেখা প্রায় বর্তমান অবস্থায় হিমায়িত করার এবং উভয় পক্ষকে কিছু অধিকৃত ভূমি ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। ট্রাম্পও রাশিয়াকে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ ধরে রাখার সুযোগ দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন এবং জেলেনস্কিকে শান্তি আলোচনা ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন। বিভিন্ন প্রতিবেদনে ক্রিমিয়াসহ অন্যান্য অধিকৃত এলাকায় রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণকে কার্যত মার্কিন স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাবের কথা বলা হয়েছে। কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিৎসকোও গত মাসে বিবিসিকে সাময়িকভাবে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন।
পুতিন প্রসঙ্গে বাইডেন বলেন, ‘আমি বুঝতেই পারি না মানুষ কীভাবে ভাবে যে, যদি আমরা একজন স্বৈরশাসক, একজন গুণ্ডাকে তার নিজের নয় এমন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভূমি দখল করার সিদ্ধান্ত নিতে দিই, তাহলে সে সন্তুষ্ট হবে।’ তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ইউক্রেন ভূখণ্ড ছেড়ে দিলে রাশিয়ার সীমান্তবর্তী ন্যাটোভুক্ত কিছু দেশও পুতিনের সঙ্গে আপস করতে চাইতে পারে।
ট্রাম্প ইউক্রেনকে মার্কিন সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখার বিরোধিতা করে আসছেন। ফেব্রুয়ারিতে ওভাল অফিসে এক টেলিভিশন বৈঠকে ট্রাম্প ও ভ্যান্স ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে তিরস্কার করেছিলেন, যা প্রসঙ্গে বাইডেন বলেন, ‘যেভাবে এটি ঘটেছে, আমার কাছে তা আমেরিকার জন্য অবমাননাকর মনে হয়েছে।’
বাইডেন ট্রাম্প প্রশাসনের জোটের প্রতি অশ্রদ্ধা এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতিরক্ষা খাতে কম ব্যয়ের সমালোচনাকে অযৌক্তিক বলে মনে করেন। কিয়েল ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র একক বৃহত্তম দাতা হলেও সম্মিলিতভাবে ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেনকে বেশি অর্থ সহায়তা দিয়েছে। বাইডেন বলেন, ‘আমি বুঝি না তারা কীভাবে এটা বুঝতে ব্যর্থ হয় যে জোটের মধ্যেই শক্তি নিহিত।’
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম ১০০ দিনের কার্যকাল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে বাইডেন তার নিজের সময়ের কাজের খতিয়ান তুলে ধরে বলেন, তার সময়ে অর্থনীতি বাড়ছিল এবং বিশ্বে মার্কিন প্রভাব ইতিবাচক ছিল। ট্রাম্পের ২.০ সংস্করণ সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করেন, ‘ইতিহাস এর বিচার করবে। আমি বিজয়সূচক কিছু দেখছি না।’
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.