ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘নাৎসি ঘেটো’র আদলে ক্যাম্প তৈরির অভিযোগ

ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের জন্য ‘নাৎসি ঘেটো’র আদলে ক্যাম্প তৈরির পরিকল্পনা করছে বলে বুধবার সতর্ক করেছে গাজা সরকার। তেল আবিব কর্তৃক প্রচারিত ত্রাণ বিতরণের কৌশলকে ব্যবহার করে এই চক্রান্ত বাস্তবায়নের পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে তারা।

বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকা

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা দখলদার শক্তির এই পরিকল্পনাকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। মানবিক সহায়তার নিয়ন্ত্রণ এবং এর বিতরণের মাধ্যমে নাৎসি ঘেটোর মতো বাধ্যতামূলক বিচ্ছিন্নকরণ শিবির স্থাপন করার এই চক্রান্ত একটি পরিকল্পিত বিচ্ছিন্নকরণ নীতির অংশ এবং আন্তর্জাতিক আইনের সকল নীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’

ইসরায়েলি এই পরিকল্পনাকে ‘একটি অমানবিক মডেল যা সকল মানদণ্ডে অগ্রহণযোগ্য’ বলেও অভিহিত করেছে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস।

বিবৃতিতে জোর দিয়ে আরও বলা হয়েছে, ‘ফিলিস্তিনি জনগণ তাদের সর্বশক্তি দিয়ে এই অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করবে, যার লক্ষ্য মানবিক সহায়তাকে অবরোধ, অনাহার এবং পরাধীনতার হাতিয়ারে পরিণত করা। এটি আন্তর্জাতিক মানবিক আইন এবং ন্যায়বিচার ও মানবমর্যাদার নীতির চরম লঙ্ঘন।’

গাজা সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং সকল মানবিক, আইন ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতি তাদের আইনগত ও নৈতিক দায়িত্ব গ্রহণ করে অবিলম্বে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে। তারা ‘এই চলমান প্রহসন বন্ধ করে এবং গাজা উপত্যকায় আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে দখলদার বাহিনীর চালানো পরিকল্পিত বিশৃঙ্খলা’ শেষ করার দাবি জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২ মার্চ ইসরায়েল গাজার সীমান্ত ক্রসিংগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে অবরুদ্ধ এই উপত্যকার মানবিক সংকট আরও গভীর হয়েছে। সেখানে খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি এবং বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, ইতিমধ্যে ৫৭ জন—যাদের বেশিরভাগই শিশু—অনাহারে মারা গেছে, এবং এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে, ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা রবিবার একটি আন্তর্জাতিক তহবিল এবং বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে গাজায় সীমিত পরিসরে সাহায্য পুনরায় শুরু করার জন্য একটি যৌথ ইসরায়েলি-আমেরিকান পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। এই সাহায্য দক্ষিণ গাজার ‘মানবিক চত্বরে’ পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে, ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এই পদ্ধতিকে অমানবিক এবং বৈশ্বিক মানবিক মানদণ্ডের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনেও গাজার শোচনীয় পরিস্থিতির চিত্র উঠে এসেছে। এতে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, গাজার ২৪ লক্ষ বাসিন্দা এখন প্রায় সম্পূর্ণরূপে সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০ মাস ধরে চলা ‘গণহত্যা’ ও অবরোধ এই অঞ্চলের অর্থনীতি এবং অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে।