দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে আরও শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে এবং দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সঠিক পথে ফেরাতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক একজোট হয়ে শক্তিশালী পদক্ষেপ নিচ্ছে। এই লক্ষ্যে ‘ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ ২০২৫’ নামে একটি নতুন আইন করা হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক যেকোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ সাময়িকভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে পারবে। এর মধ্যে ইসলামিক ব্যাংকগুলোও রয়েছে। গত শুক্রবার আইনটি সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হয়েছে, যা ১৭ এপ্রিল উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন পায়।

logo bangladesh bankবাংলাদেশ সরকারের লোগো

দুর্বল ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ: কোনো ব্যাংক দুর্বল হয়ে পড়লে বা আর্থিক ঝুঁকিতে থাকলে, সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক যৌথ আদেশের মাধ্যমে সেই ব্যাংকের শেয়ারের মালিকানা বদলে দিতে পারবে। নতুন মালিক হবে সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান। এর মূল উদ্দেশ্য হলো দুর্বল ব্যাংকটিকে বাঁচানো এবং সাধারণ মানুষের আমানত রক্ষা করা।

কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত দায়: ব্যাংকের টাকা নয়ছয় বা জালিয়াতি হলে, এখন থেকে ব্যাংকের বড় কর্মকর্তা যেমন – ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), চেয়ারম্যান এবং অন্যান্য দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকবেন। আত্মসাৎ করা টাকা বা সম্পদ তাদের ব্যাংকে ফেরত দিতে হবে। যদি তারা তা না করেন, তবে ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।

‘রেজুলেশন’ ব্যবস্থা: যদি কোনো ব্যাংকের মালিক বা সুবিধাভোগীরা নিজেদের লাভের জন্য ব্যাংকের টাকা বা সম্পত্তি ব্যবহার করেন, অথবা জালিয়াতির মাধ্যমে অন্যকে সুবিধা পাইয়ে দেন, তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সেই ব্যাংকের বিরুদ্ধে ‘রেজুলেশন’ নামের বিশেষ ব্যবস্থা নিতে পারবে। এখানে ‘রেজুলেশন’ মানে হলো, ওই ব্যাংকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারবে।

অস্থায়ী প্রশাসক: কোনো ব্যাংক আর্থিকভাবে খুব দুর্বল হয়ে পড়লে, বাংলাদেশ ব্যাংক সেখানে একজন অস্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ করতে পারবে।

মূলধন ও শেয়ার হস্তান্তর: দুর্বল ব্যাংকের আর্থিক শক্তি বাড়াতে নতুন বা পুরনো শেয়ার মালিকদের মাধ্যমে মূলধন জোগাড় করার ব্যবস্থা করতে পারবে। এছাড়া, ব্যাংকের শেয়ার, সম্পদ বা দেনা অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তরের ক্ষমতাও বাংলাদেশ ব্যাংকের থাকবে।

হস্তক্ষেপের সুযোগ: যদি বাংলাদেশ ব্যাংক দেখে যে কোনো ব্যাংক আর টিকতে পারছে না, দেউলিয়া হতে চলেছে, আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না বা দেশের জন্য আর্থিক ঝুঁকি তৈরি করছে, তখন বাংলাদেশ ব্যাংক সেই ব্যাংকের ভালোর জন্য হস্তক্ষেপ করতে পারবে। এই কাজগুলো দেখাশোনা করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি নতুন বিভাগও খোলা হবে।

‘ব্রিজ ব্যাংক’ গঠন: খুব দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকের জরুরি কাজ চালু রাখতে এবং ভালোভাবে পরিচালনার জন্য এক বা একাধিক ‘ব্রিজ ব্যাংক’ (অস্থায়ী ব্যাংক) তৈরি করা যাবে। এই অস্থায়ী ব্যাংক পরে অন্য কারও কাছে বিক্রি করে দেওয়া হতে পারে। এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংক চাইলে দুর্বল ব্যাংকের সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য সাময়িকভাবে বন্ধ বা নিষিদ্ধ করে দিতে পারবে।

সংকট মোকাবিলায় বিশেষ কাউন্সিল: ব্যাংকিং খাতের যেকোনো সংকট মোকাবিলার জন্য একটি বিশেষ কমিটি বা ‘ব্যাংকিং খাত সংকট ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল’ গঠন করা হবে। এই কাউন্সিলে সাতজন সদস্য থাকবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হবেন এর প্রধান। অন্য সদস্যরা হবেন: অর্থ সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান, আইনসচিব (লেজিসলেটিভ ও সংসদ), রেজুলেশন বিভাগের ডেপুটি গভর্নর এবং গভর্নরের পছন্দের আরেকজন ডেপুটি গভর্নর। এই কাউন্সিল প্রতি তিন মাস পর পর সভা করবে এবং সংকট মোকাবিলার জন্য বিভিন্ন কৌশল ও পরিকল্পনা তৈরি করবে।

ব্যাংক বন্ধ (অবসায়ন) ও জরিমানা: কোনো ব্যাংকের লাইসেন্স বাতিল হয়ে গেলে, সেটি বন্ধ করে দেওয়ার (অবসায়ন) জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক আদালতে আবেদন করবে। আদালত তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের ঠিক করা একজনকে এই দায়িত্ব দেবে। ব্যাংক বন্ধের আদেশ চালু হওয়ার পর থেকে ব্যাংকের কোনো দেনার ওপর আর সুদ বা অন্য কোনো চার্জ যোগ হবে না।

কোনো ব্যাংক নিজে থেকেও বন্ধ হতে চাইলে পারবে, তবে তার আগে অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হবে। লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্তের পর সাত দিনের মধ্যে আমানতকারীদের টাকা এবং দুই মাসের মধ্যে অন্যান্য দেনা শোধ করতে হবে।

যদি কোনো ব্যক্তির কাজ, অবহেলা বা সিদ্ধান্তের কারণে কোনো দুর্বল ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে সেই ব্যক্তির ব্যক্তিগত দায়ও ঠিক করা হবে।

এই আইনের কোনো নিয়ম ভাঙলে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। আর নিয়ম না মানা পর্যন্ত প্রতিদিন অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হবে।

এই পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে সরকার দেশের ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা জোরদার করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ব্যাংক খাতে সংস্কার: দুর্বল ব্যাংক নিয়ন্ত্রণে কঠোর হচ্ছে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক

দেশের ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতা ফেরাতে এবং দুর্বল ব্যাংকগুলোর সমস্যা সমাধানে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক একযোগে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ‘ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ ২০২৫’ জারির মাধ্যমে যেকোনো তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ক্ষমতা পেয়েছে তারা, যার মধ্যে ইসলামিক ব্যাংকগুলোও অন্তর্ভুক্ত। গত শুক্রবার অধ্যাদেশটি সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হয়েছে, যা এর আগে ১৭ এপ্রিল উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন দেয়।

এই নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক যৌথভাবে শেয়ার হস্তান্তরের আদেশ জারির মাধ্যমে проблемগ্রস্ত ব্যাংকের শেয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে ন্যস্ত করতে পারবে। এর মূল লক্ষ্য হলো দুর্বল ব্যাংকগুলোকে উদ্ধার করা এবং আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা।

শীর্ষ কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা:
অধ্যাদেশে ব্যাংকের তহবিল জালিয়াতি বা অপব্যবহারের জন্য ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগতভাবে দায়ী করার বিধান রাখা হয়েছে। এর আওতায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা পড়বেন। জালিয়াতি করা অর্থ বা সম্পদ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে ফেরত দিতে তারা বাধ্য থাকবেন। ব্যর্থ হলে ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। এছাড়া, কোনো ব্যাংকের সুবিধাভোগী মালিক ব্যক্তিগত লাভের জন্য ব্যাংকের সম্পদ বা তহবিল ব্যবহার করলে অথবা অন্যের সুবিধার জন্য জালিয়াতি করলে, বাংলাদেশ ব্যাংক ওই ব্যাংকের বিরুদ্ধে 'রেজুলেশন' প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে। 'রেজুলেশন' বলতে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা বোঝানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্ধিত ক্ষমতা:
নতুন এই অধ্যাদেশ বাংলাদেশ ব্যাংককে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা প্রদান করেছে:

অস্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ: সুনির্দিষ্ট কারণে আর্থিকভাবে দুর্বল ব্যাংকের জন্য অস্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ করা যাবে।

মূলধন বৃদ্ধি ও হস্তান্তর: বিদ্যমান বা নতুন শেয়ারহোল্ডারদের মাধ্যমে দুর্বল ব্যাংকের মূলধন বাড়ানো এবং ব্যাংকের শেয়ার, সম্পদ ও দায় তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তরের ক্ষমতা পাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

হস্তক্ষেপের ক্ষেত্র: যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে কোনো ব্যাংক টেকসই নয়, দেউলিয়া বা দেউলিয়ার পথে, আমানতকারীদের দায় মেটাতে অক্ষম অথবা আর্থিক সংকট তৈরি করেছে, সেক্ষেত্রে বৃহত্তর স্বার্থে হস্তক্ষেপ করতে পারবে। এসব বিষয় তদারকির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি পৃথক বিভাগ খোলা হবে।

ব্রিজ ব্যাংক গঠন: দুর্বল ব্যাংকের জরুরি কার্যক্রম অব্যাহত রাখা ও কার্যকর ব্যবস্থাপনার জন্য এক বা একাধিক ‘ব্রিج ব্যাংক’ (অস্থায়ী ব্যাংক) গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। এই ব্রিজ ব্যাংক পরবর্তী সময়ে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করা যাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুর্বল ব্যাংকের সব ধরনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করার ক্ষমতাও পাবে।

সংকট মোকাবিলায় ‘ব্যাংকিং খাত সংকট ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল’:
ব্যাংকিং খাতের সংকট মোকাবিলা এবং আপৎকালীন পরিকল্পনা তৈরির জন্য সাত সদস্যের একটি আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক ‘ব্যাংকিং খাত সংকট ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল’ গঠন করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এই কাউন্সিলের প্রধান হবেন। সদস্যরা হলেন – অর্থ সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, বিএসইসি চেয়ারম্যান, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক সচিব, রেজুলেশন বিভাগের দায়িত্বে থাকা ডেপুটি গভর্নর এবং গভর্নরের মনোনীত আরেকজন ডেপুটি গভর্নর। কাউন্সিল প্রতি তিন মাস অন্তর সভা করবে।

অবসায়ন ও জরিমানা:
কোনো ব্যাংকের লাইসেন্স বাতিল হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তার অবসায়নের জন্য আদালতে আবেদন করবে এবং আদালত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনোনীত ব্যক্তিকে অবসায়ক হিসেবে নিয়োগ দেবে। অবসায়ন আদেশ কার্যকর হওয়ার পর ব্যাংকের দায়ের ওপর কোনো সুদ বা চার্জ যুক্ত হবে না। কোনো ব্যাংক স্বেচ্ছায় অবসায়নে যেতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমতি লাগবে এবং লাইসেন্স বাতিলের সাত কার্যদিবসের মধ্যে আমানত ও দুই মাসের মধ্যে অন্যান্য দায় পরিশোধ করতে হবে।

অধ্যাদেশের বিধিমালা লঙ্ঘনে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা এবং নিয়ম না মানা পর্যন্ত প্রতিদিন অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কর্মকাণ্ড বা সিদ্ধান্তের কারণে কোনো দুর্বল ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার জন্যও ব্যক্তিগত দায় নির্ধারণ করা হবে।

এই পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে সরকার দেশের ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা জোরদার করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মেটা-কিওয়ার্ড:

ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ ২০২৫, বাংলাদেশ ব্যাংক, তফসিলি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ইসলামিক ব্যাংক, শেয়ার হস্তান্তর, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ, তহবিল জালিয়াতি, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চেয়ারম্যান, ব্যাংক রেজুলেশন, অস্থায়ী প্রশাসক, দুর্বল ব্যাংক, মূলধন বৃদ্ধি, ব্রিজ ব্যাংক, ব্যাংকিং খাত সংকট ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল, ব্যাংক অবসায়ন, আমানতকারী, আর্থিক সংকট, জরিমানা, ব্যাংকিং সংস্কার

সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক যৌথভাবে শেয়ার হস্তান্তরের আদেশ জারির মাধ্যমে যেকোনো তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে। এর মধ্যে ইসলামিক ব্যাংকগুলোও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ‘ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ ২০২৫’ এ এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। অধ্যাদেশ অনুযায়ী, শেয়ারের নতুন মালিক হবে রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো প্রতিষ্ঠান।

অধ্যাদেশটি গত শুক্রবার সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হয়েছে। এর আগে গত ১৭ এপ্রিল উপদেষ্টা পরিষদ এটির অনুমোদন দেয়।

নতুন অধ্যাদেশে ব্যাংকের তহবিল জালিয়াতির জন্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগতভাবে দায়ী করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এর আওতায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), চেয়ারম্যানসহ অন্য অন্য দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা পড়বেন। জালিয়াতি বা অপব্যবহার করা অর্থ বা সম্পদ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে ফেরত দিতে তারা বাধ্য থাকবেন। ব্যর্থ হলে ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

অধ্যাদেশে আরও বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংকের সুবিধাভোগী মালিক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যক্তিগত লাভের জন্য ব্যাংকের সম্পদ বা তহবিল ব্যবহার করলে অথবা অন্যের সুবিধার জন্য জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যবহার করলে, বাংলাদেশ ব্যাংক ওই ব্যাংকের বিরুদ্ধে 'রেজুলেশন' প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে। অধ্যাদেশে 'রেজুলেশন' বলতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতাকে বোঝানো হয়েছে।

অধ্যাদেশের একটি ধারায় সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে আর্থিকভাবে দুর্বল ব্যাংকের জন্য অস্থায়ী প্রশাসক নিয়োগের ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিদ্যমান বা নতুন শেয়ারহোল্ডারদের মাধ্যমে দুর্বল ব্যাংকের মূলধন বাড়ানোর এবং ব্যাংকের শেয়ার, সম্পদ ও দায় তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তরের ক্ষমতা পাবে।

অধ্যাদেশে আরও বলা হয়েছে, যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে কোনো ব্যাংক টেকসই নয় বা টেকসই হওয়ার সম্ভাবনা নেই, দেউলিয়া বা দেউলিয়ার পথে, আমানতকারীদের দায় মেটাতে অক্ষম অথবা আর্থিক সংকট তৈরি করেছে, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই ব্যাংকের বৃহত্তর স্বার্থে হস্তক্ষেপ করতে পারবে। এসব বিষয় তদারকির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি পৃথক বিভাগ খোলা হবে বলেও অধ্যাদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

দুর্বল ব্যাংকের জরুরি কার্যক্রম অব্যাহত রাখা ও কার্যকর ব্যবস্থাপনার জন্য এক বা একাধিক ‘ব্রিজ ব্যাংক’ গঠনের বিধানও রাখা হয়েছে। এই ব্রিজ ব্যাংক পরবর্তী সময়ে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করা যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্বল ব্যাংকের সব ধরনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা পাবে। অধ্যাদেশে ব্রিজ ব্যাংককে দুর্বল বা দেউলিয়া ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক গঠিত অস্থায়ী সত্তা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরেক পদক্ষেপে, অধ্যাদেশে ‘ব্যাংকিং খাত সংকট ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল’ নামে একটি সাত সদস্যের আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক সংস্থা গঠনের কথা বলা হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের সুপারিশে প্রথমে প্রস্তাবিত ছয় সদস্যের পরিবর্তে এই কাউন্সিল সাত সদস্যের করা হয়েছে। এটি সংকট মোকাবিলার কৌশল ও আপৎকালীন পরিকল্পনা তৈরি করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এই কাউন্সিলের প্রধান হবেন। এছাড়া সদস্য হিসেবে থাকবেন অর্থ সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক সচিব, রেজুলেশন বিভাগের দায়িত্বে থাকা ডেপুটি গভর্নর এবং গভর্নরের মনোনীত আরেকজন ডেপুটি গভর্নর। কাউন্সিল প্রতি তিন মাস অন্তর সভা করবে।

অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংকের লাইসেন্স বাতিল হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তার অবসায়নের (লিকুইডেশন) জন্য আদালতে আবেদন করবে। আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোনীত ব্যক্তিকে অবসায়ক হিসেবে নিয়োগ দেবে। অবসায়ন আদেশ কার্যকর হওয়ার পর ব্যাংকের দায়ের ওপর কোনো সুদ বা অন্য কোনো চার্জ যুক্ত হবে না।

এছাড়া, কোনো ব্যাংক স্বেচ্ছায় অবসায়নে যেতে পারবে, তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমতি ছাড়া কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে না। লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার সাত কার্যদিবসের মধ্যে আমানত এবং দুই মাসের মধ্যে অন্যান্য দায় পরিশোধ করতে হবে।

পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কর্মকাণ্ড, নিষ্ক্রিয়তা বা সিদ্ধান্তের কারণে কোনো দুর্বল ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার জন্য ব্যক্তিগত দায় নির্ধারণের কথাও অধ্যাদেশে বলা হয়েছে। এই অধ্যাদেশের অধীন জারি করা বিধিমালা লঙ্ঘনে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা এবং নিয়ম মানা না পর্যন্ত প্রতিদিন অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.