শ্বাসরুদ্ধকর এল ক্লাসিকো বার্সেলোনার, বিফলে গেল এমবাপ্পের হ্যাটট্রিক

লা লিগার শিরোপা জয়ের পথে বড় এক ধাপ এগিয়ে গেল বার্সেলোনা। রোববার রাতে নিজেদের মাঠে (ক্যাম্প ন্যুতে) চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদকে এক শ্বাসরুদ্ধকর এল ক্লাসিকোতে ৪-৩ গোলে পরাজিত করে তারা। দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও এই দুর্দান্ত জয় তুলে নেয় কাতালানরা, যা রিয়াল মাদ্রিদের ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পের অসাধারণ হ্যাটট্রিককেও ম্লান করে দিয়েছে। মৌসুমের দ্বিতীয় লিগ ক্লাসিকোতে এই জয় বার্সাকে শিরোপার প্রায় দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে।

ছবি - সংগৃহীত

ম্যাচের শুরুটা অবশ্য রিয়াল মাদ্রিদের জন্য ছিল স্বপ্নের মতো। ম্যাচের মাত্র ৫ মিনিটেই বার্সেলোনার গোলরক্ষক ওজিচে সিজিসনি এমবাপ্পেকে ফাউল করলে পেনাল্টির নির্দেশ দেন রেফারি। স্পট-কিক থেকে গোল করে রিয়ালকে ১-০ গোলে এগিয়ে দেন কিলিয়ান এমবাপ্পে নিজেই। এরপর ১৪ মিনিটে ভিনিসিয়াস জুনিয়রের দারুণ এক পাস থেকে নিজের দ্বিতীয় গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন এমবাপ্পে। এই গোলটি ছিল চলতি লা লিগায় তার ২৬তম, যা তাকে রবার্ট লেভানডফস্কিকে ছাড়িয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে শীর্ষে বসিয়েছে। শুধু তাই নয়, সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এই মৌসুমে এটি ছিল এমবাপ্পের ৩৮তম গোল, যা রিয়ালে তার অভিষেক মৌসুমে ইভান জামোরানোর করা ৩৭ গোলের রেকর্ডকেও ভেঙে নতুন মাইলফলক তৈরি করেছে।

দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও বার্সেলোনা দ্রুত ম্যাচে ফেরে। ১৯ মিনিটে ফেরান তোরেসের নেওয়া কর্ণার কিক থেকে উড়ে আসা বলে দারুণ এক হেডে বার্সার হয়ে প্রথম গোলটি করেন এরিক গার্সিয়া, ব্যবধান হয় ২-১। এরপর তরুণ বিস্ময় লামিন ইয়ামাল ৩২ মিনিটে আবরো তোরেসের সহায়তায় গোল করে বার্সেলোনাকে সমতায় ফেরান (২-২)। মাত্র ১৭ বছর বয়সী এই খেলোয়াড়কে আটকাতে মাদ্রিদের রক্ষণভাগ ব্যর্থ হয়। সমতা ফেরার মাত্র দুই মিনিট পরই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় বার্সেলোনা। পেড্রির থ্রু বলে রাফিনহা গোল করে বার্সেলোনাকে ৩-২ গোলে এগিয়ে দেন।

বিরতির ঠিক আগে আগে বার্সেলোনা ব্যবধান বাড়ায়। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে (৪৫ মিনিটে) ফেরান তোরেসের সাথে বল আদান-প্রদান করে রাফিনহা তার দ্বিতীয় গোলটি আদায় করে নেন, স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৪-২। এর আগে অবশ্য এমবাপ্পে একটি গোল করেছিলেন, কিন্তু ভিএআর দেখে সেটি অফসাইডের কারণে বাতিল করা হয়। ফ্রেংকি ডি জংয়ের একটি ফাউলের পর এমবাপ্পে পেনাল্টির আবেদন করলেও ভিএআর সেটিও নাকচ করে দেয়, কারণ এমবাপ্পে অফসাইডে ছিলেন।

ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে রিয়াল মাদ্রিদ লড়াইয়ে ফেরার চেষ্টা করে। ম্যাচের ৭০ মিনিটে ভিনিসিয়াস জুনিয়রের দারুণ পাসে গোল করে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করেন এমবাপ্পে, স্কোরলাইন হয় ৪-৩। তবে এই গোলটি শেষ পর্যন্ত রিয়ালকে বাঁচাতে যথেষ্ট ছিল না। খেলার শেষদিকে রিয়াল মাদ্রিদের অরেলিয়েন টিচুয়ামেনির হাতে বল লাগলে বার্সেলোনা পেনাল্টির জোরালো আবেদন করে, কিন্তু ভিএআর সেটিও বাতিল করে দেয়।

এই জয় বার্সেলোনাকে লা লিগার পয়েন্ট টেবিলে রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে ৭ পয়েন্ট এগিয়ে দিয়েছে, যেখানে মৌসুম শেষ হতে আর মাত্র তিনটি ম্যাচ বাকি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে ইন্টার মিলানের কাছে পরাজিত হয়ে বাদ পড়ার পর এই জয় হান্সি ফ্লিকের দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং আত্মবিশ্বাস ফিরিয়েছে।

ম্যাচ শেষে বার্সেলোনার গোলদাতা লামিন ইয়ামাল বলেন, ‘িআমরা পয়েন্ট টেবিলে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবধান তৈরি করেছি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের হতাশার পর এই জয়টা আমাদের খুব দরকার ছিল। সমর্থকরাও এতে দারুণ খুশি।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘এখন উপভোগ করার মুহূর্ত। লিগ শিরোপার কাছাকাছি যেতে আজকের জয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সবাই দারুণ খুশি।’

অন্যদিকে, রিয়াল মাদ্রিদের জন্য সম্ভবত এই মৌসুমটা বড় কোনো শিরোপা ছাড়াই শেষ হতে যাচ্ছে। ম্যাচের পর রিয়াল বস কার্লো আনচেলত্তি পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণ করে বলেন, ‘আমাদের আরও ভালোভাবে প্রতিরোধ করা উচিত ছিল। এই পরাজয় মেনে নেওয়া যায় না। এমবাপ্পে দারুণ খেলেছে, তবে আক্রমণভাগ নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ নেই।’

উল্লেখ্য, আনচেলত্তির অধীনে রিয়ালের এটাই শেষ ক্লাসিকো হতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এই মৌসুমে চারবারের দেখায় রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে বার্সেলোনাই আধিপত্য বিস্তার করে তিনটি জয় তুলে নিয়েছে।