২০০৯ সালের ২৯ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সাড়ে দশ হাজারের বেশি হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

logo ministry of home affairsস্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন-১ শাখার এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বাসস জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ১০ হাজার ৫০৬টি মামলার প্রত্যাহারের জন্য প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সিদ্ধান্তের লক্ষ্য হলো- বিগত সময়গুলোতে রাজনৈতিক কারণে যেসব মানুষ অন্যায়ভাবে মামলার মুখোমুখি হয়েছেন, তাদের হয়রানি থেকে মুক্তি দেওয়া এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।

সরকারি নথি অনুযায়ী, এই মামলাগুলোর অধিকাংশই বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছিল। অনেক মামলারই অভিযোগ ছিল, নাশকতা, ককটেল বিস্ফোরণ, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি, পুলিশে হামলা প্রভৃতি নিয়ে। কিন্তু বিএনপি দাবি করেছে, এসব মামলার অধিকাংশই ছিল ‘গায়েবি’, রাজনৈতিক হয়রানির উদ্দেশ্যে সাজানো।

মানিকগঞ্জে ২০২২ সালের ২৯ নভেম্বর এমনই একটি মামলায় জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ পারভেজ ও ছাত্রদলের কর্মী জসিম উদ্দিন ওরফে আকাশকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়েছিল।

তবে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের দাবি, সেই সময় ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ বানচাল করতেই সারা দেশে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছিল।

মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এসএ জিন্নাহ কবির বলেন, আমার নামে বিগত সরকারের সময় ৩৩টি হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হয়েছে। হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে ঘরছাড়া করে রাখা হয়েছিল এসব মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে।

সরকার মামলাগুলোর সত্যতা যাচাই ও আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য কিনা তা মূল্যায়নের জন্য দুটি স্তরে কমিটি গঠন করেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা জানান, জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটকে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ৪৯৪ ধারার আওতায় উক্ত মামলাগুলো প্রত্যাহার করে না চালানোর জন্য সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক কারণে হওয়া হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের লক্ষ্যে দুটি কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। এর মধ্যে একটি জেলা পর্যায়ের কমিটি এবং অন্যটি মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটি। 

জেলা পর্যায়ের কমিটির সভাপতি হিসেবে থাকবেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সদস্যসচিব অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং সদস্য পুলিশ সুপার (মহানগর এলাকার জন্য পুলিশের একজন ডেপুটি কমিশনার) ও পাবলিক প্রসিকিউটর (মহানগর এলাকার মামলাগুলোর জন্য মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর)। 

জেলা কমিটির কাছে যদি মনে হয় মামলাটি রাজনৈতিক বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে হয়রানির জন্য করা হয়েছে, তাহলে মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য কমিটি সরকারের কাছে সুপারিশ করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সেই সুপারিশ, মামলার এজাহার, অভিযোগপত্রসহ আবেদন পাওয়ার ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে নির্দিষ্ট ছক অনুযায়ী তথ্যাদিসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন।

এ ছাড়া ব্যক্তি পর্যায়েও আবেদন করা যাবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব অথবা আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর বরাবরেও আবেদন নেওয়া হচ্ছে। তবে সেই আবেদনগুলো যাচাই বাছাই করে প্রথমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তালিকা প্রস্তুত করে আইন উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে রেজুলেশন আকারে অনুমোদন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়। পরে আবারো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়। সেখান থেকে ফেরত আসার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে স্ব স্ব জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট বরাবর চূড়ান্তভাবে চিঠি পাঠানো হয় ।

জেলা পর্যায়ের কমিটির কার্যপরিধি ও কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জেলা কমিটির কাছ থেকে সুপারিশপ্রাপ্তির পর মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটি সেগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করবে। প্রত্যাহারযোগ্য মামলা চিহ্নিত করে তালিকা প্রস্তত করবে এবং মামলা প্রত্যাহারের কার্যক্রম গ্রহণ করবে। তবে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪এর আওতাধীন মামলাগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলাগুলো দ্য ক্রিমিনাল ল অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট, ১৯৫৪ এর ১০(৪) ধারার বিধানমতে কমিশনের লিখিত আদেশ ছাড়া প্রত্যাহার করা যায় না বিধায় এ ধরনের মামলা চিহ্নিত করে তালিকা তৈরি করতে হবে। এ ধরনের মামলার বিষয়ে করণীয় পরে নির্ধারণ করা হবে।

মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটির সভাপতি হিসেবে আছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং সদস্যসচিব হিসাবে দায়িত্বপালন করছেন, জননিরাপত্তা বিভাগের আইন-১ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব। আর সদস্য হিসেবে থাকছেন জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব, অতিরিক্ত সচিব (আইন ও শৃঙ্খলা) ও যুগ্ম সচিব (আইন) এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি (যুগ্ম সচিব পর্যায়ের নিচে নয়)।

ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ৪৯৪ ধারার আওতায় সরকার এসব মামলা প্রত্যাহার করছে। ব্যক্তি পর্যায়েও এই বিষয়ে আবেদন করা সম্ভব। যেকোনো ব্যক্তি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অথবা আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর বরাবর আবেদন করতে পারবেন। তবে আবেদনের সঙ্গে মামলার এজাহার ও চার্জশিটের সত্যায়িত অনুলিপি দাখিল বাধ্যতামূলক।

সরকার জানিয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪–এর আওতায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো আলাদাভাবে বিবেচনা করা হবে। এসব মামলায় কমিশনের লিখিত অনুমোদন ছাড়া প্রত্যাহার সম্ভব নয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট মামলাগুলো চিহ্নিত করে আলাদা তালিকা তৈরি করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ পরিচালক ফয়সল হাসান বলেন, নিরপরাধ নাগরিক ও রাজনৈতিক কর্মীদের হয়রানি থেকে মুক্তি দেওয়ার লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ। আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়ে এ কার্যক্রম চলমান থাকবে।

তিনি জানান, এটি কোনো এককালীন প্রক্রিয়া নয়-যেসব মামলা প্রকৃতপক্ষে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়েছে বলে প্রমাণ মিলবে, সেগুলো পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করা হবে।

সূত্র: বাসস

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.