আব্বাস-আউন বৈঠকে সিদ্ধান্ত: অস্ত্র থাকবে শুধু রাষ্ট্রের অধীনে
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
লেবাননে অস্ত্রের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রের হাতে ন্যস্ত করার যুগান্তকারী পদক্ষেপে সম্মত হয়েছেন লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন এবং ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। বুধবার বেইরুটে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে তারা লেবাননের ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরগুলোতে সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে নিরস্ত্রীকরণের বিষয়েও ঐকমত্য পোষণ করেন। এই পদক্ষেপ লেবাননের সার্বভৌমত্ব সুসংহত করার পাশাপাশি দশকের পর দশক ধরে চলমান অস্থিতিশীলতার অবসানে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জোসেফ আউন এবং মাহমুদ আব্বাস
২০১৭ সালের পর এটিই আব্বাসের প্রথম লেবানন সফর। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-এর তথ্যমতে, লেবাননে প্রায় ২ লাখ ২২ হাজার ফিলিস্তিনি শরণার্থী রয়েছেন, যাদের অধিকাংশই রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণহীন, অবহেলিত এবং অত্যন্ত ঠাসাঠাসি শিবিরে বাস করেন। লেবানন সরকারের একটি সূত্রের বরাতে জানা যায়, আব্বাসের এই সফরের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো শরণার্থী শিবিরগুলো থেকে অস্ত্র প্রত্যাহারের জন্য একটি কার্যকর যৌথ কাঠামো গঠন করা।
বৈরুতের প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘লেবানন রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে অস্ত্র রাখার যুগ শেষ হয়েছে’ এবং অস্ত্রের একচ্ছত্র অধিকার কেবল রাষ্ট্রেরই থাকা উচিত। এই লক্ষ্যে শরণার্থী শিবিরগুলো থেকে অস্ত্র প্রত্যাহারের জন্য একটি যৌথ কাঠামো গঠন এবং ফিলিস্তিনি শিবিরগুলোর সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও শরণার্থীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করার জন্য একটি যৌথ লেবানিজ-ফিলিস্তিনি কমিটি গঠনে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে। তবে এই পুরো প্রক্রিয়া লেবাননের সার্বভৌমত্ব ও আইন মেনে সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।
ঐতিহ্যগতভাবে লেবানিজ সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনি শিবিরগুলোতে প্রবেশ করে না। আব্বাসের ফাতাহ, প্রতিদ্বন্দ্বী হামাস এবং অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো নিজেরাই এই শিবিরগুলোর নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
উল্লেখ্য, গাজা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিগত এক বছরের সংঘাতে লেবাননে অবস্থানরত হামাস ও তাদের মিত্র হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের ওপর একাধিক হামলার দায় স্বীকার করেছিল। নভেম্বরের যুদ্ধবিরতির পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও, লেবাননের প্রেসিডেন্ট আউন মিশরের ওএন টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, ‘অস্ত্রের একচ্ছত্র মালিকানা রাষ্ট্রের হাতেই থাকা উচিত।’
তিনি আরও জানান, সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে ছয়টি ফিলিস্তিনি সামরিক প্রশিক্ষণ শিবির গুঁড়িয়ে দিয়েছে—যার মধ্যে তিনটি বেকায়া অঞ্চলে, একটি বেইরুতের দক্ষিণে এবং দুটি উত্তর লেবাননে। নভেম্বরের অস্ত্রবিরতির অংশ হিসেবে লেবাননের দক্ষিণে হিজবুল্লাহর সামরিক পরিকাঠামোও ধ্বংস করছে সেনাবাহিনী।
আব্বাসের সফরসঙ্গী ও পিএলও-র জ্যেষ্ঠ নেতা আহমাদ মাজদালানি এই পরিস্থিতিকে লেবাননের জন্য ‘একটি নতুন যুগ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন, যেখানে দেশটি আরব ও মার্কিন সমর্থন পাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো—আমরা যেন লেবাননের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির অংশ না হয়ে যাই এবং ফিলিস্তিনি ইস্যু যেন কোনো পক্ষের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির উপকরণ না হয়।’
অন্যদিকে, লেবাননের হামাস নেতা আলি বারাকাহ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন যে, আলোচনা কেবল অস্ত্র ও নিরাপত্তার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে ফিলিস্তিনি জনগণের নাগরিক ও মানবাধিকারের বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত করবে। তিনি বলেন, ‘আমরা লেবাননের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তবে আমাদের ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য নাগরিক ও মানবাধিকারও দাবি করি।’
লেবাননে বসবাসরত অধিকাংশ ফিলিস্তিনি শরণার্থী ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত বা পালিয়ে আসা জনগোষ্ঠীর বংশধর, যারা আজও কর্মসংস্থানসহ নানা মৌলিক নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। এই নতুন উদ্যোগ তাদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে কিনা, তা সময়ই বলে দেবে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.