ভারতে সাপের কামড়ে ৪৭ জনের ‘২৮০ বার মৃত্যু’, ১১ কোটি টাকা লোপাট!

সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যু একটি দুঃখজনক ঘটনা। কিন্তু একই ব্যক্তি যদি ২৮-২৯ বার সাপের ছোবলে ‘মারা যান’ এবং প্রতিবার সরকারি খাতায় তার প্রমাণও থাকে, তবে তা নিঃসন্দেহে অবিশ্বাস্য ও বিস্ময়কর। এমনই এক নজিরবিহীন জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে ভারতের মধ্যপ্রদেশের সিওনি জেলায়। সরকারি নথিতে ৪৭ জনকে মোট ২৮০ বার ‘সাপের কামড়ে মৃত’ দেখিয়ে প্রায় ১১ কোটি ২৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে।

সাপের কামড় নিয়ে মৃত্যুবাণিজ্য করেছে কয়েক সরকারি কর্মচারী

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ‘রানি বাই’ নামের এক মহিলাকে সাপের কামড়ে ২৯ বার মৃত দেখানো হয়েছে। প্রতিবার তার নামে ৪ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ বাবদ মোট ১ কোটি ১৬ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। একইভাবে, ‘দ্বারকা বাই’ নামে আরেক মহিলাকে একাধিকবার মৃত দেখিয়ে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এমনকি, ‘রাজু’ নামে এক যুবককেও সাপের কামড়ে ২৮ বার মৃত দেখিয়ে কোটি টাকার বেশি ক্ষতিপূরণ তোলা হয়েছে। এই অভিনব পন্থায় মোট ৪৭ জনকে ২৮০ বার মৃত দেখিয়ে সরকারি কোষাগার থেকে প্রায় ১১ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা লোপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

এই বিশাল আর্থিক কেলেঙ্কারির মূল হোতা হিসেবে অভিযুক্ত হয়েছেন সরকারি কর্মচারী সচিন দহায়ক। অভিযোগ, তিনি তার পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। ভুয়া নথি তৈরি করে এবং সরকারি কর্মকর্তাদের ডিজিটাল স্বাক্ষর জাল করে অত্যন্ত সুকৌশলে এই টাকাগুলো তুলে নেওয়া হতো। জানা গেছে, ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এই ভয়াবহ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্ত সচিন দহায়ককে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

সিওনি জেলার জেলাশাসক সংস্কৃতি জৈন জানিয়েছেন, দহায়ক ছাড়াও এই জালিয়াতির সঙ্গে আরও ছয়জন সরকারি কর্মকর্তা জড়িত থাকতে পারেন বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে একজন মহকুমা শাসক, চারজন তহসিলদার এবং একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী রয়েছেন। তারাও বর্তমানে তদন্তের আওতায় রয়েছেন।

তিনি আরও নিশ্চিত করেছেন যে, দহায়কের নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ চক্র ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে এই বিপুল অর্থ লুটে নিয়েছে।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, চক্রটি প্রথমে ভুয়া মৃত্যু সনদ তৈরি করত। এরপর সরকারি আইডি ব্যবহার করে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে ক্ষতিপূরণের টাকা ছাড় করিয়ে নিত।

অর্থ দপ্তরের যুগ্ম অধিকর্তা রোহিত কৌশল বলেন, “তদন্তে এটা প্রমাণিত যে, ৪৭ জনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১১ কোটি টাকারও বেশি অর্থ পাঠানো হয়েছে। পুরো বিষয়টি এখন কঠোর আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হবে।”

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা