আপনি পড়ছেন

গাজায় কর্মরত ব্রিটিশ চিকিৎসকরা যুদ্ধবিধ্বস্ত এই অঞ্চলকে এক কথায় ‘কসাইখানা’ বলে অভিহিত করেছেন। সেখানে তারা হাড় কাঁপানো বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে চরম অপুষ্টিতে ভোগা ফিলিস্তিনি রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। এই চিকিৎসকরা বিশ্বনেতাদের প্রতি কেবল মৌখিক সহানুভূতি না দেখিয়ে গাজাবাসীর জীবন বাঁচাতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সংবাদমাধ্যম আরব নিউজ এই ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে।

gaza hospital 9গাজার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের কয়েকজন প্লাস্টিক সার্জন ও অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ বর্তমানে খান ইউনিসের আমাল ও নাসের হাসপাতালে দুঃসাহসিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে প্লাস্টিক সার্জন ড. টম পোটোকার গাজায় তার ১৬তম মিশনে এসে বলেছেন, ‘২০২৩ সালের শেষ সফরের তুলনায় এবারের ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা অনেক বেশি, যা কল্পনাতীত।’

একটি ইসরায়েলি হামলায় স্বামী ও সন্তান হারানো এক ফিলিস্তিনি নারীর অস্ত্রোপচারের পর তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘এখানে কী বলার থাকতে পারে! এটি ভয়াবহ, এক কথায় গণহত্যা চলছে। গাজা একটি কসাইখানায় পরিণত হয়েছে।’

ড. পোটোকার আরও জানান, তিনি পূর্বে যে ইউরোপীয় হাসপাতালে কাজ করছিলেন, সেটিও ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্রে ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় তাকে আমাল হাসপাতালে স্থানান্তরিত হতে হয়েছে।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। হাসপাতালগুলো বারবার ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। অবিরাম বিমান হামলা ও বোমাবর্ষণে নিহতের সংখ্যা ৫৩ হাজার ছাড়িয়েছে এবং হাসপাতালগুলো আহত ফিলিস্তিনিদের উপচে পড়া ভিড়ে দিশেহারা। মার্চ মাস থেকে মানবিক সহায়তা প্রবেশে অবরোধ সৃষ্টি হওয়ায় হাসপাতালগুলোর অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে পড়েছে। চিকিৎসকদের কাছে আহতদের জীবন বাঁচানোর মতো পর্যাপ্ত সরঞ্জাম নেই বললেই চলে।

ড. পোটোকার বলেন, ‘এবারের সফরের মূল পার্থক্য হলো তীব্রতা। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আমি যখন এখানে ছিলাম, তখনও পরিস্থিতি ভয়াবহ ছিল, অসংখ্য আহত মানুষ দেখেছি। কিন্তু এবার অবরোধের কারণে খুব সামান্য জিনিসপত্র ভেতরে প্রবেশ করছে। খাবার নেই, মানুষ অনাহারে মারা যাচ্ছে। চিকিৎসা সরঞ্জামও আসছে নামমাত্র। আরেকটি বিষয় যা বিশেষভাবে চোখে পড়ছে তা হলো ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ। খান ইউনুস শহর এখন যেন সোভিয়েত যুগের স্তালিনগ্রাদের মতো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।’

প্রতিবেদনে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের বিশৃঙ্খল চিত্রও ফুটে উঠেছে, যেখানে গুরুতর আহত শিশুদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর অস্ত্রোপচারের জন্য ব্রিটিশ চিকিৎসকদের কাছে পাঠানো হচ্ছে। বেশিরভাগ আঘাতই বিস্ফোরণজনিত এবং প্রায় সকল রোগীই মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছেন। নাসের হাসপাতালে শিশুরা বোমার আঘাতে শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর জখম নিয়ে ভর্তি হচ্ছে। কেউ কেউ দৃষ্টিশক্তি হারাচ্ছে, আবার কেউবা মারাত্মক পোড়া ক্ষতের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।

ব্রিটিশ চিকিৎসক ড. ভিক্টোরিয়া রোজ জানান, ‘হাসপাতালের বার্ন ইউনিটটি (দগ্ধ রোগী বিভাগ) ইতিমধ্যেই একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্রে ধ্বংস হয়ে গেছে। উপরন্তু, ইসরায়েল এই সপ্তাহে খান ইউনিসের বাসিন্দাদের অন্যত্র সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ায় অনেক হাসপাতাল কর্মী প্রাণের ভয়ে কাজে আসতে পারছেন না।’

ড. ভিক্টোরিয়া রোজের সহকর্মী সার্জন ড. গ্রেইম গ্রুম এই কঠিন পরিস্থিতিও ফিলিস্তিনি সহকর্মীদের অদম্য মনোবলের প্রশংসা করে বলেন, ‘এরা আমাদের মতোই সাধারণ মানুষ। তাদেরও ঘরবাড়ি, পরিবার আছে, তারাও শান্তিতে জীবনযাপন করতে চায়। এদের অনেকেই অত্যন্ত দক্ষ। কিন্তু হঠাৎ করেই তাদের সবকিছু ছেড়ে পালাতে হচ্ছে; খাবার, পানি ও নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হচ্ছে। এতকিছুর পরেও তারা প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজে আসছেন।’

ইসরায়েল বর্তমানে গাজার ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সামরিক অভিযান আরও তীব্র করছে। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরা আশঙ্কা করছেন, যেকোনো মুহূর্তে হাসপাতালগুলো পুরোপুরি খালি করে দিতে হতে পারে, যা হবে এক চরম মানবিক বিপর্যয়।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.