আপনি পড়ছেন

দিনদিন লোক দেখানো সভ্য হচ্ছি, শিক্ষিত হচ্ছি ঠিকই, তবে কি আমরা আদর্শিক মানুষ হচ্ছি বা হতে চেষ্টা করেছি? ছেলেমেয়েদের শিক্ষা নিয়ে অভিভাবকদের চিন্তিত হতে দেখা যায়, দুঃখের বিষয়- বাবা-মারা সন্তানদের নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ উদাসীন। রাষ্ট্র সার্টিফিকেট বাণিজ্য করছে, শিক্ষকরা শিক্ষাদানকে জীবিকা বা পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে, রাজনীতিবিদরা ছাত্ররাজনীতির খৈ ফুটিয়ে ছাত্রসমাজকে বিপদগামী বানাচ্ছে, ভার্সিটিগুলো থেকে শিক্ষিত যুবক বের হয় তবে এসকল যুবকদের মাঝে দেশপ্রেমের ঘটতি লক্ষণীয়। আজকে অবাদে বিদেশী স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে অসুস্থ কৃষ্টিকালচার ও নগ্নতা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ভাইরাস হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ, মুঠোফোনের সুবাদে পর্ণ ভিডিওর সায়লাব, অবাদে মাদক বিক্রি ও সেবন এখন একপ্রকার ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। যা সামাগ্রিক দিক বিশ্লেষণ করলে বলা যাবে চরম মাত্রার মানবিক অবক্ষয়ের সামিল।

abu rayhan misbah

দেশে আজো অনেক মাঠ-মঞ্চ কাঁপানো রাজনৈতিক বক্তা আছেন, বড় গলা করে তোয়াজ করার মত নেতার অভাব নেই। মানুষের চাইতেও পাতি নেতার সংখ্যা বেশি, অভাব শুধু মানবিক মূল্যবোধ অবক্ষয় রোধকল্পে মানুষকে নৈতিক ও আদর্শিক দিক-নির্দেশনা এবং সুশিক্ষা দেওয়ার মত লোকের। আজকে অন্ধকারাচ্ছন্ন এ সমাজকে সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার কেউ নেই। যারা দিক-নির্দেশনা দিবেন তারা কার্যত এ বিষয়টাকে উপলব্ধি করছেন না বা করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। যার সুযোগ নিয়ে মসজিদের ইমাম সাহেব তাঁর পেটের চিন্তা করে ধর্মকে মসজিদ কেন্দ্রিক করার পায়তারা করে গেছেন, মাদ্রাসার আলেম-ওলামারা জাকাত ফেৎরার টাকা হরিলুটে ব্যস্ত, পীর-মাশায়েখরা মানুষ-জনকে নাকে খত দিয়ে ভেড়ারপাল বানিয়ে রাখতে চাইছে, রাজনৈতিক দলের নেতারা বিদেশে টাকা পাচারের প্রতিযোগিতায় মত্ত্ব, ধর্মিয় দলগুলো টাউটামি-বাটপারির জন্য ইতোমধ্যে জনগনের আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব শূন্যতা ও গণতন্ত্র অনুপুস্থিত হওয়ার ফলে চোরাগোপ্তা হামলা, জঙ্গিবাদ মাথা চড়া দেওয়া আমাদের রাজনৈতিক অদূরদর্শীতার পরিণাম বটে। তাছাড়া রাজনীতি এখন কিছু চোর বাটপার ও লুটেরাদের হাতে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করার নাম করে অভিভাবকদেরকে পথে বসিয়ে দিচ্ছে। কিছু শিক্ষিতটাইপের ইতর আছেন যারা রোজ শিক্ষা সেক্টরকে হাটে নিলাম তুলতে সিদ্ধহস্ত। হাসপাতালগুলো আজ এক একটা কষাইখানা। ব্যবসায়ী বলতে বুঝি বৈধ ডাকাত। পুলিশ বলতে নিরিহ লোকদের হয়রানি করার লাগাম ছাড়া সরকারি মস্তান। নাগরিক সেবা নেই, সরকারি সেবা পেতে মোটা অংকের ঘুষ প্রদান, চাকুরী নেই, নতুন কর্মসংস্থান নেই, ধনী-গরীবের বৈশম্য বেড়ে চলছে। এরূপ সার্বিকদিক বিশ্লেষণ করলে বলা যাবে, আমরা অন্ধকারের মাঝে অদ্ভূত গোলকধাঁধায় হাঁটছি। যা আমাদের জন্য অত্যান্ত পরিতাপের বিষয়।

অন্যদিকে দেশের আনাচে কানাচে আজকে মরণ নেশা মাদক অনেকটাই সহজলভ্য দ্রব্যে পরিণত হয়েছে। হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে গাঁজা, ইয়াবা, ফেন্সিডিল, মদসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য। আরো অবাক করা বিষয় হলো এসব মাদকের অনেকটাই প্রকাশ্যে স্কুল, কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রি থেকে শুরু করে অল্প বয়সী নানান শ্রেণি-পেশার তরুণ ও যুবকরা মাদকের টার্গেট হচ্ছে। মরণ নেশা মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়েছে আমাদের আগামির প্রজন্ম। নেশাগ্রস্থ নতুন এ প্রজন্ম মাদকাসক্ত হয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে।

দেখা যাচ্ছে, তরুণ ও যুব সমাজ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। অন্যান্য মানবিক বিপর্যয়ের মত মাদকও একটি অন্যতম সামাজিক ব্যাধির রূপান্তরিত নাম। পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ছে এর সামগ্রিক ভয়াবহতা। ধেইধেই করে নেমে আসছে আত্মকলহ, খুন, চুরি, ছিনতাই, হানাহানির মত অপরাধমূলক কার্যকলাপ। মাদকের টাকার যোগান দিতে গিয়ে মাদকসেবিরা জড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে। এমন অনেক মাদকসেবী আছে তাদের নেশা জাতীয় দ্রব্যের খরচ মেটাতে নিজেরাই মাদকদ্রব্য বিক্রিও পর্যন্ত করছে।

প্রশাসন থেকে মাঝে মাঝে লোক দেখানো অভিযান হয়। আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর নেতৃত্বে হাতেগুনা কিছু ছেঁচড়া মাদক বিক্রয়কারীকে ধরা হলে কিছুদিন পর আইনের ফাঁক ফোঁকরে জামিনে বের হয়ে আসে। এরপর আবার এসব লোক প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে দিনের পর দিন মাদক ব্যবসা নির্বিঘ্নে চালিয়ে যায়। বড়বাবুরা সবসময় থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রশাসন দেখেও কিছুই করতে চাইছে না বা কিছুই করতে পারছে না। বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা দেখা গেছে বড় অংকের উৎকোচ এর বিনিময়ে এদেরকে স্ব-দর্পে ব্যবসা চালিয়ে যেতে প্রশাসন সহযোগিতা করছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকার দলীয় নেতাকর্মিরা ভাগ-বাটোয়ারা পায় বলে চুপ থাকে। অনেকেকে আবার নিজেরাই জড়িত বলে প্রায় সময় নিয়ন্ত্রণের মহড়া চলে। যারা প্রতিবাদ করতে আসে তাদেরকেই হামলা- মামলা দিয়ে থামিয়ে দেওয়া হয়। এসব রোধকল্পে কিছুদিন পরপর আইন পাশ হলেও দুঃখের বিষয় সে আইনের প্রয়োগ নেই। আর আইনের কেবল মাত্র প্রয়োগ হলেই চলবে না, চাই সামাজিক সচেতনতা। চাই নৈতিক শিক্ষা। রুচিশীল, মার্জিত বিনোদন ও নিজস্ব সংস্কৃতির চর্চাও করতে হবে। শুধু সার্টিফিকেট নির্ভর শিক্ষিত হলে চলবে না, আমাদের শিক্ষা হতে হবে আদর্শিক, বাস্তবসম্মত। ধর্মিয় ও নৈতিক শিক্ষার সমন্বয়ের পাশাপাশি দেশপ্রেমকে প্রাধান্য দিতে হবে। দেশকে ভালোবাসতে হবে। দেশের মানুষকে ভালবাসতে হবে। এবং আমাদের সবার মাঝেই জাতীয় মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে। নচেৎ জাতি কলঙ্কিত এ অধ্যায় থেকে মুক্তি পাবে না।

প্রিয় পাঠক, ভিন্নমতে প্রকাশিত লেখার বিষয়বস্তু, রচনারীতি ও ভাবনার দায় একান্ত লেখকের। এ বিষয়ে টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপার কোনোভাবে দায়বদ্ধ নয়। ধন্যবাদ।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর