গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার তীব্র নিন্দা মালয়েশিয়ার, আসিয়ানকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান

রবিবার মালয়েশিয়া গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি নৃশংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। দেশটি বলেছে, এই বর্বরতা ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্দশার প্রতি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের ‘উদাসীনতা ও দ্বৈত নীতির’ প্রতিফলন।

মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হাসান

সোমবার জোটের ৪৬তম শীর্ষ সম্মেলনের প্রাক্কালে কুয়ালালামপুরে শুরু হওয়া আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে উদ্বোধনী বক্তব্যে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হাসান বলেন, ‘এসব ঘটনা আন্তর্জাতিক আইনের পবিত্রতা ক্ষুণ্ণ হওয়ার সরাসরি ফল।’

মোহাম্মদ হাসানের এই মন্তব্য এমন সময়ে এলো যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ইসরায়েল চলতি মাসে তাদের অভিযান আরও জোরদার করেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে তেল আবিব এই অবরুদ্ধ ছিটমহলে হামলা শুরুর পর সেখানে প্রায় ৫৪,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

এই শীর্ষ কূটনীতিক বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে সংকট অব্যাহতভাবে চলছে। ইসরায়েলি বাহিনীর গাজা সম্পূর্ণ অবরোধ করে রাখায় সেখানে ব্যাপক ক্ষুধা ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।’

তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সংঘটিত এই নৃশংসতা ক্রমাগত ‘উদাসীনতা ও দ্বৈত নীত’  প্রমাণ করে চলেছে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আসিয়ান নীরব থাকতে পারে না। বিশ্ব পরিমণ্ডলে আমাদের একটি বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর রয়েছে, এবং নির্যাতিতদের পক্ষে কথা বলার জন্য আমাদের সেই কণ্ঠ ব্যবহার করতে হবে। একইসঙ্গে নীতিমালা ও আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে সমাধানের প্রস্তাব দিতে হবে।’

উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারিতে আসিয়ানের ১০ সদস্য রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ফিলিস্তিনিদের অধিকারের প্রতি তাদের ‘দীর্ঘদিনের সমর্থন’ পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন।

আলোচনাকালে, মোহাম্মদ হাসান মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধকবলিত পক্ষগুলোকে শত্রুতা বন্ধ, যুদ্ধবিরতি চুক্তি প্রসারিত ও সম্প্রসারিত করা, পুনরুদ্ধারের দীর্ঘ ও কঠিন পথ সুগম করা এবং তাদের দেশবাসীর দুর্ভোগ লাঘবের আহ্বান জানান। তিনি মিয়ানমারে গত মার্চের শেষদিকে হওয়া একটি ভয়াবহ ভূমিকম্পের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে প্রায় ৩,৮০০ মানুষ নিহত এবং ব্যাপক অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছিল।

মোহাম্মদ হাসান সতর্ক করে বলেন যে, ‘পরাশক্তিগুলোর প্রতিযোগিতা’ এবং এর ফলে বিশ্ব ব্যবস্থায় যে পরিবর্তন আসছে, তা আসিয়ান অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে ব্যাহত করার সমূহ সম্ভাবনা রাখে।

আসিয়ান দেশগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত (বর্তমানে স্থগিত) শুল্কের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী উৎপাদন ও বাণিজ্য কাঠামোকে ‘নাটকীয়ভাবে’ ব্যাহত করছে।

তিনি সতর্ক করে আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

জোটের সদস্য রাষ্ট্রগুলো ১০% থেকে ৪৯% পর্যন্ত মার্কিন শুল্কের শিকার হয়েছে। যদিও গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য এই শুল্ক স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন যার ফলে আসিয়ান দেশগুলো ওয়াশিংটনের সঙ্গে দ্রুত আলোচনা শুরু করে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের এই মুহূর্তটিকে কাজে লাগিয়ে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক একীকরণকে আরও গভীর করতে হবে, যাতে আমরা আমাদের অঞ্চলকে বাহ্যিক অভিঘাত থেকে আরও ভালোভাবে রক্ষা করতে পারি।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘এর পাশাপাশি, আমরা জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রযুক্তিগত বিপ্লবের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলা করছি। বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেকোনো সরকারের প্রতিক্রিয়ার চেয়ে দ্রুত বিকশিত হচ্ছে।’

আসিয়ান একটি আন্তর্জাতিক আন্তঃসরকারি সংস্থা, যার সদস্য দেশগুলো হলো ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস, ব্রুনাই, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া। মালয়েশিয়া ২০২৫ সালের জন্য আসিয়ানের পর্যায়ক্রমিক সভাপতিত্বের দায়িত্ব পেয়েছে।