সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং দায়িত্বশীলতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকার ‘সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করেছে। এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে চারটি সুনির্দিষ্ট অপরাধকে গুরুতর অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করে অভিযুক্তদের জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত বা অপসারণসহ কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশের আন্দোলনের মধ্যেই রোববার (২৫ মে) আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ থেকে এই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাদেশটি জারি করা হয়।

logo bangladesh govtবাংলাদেশ সরকারের লোগো

অধ্যাদেশে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’-এর অধিকতর সংশোধন প্রয়োজন হওয়ায় এবং সংসদ ভেঙে থাকার কারণে আশু ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি বলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি এই অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করেছেন। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।

অপরাধ ও দণ্ডের বিবরণ

‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’-এর ধারা ৩৭-এর পর নতুন ধারা সন্নিবেশ করে সরকারি কর্মচারীদের আচরণ ও দণ্ড সংক্রান্ত বিশেষ বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এই বিধান অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মচারী যদি নিম্নোক্ত চারটি কাজের যেকোনো একটিতে লিপ্ত হন, তবে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে:

১. অননুগত্য বা শৃঙ্খলা ভঙ্গ: এমন কোনো কাজ করা যা অনানুগত্যের শামিল, অন্য কর্মচারীর মধ্যে অননুগত্য সৃষ্টি করে, শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে বা কর্তব্য পালনে বাধা দেয়।
২. কর্মস্থলে অনুপস্থিতি বা দায়িত্বে গাফিলতি: যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া বা ছুটি ব্যতীত এককভাবে বা সম্মিলিতভাবে কর্মস্থল থেকে অনুপস্থিত থাকা, বিরত থাকা বা কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হওয়া।
৩. উসকানি বা প্ররোচনা: অন্য কোনো কর্মচারীকে তার কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকতে, বিরত থাকতে বা কর্তব্য পালন না করতে উসকানি দেওয়া বা প্ররোচিত করা।
৪. কর্তব্য পালনে বাধা: কোনো সরকারি কর্মচারীকে তার কর্মে উপস্থিত থেকে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করা।

উল্লিখিত যেকোনো অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত কর্মচারীকে যেসকল দণ্ড দেওয়া যেতে পারে, সেগুলো হলো:

  • নিম্নপদ বা নিম্নবেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ।
  • চাকরি থেকে অপসারণ।
  • চাকরি থেকে বরখাস্ত।

অভিযোগ ও শাস্তির প্রক্রিয়া

কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে উপরোক্ত অপরাধের জন্য অভিযোগ উঠলে, নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি অভিযোগ গঠন করবেন। অভিযুক্তকে কেন এই ধারার অধীনে দণ্ড দেওয়া হবে না, তা জানাতে সাত কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। নোটিশে ব্যক্তিগত শুনানির ইচ্ছার বিষয়েও জানতে চাওয়া হবে।

অভিযুক্তের জবাব ও ব্যক্তিগত শুনানি (যদি প্রযোজ্য হয়) বিবেচনার পর কর্তৃপক্ষ যদি তাকে দোষী সাব্যস্ত করে, অথবা নির্দিষ্ট সময়ে জবাব না দিলে, প্রস্তাবিত দণ্ড কেন আরোপ করা হবে না, সে বিষয়ে পুনরায় সাত কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। এরপর কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত দণ্ড আরোপ করতে পারবে। নোটিশ ব্যক্তিগতভাবে, সর্বশেষ জ্ঞাত ঠিকানায়, দুটি দৈনিক পত্রিকায় বা ই-মেইলে প্রেরণ করা হলে তা যথাযথভাবে জারি হয়েছে বলে গণ্য হবে।

আপিল ও পুনর্বিবেচনা

দণ্ডপ্রাপ্ত কর্মচারী আদেশের ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ধারা ৩৪ অনুযায়ী আপিল করতে পারবেন। আপিল কর্তৃপক্ষ আদেশ বহাল, বাতিল বা পরিবর্তন করতে পারবে। তবে, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রদত্ত আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে না; এক্ষেত্রে দণ্ডপ্রাপ্ত কর্মচারী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

খসড়া অনুমোদন ও প্রতিক্রিয়া

এই অধ্যাদেশের খসড়া গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদের ২৯তম বৈঠকে অনুমোদিত হয়, যেখানে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তবে, বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ এই অধ্যাদেশকে ‘কালো আইন’ হিসেবে অভিহিত করে এর অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.