কে হচ্ছেন আফ্রিকার পরবর্তী ‘সুপার ব্যাংকার’?

আফ্রিকার পরবর্তী ‘সুপার ব্যাংকার’ কে হবেন, সেই দৌড় বৃহস্পতিবার শেষ হচ্ছে। নাইজেরিয়ার আকিনউমি আদিসিনার উত্তরসূরি হিসেবে আফ্রিকান উন্নয়ন ব্যাংকের (এএফডিবি) প্রধান হওয়ার জন্য একজন নারীসহ পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা এতটাই তীব্র যে এর ফলাফল অনুমান করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

আফ্রিকান উন্নয়ন ব্যাংক

২০১৫ সালে আদিসিনাকে এএফডিবি-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে ছয় দফা ভোট গ্রহণ করতে হয়েছিল। ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংকটির বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৮১, যার মধ্যে ৫৪টি আফ্রিকান রাষ্ট্র।

আইভরি কোস্টের অর্থনৈতিক রাজধানী আবিদজানে অবস্থিত এএফডিবি বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক। এটি সদস্য দেশগুলোর চাঁদা, বিশ্ববাজার থেকে সংগৃহীত ঋণ এবং প্রদত্ত ঋণ থেকে ফেরত আসা অর্থ ও আয় দ্বারা পরিচালিত হয়।

তবে আদিসিনার উত্তরসূরিকে তাৎক্ষণিকভাবে একটি অস্থিতিশীল আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিবেশের মুখোমুখি হতে হবে, বিশেষ করে মার্কিন ট্রাম্প প্রশাসনের বিভিন্ন ঘোষণার কারণে। শুল্ক সংক্রান্ত উদ্বেগের পাশাপাশি, মহাদেশের নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে সহায়তার জন্য নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পে মার্কিন তহবিল থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার হারানোর ঝুঁকিতেও রয়েছে এএফডিবি।

পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে দুজন পশ্চিম আফ্রিকার – সেনেগালের সাবেক অর্থমন্ত্রী আমাদু হট এবং মৌরিতানিয়ার সিদি উলদ তাহ। অন্য দুজন দক্ষিণ আফ্রিকার – জাম্বিয়ার অর্থনীতিবিদ স্যামুয়েল মুনজেলে মাইম্বো এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বাজাবুলিলে সোয়াজি শ্যাবালালা, যিনি পূর্বে এই প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। মধ্য আফ্রিকা থেকে প্রতিনিধিত্ব করছেন চাদের আব্বাস মাহামত তোল্লি, যিনি ব্যাংক অব সেন্ট্রাল আফ্রিকান স্টেটস-এর সাবেক গভর্নর। উল্লেখ্য, মধ্য আফ্রিকা থেকে এর আগে কেউ এএফডিবি-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হননি।

পাঁচ অগ্রাধিকার

পাঁচজন প্রার্থীই আফ্রিকাকে রূপান্তরিত করতে এএফডিবি-কে আরও কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তারা বিদায়ী প্রেসিডেন্ট আদিসিনার পাঁচটি অগ্রাধিকার – আলোকিত করা, খাদ্য নিরাপত্তা, শিল্পায়ন, একীভূতকরণ এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন – অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছেন।

মঙ্গলবার এক ভাষণে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা আমার উত্তরসূরি, ব্যাংক এবং আফ্রিকার জন্য যে উত্তরাধিকার রেখে যাচ্ছি, তার জন্য আমি গর্বিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি বিশ্বমানের আর্থিক প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছি, যা দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক উন্নয়ন ও ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশে আফ্রিকার অবস্থানকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

আদিসিনা জানান, তার এক দশকের দায়িত্বকালে এএফডিবি-র বিভিন্ন প্রকল্প থেকে ৫৬ কোটি ৫০ লাখ মানুষ উপকৃত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে মিশরের গাবাল এল আসফার বর্জ্য পানি শোধনাগার নির্মাণে সহায়তা, যা আফ্রিকার বৃহত্তম। ব্যাংকটি সেনেগাল ও গাম্বিয়াকে সংযোগকারী একটি সেতু নির্মাণে অর্থায়ন করেছে, টোগোর লোমে বন্দরের সম্প্রসারণ করেছে এবং লেসোথোতে স্যানিটেশন প্রকল্প ও কেনিয়ায় বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিতে সহায়তা করেছে বলে তিনি জানান।

২০১৫ থেকে চলতি বছর পর্যন্ত ব্যাংকের মূলধন ৯৩ বিলিয়ন ডলার থেকে তিনগুণেরও বেশি বেড়ে ৩১৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যোগ করেন তিনি।

নির্বাচনের নিয়ম

বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে জয়ী হতে হলে প্রার্থীদের সব সদস্য রাষ্ট্র এবং আফ্রিকান দেশগুলোর সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেতে হবে। তবে প্রতিটি শেয়ারহোল্ডার রাষ্ট্রের ভোটের গুরুত্ব ব্যাংকে তাদের মূলধন অবদানের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে। সে অনুযায়ী, আফ্রিকার পাঁচটি বৃহত্তম অবদানকারী দেশ – নাইজেরিয়া, মিশর, আলজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং মরক্কো – বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অ-আঞ্চলিক অবদানকারীদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান বৃহত্তম।

প্রথম দফায় কোনো প্রার্থী জয়ী না হলে, সবচেয়ে কম ভোট পাওয়া প্রার্থী বাদ পড়বেন। প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়া পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলতে থাকবে। তাই বৃহস্পতিবার আবিদজানের হোটেল আইভরি-র করিডোরে জোট গঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।