ইপিএ চুক্তির পথে বাংলাদেশ ও জাপান: অর্থনৈতিক সহযোগিতার নতুন দিগন্ত
- Details
- by ২৪ ডেস্ক
বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ককে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার টোকিওতে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা ঘোষণা করেন যে, উভয় দেশ আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই একটি অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) স্বাক্ষর করবে। এই চুক্তি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের দ্বার উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা
কৌশলগত অংশীদারিত্ব ও জাপানের সমর্থন: বৈঠকে উভয় নেতা দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সামগ্রিক দিক পর্যালোচনা করেন এবং কৌশলগত অংশীদারিত্বের প্রতি তাদের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা বাংলাদেশকে ‘দীর্ঘদিনের বন্ধু’ হিসেবে উল্লেখ করে দেশটির গণতান্ত্রিক উত্তরণ প্রক্রিয়ায় জাপানের অব্যাহত সমর্থনের কথা জানান। তিনি অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা প্রকাশ করে বলেন, তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি নতুন যুগে প্রবেশ করবে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথাও তুলে ধরেন জাপানি প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশের কৃতজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস গত দশ মাসে দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি, শূন্য রাজকোষ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিপর্যয়ের কঠিন সময়ে জাপানের অবিচল সমর্থনের জন্য প্রধানমন্ত্রী ইশিবার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কারমূলক উদ্যোগে জাপানের সমর্থন আমাদের কাম্য। আমরা আমাদের সকল প্রচেষ্টায় জাপানের সক্রিয় সহায়তা ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।’
অধ্যাপক ইউনূস একটি মুক্ত, উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যৌথ সমৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের অঙ্গীকারের কথা পুনরায় উল্লেখ করেন। সামুদ্রিক নিরাপত্তা, অবাধ চলাচল, সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার, কানেক্টিভিটি বৃদ্ধি এবং আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনে জাপানের সাথে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে বাংলাদেশের প্রস্তুতির কথাও জানান তিনি।
অবকাঠামো উন্নয়ন ও বাণিজ্য সুবিধা প্রার্থনা: আলোচনাকালে অধ্যাপক ইউনূস মাতারবাড়িতে একটি ভূমিভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল এবং মহেশখালীতে একটি আমদানিনির্ভর এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণে জাপানের সহায়তা চান। পাশাপাশি, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর পরবর্তী তিন বছরের জন্য বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার অব্যাহত রাখতে জাপানের সমর্থন কামনা করেন তিনি।
এছাড়াও, ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ককে ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়েতে উন্নীতকরণ, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের উন্নয়ন এবং মেঘনা-গোমতী নদীর ওপর একটি নতুন চার লেনের সেতু নির্মাণের জন্য সহজ শর্তে ঋণ (সফট লোন) প্রদানের আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।
বিনিয়োগ ও দক্ষ জনশক্তি প্রসঙ্গে: অধ্যাপক ইউনূস জাপানি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশে অটোমোবাইল, বৈদ্যুতিক যান, হালকা যন্ত্রপাতি, উচ্চ প্রযুক্তির ইলেকট্রনিকস এবং সৌরশক্তি খাতে বিনিয়োগ করে শিল্প মূল্য শৃঙ্খলে সংযুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি জাপানের শ্রম সংকট মোকাবেলায় এবং বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মীর কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশ-জাপান দক্ষ শ্রমিক অংশীদারত্ব কর্মসূচি চালুর অনুরোধ করেন।
এছাড়াও, বাংলাদেশের শিক্ষার্থী এবং কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষা প্রশিক্ষকদের জন্য জাপানে পড়াশোনার সুযোগ বৃদ্ধির ওপরও জোর দেন তিনি।
রোহিঙ্গা সংকট ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা: দুই নেতা আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। অধ্যাপক ইউনূস জানান, তার সরকার ‘প্রতিবেশীদের সঙ্গে সর্বোত্তম সম্পর্ক’ বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে জাপানের প্রচেষ্টা আরও জোরদার করার আহ্বান জানান। অন্যদিকে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইশিবা বাংলাদেশকে তার বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রচেষ্টায় টোকিওর পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ ও ভবিষ্যৎ সফর: প্রধানমন্ত্রী ইশিবা ৩৮ বছর আগে জাপানের সহায়তায় নির্মিত যমুনা বহুমুখী সেতুর উদ্বোধনের সময় তার বাংলাদেশ সফরের কথা স্মরণ করেন। তিনি অধ্যাপক ইউনূস এবং তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য দূরীকরণে অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘জাপানের জনগণ আপনার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা পোষণ করে।’
সবশেষে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আগ্রহ প্রকাশ করেন।
সূত্র: বাসস
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.