উপদেষ্টা: দুর্নীতির দায়ে ফারুককে অপসারণ করা হয়নি

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতির পদ থেকে ফারুক আহমেদকে দুর্নীতির অভিযোগে অপসারণ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি উল্লেখ করেন, ক্রিকেট দলের ক্রমাগত খারাপ পারফরম্যান্স এবং বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারণেই এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।

ফারুক আহমেদ এবং আসিফ মাহমুদ

শনিবার জাতীয় হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্রীড়া উপদেষ্টা। অনুষ্ঠান শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বিসিবির শীর্ষ পদে এই পরিবর্তনের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন।

আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের দুই সপ্তাহের মধ্যেই ফারুক আহমেদকে বিসিবি সভাপতি পদে মনোনীত করেছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। তবে প্রায় ৯ মাস পর সেই সরকারই তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয়। ফারুক আহমেদের স্থলে আরেক সাবেক ক্রিকেটার আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে এনএসসির পরিচালক পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়। শুক্রবার বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের সভায় বুলবুলকে নতুন সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।

কোনো প্রকার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে ফারুক আহমেদকে কেন সরিয়ে দেওয়া হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা আসলে শাস্তি বা অন্য কিছু নয়। নতুন নেতৃত্ব আসার পর আমাদের যে প্রত্যাশা ছিল, ৯ মাসে আমরা সেটা দেখিনি।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘এই সরকার আসার পর পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এরপর থেকে আমরা ক্রমাবনতি দেখতে পাচ্ছি। দুঃখজনকভাবে আমাদের নতুন নেতৃত্ব পারফরম্যান্স দেখাতে পারেনি।’

উপদেষ্টা জানান, তিনি নিজে ক্রীড়া বিশেষজ্ঞ না হলেও বিভিন্ন ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই ফারুক আহমেদকে মনোনয়নের জন্য সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু সেই নেতৃত্ব প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

বিপিএল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিপিএলের সত্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে অনেক অনিয়ম ও দায়িত্ব অবহেলার চিত্র উঠে এসেছে, যেখানে ফারুক আহমেদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, বিসিবির ৯ জন পরিচালকের মধ্যে ৮ জনই তৎকালীন সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে পাঠিয়েছিলেন। তার মতে, বোর্ডে একটি ঐক্যবদ্ধ টিম হিসেবে কাজ করার পরিবেশ ছিল না, যা ক্রিকেটের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করছিল।

ফারুক আহমেদকে অপসারণের আগে তার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছেন বলেও জানান ক্রীড়া উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘ফারুক ভাইয়ের সঙ্গে আমি কথা বলেছি যে, এটা এমন না যে কোনো দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই পরিবর্তন পুরোপুরি পারফরম্যান্সনির্ভর। সিলেকশন বোর্ড যেমন একজন খেলোয়াড় নিয়মিত খারাপ করলে তাকে দলে রাখে না, আমাদের দিক থেকেও ব্যাপারটা সেরকমই ছিল।’

বিপিএলে ‘দুর্বার রাজশাহী’ দলের মালিকানা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার কথাও তুলে ধরেন উপদেষ্টা। তিনি জানান, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশের পরও ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে সেই টিমটিকে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে খেলোয়াড়দের বেতন নিয়ে সরকারকে পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে হয়, যা অত্যন্ত বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করে। এই কারণে বিপিএলের ফাইনাল ম্যাচে সরকার প্রধানের উপস্থিতিও নিশ্চিত করা যায়নি, যা বোর্ডের জন্য লজ্জাজনক ছিল বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ক্রীড়াঙ্গনে এভাবে কাউকে সরিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ না থাকার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনাকে দেখতে হবে পদ্ধতিটা কী? জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের দুজনকে মনোনয়ন দেওয়ার এবং মনোনয়ন বাতিল করার এখতিয়ার আছে। আমরা মনোনয়ন দিয়েছিলাম, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এখন আর প্রয়োজন মনে করছি না। আমরা সভাপতিকে অপসারণ করিনি, বরং এনএসসি থেকে তার পরিচালক মনোনয়ন সরিয়ে নিয়েছি। নতুন একজনকে পরিচালক মনোনয়ন দেওয়ার পর বোর্ডের সদস্যরা আইসিসির গাইডলাইন ও বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুসারে নতুন সভাপতি নির্বাচিত করেছেন।’