ঐতিহাসিক ট্রেবল: ইউরোপের নতুন রাজা পিএসজি

মিউনিখের ফাইনাল। এ নিয়ে কত জল্পনা ছিল। জমজমাট একটা লড়াইয়ের অপেক্ষা ছিল। কিন্তু কিসের কী! ফাইনালটাকে বড্ড একপেশে বানিয়ে ফেলল প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি)। শনিবার রাতে ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলে চূর্ণ করে প্যারিসিয়ানরা গড়ল ইতিহাস। জিতল ঐতিহাসিক ট্রেবল। এর আগে ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান ও ফ্রেঞ্চ কাপের চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল পিএসজি।

২৩তম ক্লাব হিসেবে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জিতল প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি)। ছবি: এক্স

এই জয়ের মধ্য দিয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ পেল নতুন চ্যাম্পিয়ন দলকে। আগামী এক বছর অবধি ইউরোপের নতুন রাজা পিএসজি। ফ্রান্সের দ্বিতীয় ক্লাব হিসেবে এই ট্রফি জিতল তারা। এই শিরোপাটাই পাঁচ বছর আগে হাতছোঁয়া দূরত্বে রেখে এসেছিল পিএসজি। সেবার ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ১-০ গোলে হেরে যায় তারা। এবার সেই মিউনিখবাসীর ঘরেই উৎসব করল পিএসজি।

ফরাসি ক্লাবের প্রথমবার ইউরোপের রুপালি ট্রফি জয়ের নেপথ্য নায়ক লুইস এনরিকে। স্প্যানিশ এই কোচ ক্লাবের মানসিকতটাই বদলে দিয়েছেন। পিএসজিকে মৌসুমজুড়ে একটা দল হিসেবে খেলিয়েছেন। যার সুফল হিসেবে কোচিং ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো ত্রিমুকুট জিতলেন এনরিকে। এর আগে বার্সেলোনার হয়ে এক মৌসুমে তিনটি মৌলিক ট্রফির স্বাদ পেয়েছিলেন এনরিকে।

এবার ফরাসি ক্লাবটিকেও সেই স্বাদ পাইয়ে দিলেন তিনি। অথচ এই একটা ট্রফির জন্য গত কয়েক বছরে পিএসজি প্রশাসন কিনা করেছিল। কাড়ি কাড়ি অর্থ ঢেলেছে। রোনালদিনহো, জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ, এডিনসন কাভানি, কিলিয়ান এমবাপ্পে, নেইমার জুনিয়র, লিওনেল মেসির মতো তারকাদের দলে টেনেছিল তারা। কিন্তু তারা কেউ এনে দিতে পারেননি স্বপ্নের সাফল্য।

অবশেষে পিএসজির স্বপ্নপূরণ হলো। তারকাঠাসা কোনো দল নয়, প্রায় সাদামাটা একটা দল নিয়েই বাজিমাত করেছে পিএসজি। দলটিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার মার্কুইনহস। তার অধিনায়কত্বে পুরো মৌসুমে সবচেয়ে ধারাবাহিক পারফর্ম করেছে দল। মিউনিখের ফাইনালে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে তো সবকুটু নিংড়ে দিয়েছে প্যারিসিয়ানরা। প্রথমার্ধেই ম্যাচের ভাগ্য নিজেদের হাতের মুঠোয় নিয়ে আসে তারা। বিশেষ করে ম্যাচের কুড়ি মিনিটের মধ্যে।

১২ মিনিটে ইন্টার মিলানের জালে বল জড়ান ডি-বক্সে ওঁৎ পেতে থাকা পিএসজি ডিফেন্ডার আশরাফ হাকিমি। কিন্তু গোলের পর কোনো উদযাপন করেননি তিনি। সাবেক ক্লাবের প্রতি সম্মান জানাতেই নিজেকে উদযাপন থেকে বিরত থাকেন মরক্কান সেনসেশন। গোলের পর মাটিতে সেজদাহ দিয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন হাকিমি।

আট মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ডেজির ডৌ ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। ৬৩ মিনিটে তার ডাবলস। পিএসজি তখন ৩-০ গোলের লিড! ফাইনালটা শেষ হয়ে গেছে ওখানেই। কিন্তু ট্রফি সুবাস পেলেও পিএসজির গোল খুদা কমেনি। ৭৩ মিনিটে চতুর্থ গোল করে তারা। স্কোরার শিটে নাম লেখান কিভিচা কারাতসকেইলা। ৮৬ মিনিটে তিনবারের চ্যাম্পিয়ন ইন্টার মিলানের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন সেনি মাইয়ুুলু।

অবস্থা এমন যে, শেষ বাঁশি বাজলেই যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচে ইতালিয়ান ক্লাবটি। পিএসজির সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে কি নাজেহালটাই না হতে হলো ইন্টার মিলানকে। এই হারে লজ্জার এক ইতিহাসও গড়ল তারা। প্রথমবার কোনো দল ফাইনালে হারল পাঁচ গোলের ব্যবধানে। এর আগে সর্বোচ্চ চার গোলের ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড ছিল এসি মিলানের।

সেটিও একবার নয় দুবার। এই জয়ে এসি মিলানের রেকর্ড ভেঙে ফেলল পিএসজি। ২৩তম দল হিসেবে ইউরোপ সেরার মুকুট জিতল তারা। দ্বিতীয় ফাইনালেই দুঃখ ঘোচাল তারা। অন্যদিকে চতুর্থবার ফাইনাল হারল ইন্টার মিলান। ফাইনালে তাদের মতো চারবার করে হেরেছে এসি মিলান ও লিভারপুল। সর্বোচ্চ সাতবার ফাইনাল হারের রেকর্ড ইতালির আরেক ক্লাব জুভেন্টাসের। এ ছাড়া বায়ার্ন মিউনিখের পাঁচবার ফাইনাল হারের অভিজ্ঞতা আছে।