ইউরেনিয়াম সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান ইরানের, অভিযোগ ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
শনিবার (৩১ মে) ইরান জাতিসংঘের পরমাণু নিয়ন্ত্রক সংস্থা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল যে, তেহরান গত তিন মাসে তার ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছে। ইরান এই অভিযোগকে ‘রাজনৈতিকভাবে প্রণোদিত ও ভিত্তিহীন’ বলে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। খবর আল জাজিরার।
আইএইএ ও ইরানের পতাকা
আইএইএ তাদের এক গোপন প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, গত তিন মাসে ইরান তার ৬০ শতাংশ মাত্রায় পরিশোধিত ইউরেনিয়ামের মজুদ প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে দেশটির অগ্রসর হওয়ার ইঙ্গিত বহন করে। সংস্থাটি জানায়, ১৭ মে পর্যন্ত ইরানের কাছে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ ৪০৮.৬ কেজি ইউরেনিয়াম মজুদ ছিল, যা গত ফেব্রুয়ারির মজুদের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পরমাণু অস্ত্র না থাকা সত্ত্বেও ইরানই একমাত্র রাষ্ট্র, যেটি এত উচ্চ হারে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে। এছাড়া, আইএইএ-কে না জানিয়ে তিনটি স্থানে গোপনে পারমাণবিক কার্যক্রম চালানোর অভিযোগও তুলেছে সংস্থাটি।
তবে তেহরান জানিয়েছে, আইএইএ’র এই অভিযোগ বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাদের দাবি, ইসরায়েলের সরবরাহ করা ‘জাল নথির’ ওপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
শনিবার ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, আইএইএ যেসব ‘অঘোষিত পরমাণু স্থাপনা’ এবং ‘গোপন কার্যক্রম’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, সেসব বিষয়ে ইরান আগেই প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করেছে এবং পরিদর্শনের অনুমতি দিয়েছে। তারা এই প্রতিবেদনটিকে সংস্থার ওপর ‘রাজনৈতিক চাপের ফল’ হিসেবে দেখছে।
এই ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটল, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পরমাণু চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি জানিয়েছেন, ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাদর আল-বুসাইদি শনিবার তেহরানে এক সংক্ষিপ্ত সফরে এসেছিলেন এবং মার্কিন প্রস্তাবের কিছু অংশ তুলে ধরেছিলেন। তেহরান এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে এবং জানিয়েছে, ইরান দেশের স্বার্থ ও অধিকার অক্ষুণ্ণ রেখে এর জবাব দেবে।
ইরানের প্রধান পরমাণু আলোচক এবং উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ইরান সবসময় পারমাণবিক অস্ত্রকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ হিসেবে বিবেচনা করে। পরমাণু অস্ত্র সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে আমরা বলি, এটি আমাদের কাছেও গ্রহণযোগ্য নয়।’
তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক হামেদ মোসাভি আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষই আলোচনার টেবিলে নিজেদের সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি করতে চাপ প্রয়োগের কৌশল অবলম্বন করছে। ইরান এই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকে ‘দর কষাকষির হাতিয়ার’ হিসেবে ব্যবহার করছে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রকে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে বাধ্য করা যায়। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শক্তিগুলো এই প্রতিবেদনকে ব্যবহার করে ইরানকে পরমাণু চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ফেলার চেষ্টা করছে।’
এ প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার (৩০ মে) মন্তব্য করেন, ‘ইরান পরমাণু অস্ত্র পাবে না। তারা চায় না তাদের ওপর বোমা বর্ষণ হোক। তাই তারা চুক্তিই পছন্দ করবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ইরান ও বিশ্বের ছয়টি ক্ষমতাধর দেশ ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন’ (জেসিপিওএ) নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। ওই চুক্তির আওতায় তেহরান তার পরমাণু কর্মসূচির ওপর বিধিনিষেধ আরোপের বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা থেকে কিছুটা মুক্তি পেয়েছিল। তবে ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফাভাবে এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন এবং ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেন। এরপর থেকে ইরানও তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধির মাত্রা বাড়াতে শুরু করে।
পশ্চিমা দেশগুলোর দাবি, এত উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কিন্তু ইরান বারবার জোর দিয়ে বলেছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যেই পরিচালিত হচ্ছে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.