ফুটবল জোয়ার: বাংলাদেশকে বাস্তবতা বোঝাল সিঙ্গাপুর

স্বপ্ন দেখিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্বপ্নপূরণ হয়নি। বরং বাংলাদেশকে বাস্তবতা বোঝাল সিঙ্গাপুর। আজ মঙ্গলবার রাতে ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে সিঙ্গাপুরের কাছে ২-১ গোলে হেরে গেছেন হামজা-সোমরা। ২০২৬ এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে এটাই প্রথম হার বাংলাদেশের। আগের ম্যাচে ভারতের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছিল হ্যাভিয়ের কাবরেরার দল। আগামী বছর সৌদি আরবে আয়োজন করা হবে টুর্নামেন্ট।

সিঙ্গাপুরে সঙ্গে তিনবারের দেখায় দুইবারই হারল বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। ছবি: বাফুফে

সিঙ্গারপুরের কাছে তৃতীয়বারের দেখায় দ্বিতীয়বার হারল বাংলাদেশ। অন্য ম্যাচটায় ড্র করেছিল। এবার জয়ের আশায় ছিল দল। কিন্তু দুই অর্ধের দুই গোল হজমের পর ধূসর হয়ে যায় বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্ন। সিঙ্গাপুরের হয়ে গোল করেন সং ইয়ং এবং আকসা ফান্ডি। পরে একটি গোলের শোধ দেয় বাংলাদেশ। গোল করেন রাকিবুল হাসান।

এই ম্যাচ ঘিরে এতটাই উত্তেজনা ছিল, হামজাদের খেলা দেখতে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সারওয়ার ফারুকী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান মাঠে উপস্থিত হয়েছিলেন। ফুটবল উম্মাদনায় শামিল হতে জাতীয় স্টেডিয়ামে আসেন বিসিবির সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ, সাবেক ক্রিকেটার তামিম ইকবাল, ক্রিকেটার নাঈম ইসলাম, জিসান আলম এবং অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার। রুপালি পর্দার অনেক তারকা অভিনেতা- অভিনেত্রীরাও উপস্থিত হয়েছিলেন গ্যালারিতে।

ফিফার নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক ফুটলার একজন করে শিশুকে নিয়ে মাঠে প্রবেশ করেন ভবিষ্যত প্রজন্মকে ফুটবলের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে। আজ বাংলাদেশ অধিনায়ক তপু বর্মন ‘তামিম নিখোঁজ’ প্ল্যাকার্ড হাতে মাঠে নামেন। রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা সপ্তম শ্রেণির ছাত্র আবদুল্লাহ ওরফে তামিম গত ২০ মে নিখোঁজ হয়। ১৪ বছর বয়সী তামিম ক্রিকেটার রুবেল হোসেনের ভাতিজা। তামিমের নিখোঁজের খবর ছুঁয়ে গেছে বাংলাদেশ দলকেও। সিঙ্গাপুর ম্যাচের আগে তাই তামিমের ছবি নিয়ে মাঠে এসেছিল স্বাগতিক দল।

এই ম্যাচ দিয়ে লাল-সবুজের জার্সিতে অভিষেক হল সামিত সোমের। কানাডাপ্রবাসী এই মিডফিল্ডার শুরুর একাদশে থাকলেও জায়গা হারিয়েছেন নিয়মিত অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। এর আগে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষেও বেঞ্চে বসেই কাটাতে হয়েছে জামালকে। তবে জামাল না থাকলেও লাল সবুজের মিডফিল্ড ছিল দুর্দান্ত। মাঝমাঠে মূল আকর্ষণ ছিলেন হামজা চৌধুরী। তার সঙ্গে আরেক ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার মো. হৃদয়। সামিত সোম ও কাজেম শাহ ছিলেন আক্রমণভাগে।

বাংলাদেশের প্রধান কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরা রাকিব ও ফাহামিদুলের ওপর আস্থা রাখেন প্রথম একাদশে। গত ৪ জুন ভুটানের বিপক্ষে খেলা একাদশ থেকে তিন জন পরিবর্তন করেন স্প্যানিশ কোচ। সেই ম্যাচে ডিফেন্ডার তাজ উদ্দিন এবং দুই মিডফিল্ডার জামাল ভূঁইয়া ও সোহেল রানা ছিলেন না এই ম্যাচে। তারে পরিবর্তে জায়গা পান ডিফেন্ডার শাকিল আহাদ তপু ও দুই মিডফিল্ডার সামিত সোম ও হৃদয়।

ম্যাচের শুরু থেকেই সিঙ্গাপুরের চোখে চোখ রেখে লড়েছেন হামজারা। সুযোগ আসে ম্যাচের ১৫ মিনিটেই। ডান প্রান্ত দিয়ে শাকিল তপুর ক্রস। শমিত সোম ও রাকিব হোসেন বক্সের কাছে থাকলেও বলের নাগাল পাননি। তাই সিঙ্গাপুরের রক্ষণবাগের পা ছুঁয়ে বল চলে যায় সিঙ্গাপুরের গোলকিপার ইজওয়ান মাহবুতের হাতে। ৩০ মিনিটে সিঙ্গাপুরের একটি জোড়ালো আক্রমণ রুখে দেন বাংলাদেশের গোলকিপার মিতুল মারমাও। প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে সং ইয়ংয়ের শট। বল গোললাইন অতিক্রম করে। কিন্তু শেষ প্রচেষ্টা হিসাবে বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হন হামজা। পায়ে লেগে জালে জড়ায় (১-০)।

বিরতির সময় ফ্লাডলাইটের আলো নিভে যায়। দর্শকরা মুঠোফোনের আলো জ্বেলে দেন। নয়নাভিরাম এক দৃশ্যের অবতারণ হয় জাতীয় স্টেডিয়ামে। পরক্ষণেই লেজার শো মাতিয়ে তোলে স্টেডিয়ামে আসা প্রায় ২৮ হাজার দর্শককে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে ব্যবধান দ্বিগুন করে সিঙ্গাপুর। ৫৮ মিনিটে ফিরতি বলে ডান প্রান্ত দিয়ে কোনাকুনি শটে ইকসান আহমাদ গোল করেন।

গোল শোধের আশায় ফাহামিদুল ইসলামকে উঠিয়ে নেন কোচ কাবরেরা। মাঠে নামেন ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। প্রত্যাশার ৬৭ মিনিটে হামজার লং পাসের বল ধরে এগিয়ে যান রাকিব হোসেন। তার শটে বল গোলকিপারের হাত ফসকে গড়িয়ে জালে প্রবেশ করে (১-২)। মুহূর্তেই গর্জে ওঠে গ্যালারি। জেগে ওঠেন ফুটবলাররাও।

ম্যাচের অন্তিম সময়ে হামজার দুর্দান্ত এক শট বারের পাশ ঘেঁষে চলে যায়। হতাশায় ভেঙ্গে পড়েন দর্শকরা। শেষ বাশি বাজার আগে কর্নার থেকে তারিক কাজির হেড লাফিয়ে উঠলে বাইরে ঠেলে দেন সিঙ্গাপুর গোলকিপার ইজওয়ান মাহবুত। তাতেই নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের হার।