ইরানে ইসরায়েলের নজিরবিহীন হামলা: আইআরজিসি প্রধান ও দুই পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত

মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ইরানের রাজধানী তেহরানসহ একাধিক স্থানে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ভয়াবহ বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এই নজিরবিহীন হামলায় ইরানের অভিজাত বিপ্লবী গার্ডের (আইআরজিসি) প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামিসহ দেশটির শীর্ষ দুই পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের বরাতে রয়টার্স ও আরব নিউজ এ খবর নিশ্চিত করেছে।

আইআরজিসি প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি

ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম শুক্রবার ভোরে এক প্রতিবেদনে জানায়, তেহরানে আইআরজিসি সদরদপ্তরে চালানো হামলায় জেনারেল হোসেইন সালামি নিহত হন। ২০১৯ সাল থেকে তিনি বিপ্লবী গার্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন এবং তাকে ইরানের পরমাণু ও সামরিক নীতির অন্যতম রূপকার হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এ হামলায় নিহত দুই পরমাণু বিজ্ঞানী হলেন ফেরেইদুন আব্বাসি-দাভানি ও মোহাম্মদ মেহদি তেহরানচি। তাঁরা উভয়েই ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করছিলেন।

হামলার লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে নাতাঞ্জে অবস্থিত ইরানের প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রও ছিল বলে জানা গেছে। তেহরান থেকে প্রায় ২২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এই পারমাণবিক স্থাপনায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া তেহরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলসহ একাধিক এলাকাতেও ব্যাপক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে শিশুদের মরদেহ উদ্ধারের মতো মর্মান্তিক খবরও জানিয়েছে।

এই হামলার দায় স্বীকার করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক ভিডিওবার্তায় বলেছেন, "ইরানের যেসব বিজ্ঞানী পারমাণবিক বোমা তৈরিতে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের লক্ষ্য করেই এই হামলা চালানো হয়েছে। যতদিন প্রয়োজন, ততদিন এই অভিযান চলবে। আমরা আমাদের অস্তিত্বের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে রয়েছি।"

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এই হামলাকে ‘পূর্বপ্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, "ইরান থেকে বড় আকারে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার আশঙ্কা থাকায় এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।" বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সূত্রমতে, ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এই অভিযানের পাশাপাশি ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল করতে একাধিক নাশকতাও চালিয়েছে।

এদিকে, হামলার পর ইসরায়েলজুড়ে বিশেষ জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। তেল আবিবের বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে।

জেনারেল সালামি ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের মৃত্যুর ঘটনায় ইরানের সামরিক বাহিনী ও বিপ্লবী গার্ড কঠোর প্রতিশোধ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যকে একটি বড় আকারের যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে, যেখানে বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোও জড়িয়ে পড়তে পারে।