লন্ডন বৈঠকের কড়া সমালোচনা করল জাতীয় নাগরিক পার্টি

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে লন্ডনে অনুষ্ঠিত বৈঠককে ‘গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী’ বলে কঠোর সমালোচনা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির মতে, এই ধরনের বৈঠক দেশবাসীর সঙ্গে প্রতারণা এবং শহীদদের রক্তের প্রতি অবমাননা।

নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী

শুক্রবার (১৩ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “বিদেশের মাটিতে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের এই আলোচনা দেশবাসীর স্বার্থের সঙ্গে প্রতারণা এবং গণআকাঙ্ক্ষাকে অবমাননার শামিল। দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে দেশের মাটিতে, জনগণের দ্বারা; কোনো বিদেশি আলোচনার মাধ্যমে নয়।”

নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যদি সংস্কার, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং নতুন সংবিধান প্রণয়নের প্রক্রিয়া শুরু করতে ব্যর্থ হয়, তবে এনসিপি দ্বিতীয় গণঅভ্যুত্থানের ডাক দিতে বাধ্য হবে। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, “জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে না পারলে আমরা কোনো নির্বাচনেও অংশ নেব না।”

তিনি আরও বলেন, “শুধু রাজা বা রানী বদল নয়, প্রয়োজন কাঠামোগত পরিবর্তন।” ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পর যে সামাজিক চুক্তি হয়েছিল, তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় তিনি হতাশা প্রকাশ করেন এবং দেশের জন্য একটি নতুন ‘জাতীয় বন্দোবস্ত’ তৈরির আহ্বান জানান, যা কোনো একক দলের স্বার্থে নয়, বরং জনগণের ইচ্ছায় হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে যান, তাদের কষ্ট ও আকাঙ্ক্ষা বুঝুন। শহীদদের আত্মত্যাগ এবং আহতদের বেদনাকে মূল্যায়ন করলেই সংস্কার ও বিচারের পথ খুলবে।”

বিএনপির ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, দলটি কেবল ক্ষমতার লোভে আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে। তারা নির্বাচনের তারিখ নিয়ে কথা বললেও জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র, বিচারব্যবস্থা সংস্কার বা নতুন সংবিধান প্রণয়নের মতো মৌলিক বিষয়ে নীরব। এটি প্রমাণ করে, তারা গণআকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করে না।

নির্বাচন কমিশন নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এনসিপির এই নেতা। তিনি বলেন, “বর্তমান নির্বাচন কমিশন জনগণের আস্থা হারিয়েছে এবং একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক শক্তির হয়ে কাজ করছে।” তার মতে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন এবং জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া শুধু নির্বাচন আয়োজন করলে গণতান্ত্রিক উত্তরণ সম্ভব নয়।