ইরান আক্রমণের উদ্দেশ্য তাহলে ‘ক্ষমতারও পরিবর্তন’!
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইরানে ইসরায়েলের আকস্মিক হামলার আপাত লক্ষ্য তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করা এবং পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করা। তবে হামলার ব্যাপকতা, লক্ষ্যবস্তু নির্বাচন এবং ইসরায়েলি রাজনীতিবিদদের বক্তব্য থেকে একটি দীর্ঘমেয়াদী উচ্চাকাঙ্ক্ষার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে—আর তা হলো ইরানের বর্তমান শাসনব্যবস্থার পতন ঘটানো।
ছবি - সংগৃহীত
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘যে ইসলামিক শাসনব্যবস্থা আপনাদের প্রায় ৫০ বছর ধরে দমন করে রেখেছে, তা আমাদের দেশ ইসরায়েলকে ধ্বংস করার হুমকি দিচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের উদ্দেশ্য হলো পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি দূর করা। তবে এর পাশাপাশি, আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যমে আপনাদের স্বাধীনতা অর্জনের পথও পরিষ্কার করে দিচ্ছি।’
নেতানিয়াহু বলেন, ‘তারা জানে না তাদের ওপর কী আঘাত হেনেছে বা ভবিষ্যতে কী আঘাত হানবে। তারা এর আগে কখনো এতটা দুর্বল ছিল না। আপনাদের সামনে সুযোগ এসেছে রুখে দাঁড়ানোর এবং নিজেদের কণ্ঠ সোচ্চার করার।’
তবে নজিরবিহীন এই ইসরায়েলি হামলায় ব্যাপক ক্ষতি সত্ত্বেও, ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের কয়েক দশকের পুরোনো শত্রুতা রয়ে গেছে। এই শত্রুতা শুধু ইরানের শাসকদের মধ্যেই নয়, বরং শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মধ্যেও বিদ্যমান। তাই অনুগত নিরাপত্তা বাহিনীর সমর্থনে টিকে থাকা তেহরানের প্রতিষ্ঠিত ধর্মীয় নেতৃত্বকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য যথেষ্ট জনসমর্থন আদায় করা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
বিশ্লেষক সিং সতর্ক করে বলেছেন, ইরানে বিরোধী দলগুলোকে একত্রিত করার জন্য কী ধরনের পরিস্থিতি প্রয়োজন, তা কেউই জানে না।
ইসরায়েল জানিয়েছে, শুক্রবারের এই হামলাটি ছিল একটি দীর্ঘমেয়াদী অভিযানের প্রথম ধাপ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তেহরানের পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করতে ইসরায়েল ইরানের প্রধান পারমাণবিক অবকাঠামোগুলোতে হামলা অব্যাহত রাখবে, যদিও একা ইসরায়েলের পক্ষে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি ধ্বংস করার ক্ষমতা নেই।
ইরান বরাবরই দাবি করে আসছে যে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত। তবে জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা এই সপ্তাহে জানিয়েছে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্রবিস্তার রোধ চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।
ইসরায়েলের প্রথম দফার হামলায় ইরানের সামরিক ও বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়। এছাড়া, দেশের বেশিরভাগ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং পারমাণবিক স্থাপনার মাটির উপরের সমৃদ্ধকরণ প্ল্যান্ট ধ্বংস করা হয়েছে।
ওয়াশিংটনে অবস্থিত ইসরায়েলি দূতাবাস রয়টার্সকে জানিয়েছে, ‘একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ইসরায়েল বিশ্বাস করে যে, একটি দেশের জনগণই তাদের জাতীয় রাজনীতি নির্ধারণ করবে এবং নিজেদের সরকার নির্বাচন করবে। ইরানের ভবিষ্যৎ কেবল ইরানের জনগণই নির্ধারণ করতে পারে।’
অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইসরায়েলের হামলাকে মেনে নিলেও এবং ইরানের প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিরোধে ঘনিষ্ঠ মিত্রকে সাহায্য করলেও, তেহরানে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের কোনো ইঙ্গিত দেয়নি।
পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করা আপাতত নাগালের বাইরে
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করতে হলে ইসরায়েলকে আরও অনেক দূর যেতে হবে। সামরিক বিশ্লেষকরা বরাবরই বলে আসছেন যে, ইরানের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত সুরক্ষিত স্থাপনাগুলো পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করা প্রায় অসম্ভব।
ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জাচি হানেগবি বলেছেন, ‘সামরিক শক্তি দিয়ে পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করা সম্ভব নয়।’ তবে এই সামরিক অভিযানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমন একটি চুক্তির পরিস্থিতি তৈরি করা যেতে পারে, যা পারমাণবিক কর্মসূচিকে ব্যর্থ করে দেবে।
বিশ্লেষকরা সন্দিহান যে, ইসরায়েলের একার পক্ষে ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প ধ্বংস করার মতো যথেষ্ট অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে। ইসরায়েলের ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজের গবেষক এবং মোসাদের সাবেক প্রধান বিশ্লেষক সিমা শাইন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ ছাড়া সম্ভবত ইসরায়েল একা এই পারমাণবিক প্রকল্পটি পুরোপুরি শেষ করতে পারবে না।’
তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে পিছিয়ে দেওয়া ইসরায়েলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও, ইরানের শাসনব্যবস্থাকে দুর্বল করার আশাই হয়তো ব্যাখ্যা করে, কেন ইসরায়েল এতজন সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তাকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। এর মাধ্যমে ইরানি নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা ও বিভ্রান্তি তৈরি করা সম্ভব।
তবে আটলান্টিক কাউন্সিলের গবেষক এবং মধ্যপ্রাচ্যের সাবেক মার্কিন উপ-জাতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা জোনাথন প্যানিকফ বলেছেন, এই ধরনের পরিবর্তনে ঝুঁকিও রয়েছে। যদি ইসরায়েল ইরানের বর্তমান নেতৃত্বকে সরাতে সফল হয়, তবে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই যে নতুন নেতৃত্ব ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের ক্ষেত্রে আরও বেশি কট্টরপন্থী হবে না।
প্যানিকফ বলেন, ‘বহু বছর ধরে ইসরায়েলের অনেকে মনে করেছেন যে, ইরানে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন একটি নতুন ও উন্নত দিনের সূচনা করবে। কিন্তু ইতিহাস বলে, পরিস্থিতি সবসময় আরও খারাপ হতে পারে।’
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.