ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির পর মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন রণসজ্জা, ‘আত্মরক্ষামূলক’ অবস্থানে থাকার দাবি ওয়াশিংটনের

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান যুদ্ধের উত্তেজনার মধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তেহরান ত্যাগের আকস্মিক হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর এই সামরিক তৎপরতা নতুন মাত্রা পেয়েছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে সরাসরি জড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে হোয়াইট হাউস জোর দিয়ে বলেছে, এই অঞ্চলে মার্কিন বাহিনী ‘আত্মরক্ষামূলক’ অবস্থানেই রয়েছে এবং তাদের নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি।

পিট হেগসেথ এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প

সোমবার সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউস এই বিষয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে। এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি সংক্ষিপ্ত হুঁশিয়ারিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক জল্পনা শুরু হয়। বিস্তারিত কিছু না জানিয়ে ট্রাম্পের এই বার্তা ইসরায়েলের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর হামলা চালাতে পারে—এমন ধারণাকে উস্কে দেয়। কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলন সংক্ষিপ্ত করে ট্রাম্পের একদিন আগেই হোয়াইট হাউসে ফেরার ঘোষণায় এই জল্পনা আরও তীব্র হয়।

তবে হোয়াইট হাউস ও পেন্টাগনের কর্মকর্তারা বারবার বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী কোনো আক্রমণাত্মক নয়, বরং আত্মরক্ষামূলক প্রস্তুতি নিয়েছে।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র অ্যালেক্স ফাইফার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে ইরান আক্রমণের দাবিকে নাকচ করে দিয়ে বলেন, “এই তথ্য সত্য নয়। আমেরিকান বাহিনী তাদের প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান বজায় রেখেছে এবং এতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।”

পেন্টাগনের প্রধান পিট হেগসেথ ফক্স নিউজকে দেওয়া এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে একই কথা বলেন। তিনি বলেন, “আমরা এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শক্তিশালী প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানে রয়েছি এবং আশা করি সেটাই ঘটবে।”

এর আগে দিনের শুরুতে হেগসেথ জানিয়েছিলেন, সপ্তাহান্তে মধ্যপ্রাচ্যে “অতিরিক্ত সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েনের” নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এক্স (সাবেক টুইটার) প্ল্যাটফর্মে তিনি লেখেন, “মার্কিন বাহিনীকে সুরক্ষা দেওয়াই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার এবং এই পদক্ষেপগুলো এই অঞ্চলে আমাদের প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করার জন্য নেওয়া হয়েছে।”

তার এই ঘোষণার পরপরই সোমবার বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস নিমিৎজকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ত্যাগ করতে দেখা যায়। একই সময়ে কয়েক ডজন মার্কিন সামরিক বিমান আটলান্টিক পাড়ি দিচ্ছে বলেও খবর প্রকাশিত হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা নিমিৎজ ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপকে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানোর নির্দেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান বজায় রাখা এবং মার্কিন কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই” এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান আকাশযুদ্ধের চতুর্থ দিনে এই সামরিক তৎপরতার খবর এলো। আন্তর্জাতিক মহল থেকে বারবার উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানানো সত্ত্বেও সংঘাত থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।