এরদোয়ান: ইসরায়েলি আগ্রাসন ‘দস্যুতায়’ রূপ নিয়েছে

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে সৃষ্ট তীব্র উত্তেজনার মধ্যে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের কড়া সমালোচনা করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তিনি ইসরায়েলের সাম্প্রতিক আগ্রাসনকে ‘দস্যুতা’র সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, দেশটি পুরো অঞ্চলের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং নিজের ভবিষ্যৎকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।

রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান

সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে এরদোয়ান এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, শুরু থেকেই তুরস্ক ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার টেবিলে সমাধান খুঁজে বের করার পক্ষে ছিল এবং আজও সেই অবস্থানেই অটল রয়েছে।

প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান জানান, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত থামাতে তিনি ব্যক্তিগতভাবে এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সকল আন্তর্জাতিক সহযোগীদের স্পষ্টভাবে জানিয়েছি যে, এই সংকট নিরসনে তুরস্ক তার ওপর অর্পিত যেকোনো দায়িত্ব পালন করতে প্রস্তুত, এমনকি মধ্যস্থতার জন্যও।’

সদ্য সমাপ্ত সপ্তাহান্তে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে ফোনালাপের কথা উল্লেখ করে তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি ইসরায়েলের সৃষ্ট হুমকির বিষয়টি তুলে ধরেছেন, যা এখন ‘দস্যুতার পর্যায়ে’ পৌঁছেছে। সংকট নিরসনে কূটনীতি ও সংলাপের গুরুত্বের ওপরও তিনি জোর দেন।

এরদোয়ান আরও বলেন, ‘এটা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে যে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার অজুহাতে ইসরায়েল যে আক্রমণ চালাচ্ছে, তার পেছনে গভীর ও কূট উদ্দেশ্য রয়েছে।’ তিনি যোগ করেন, ‘প্রতিটি দমনমূলক কাজ, ঝরে পড়া প্রতিটি রক্তবিন্দু এবং মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত প্রতিটি অপরাধের মাধ্যমে ইসরায়েল ধীরে ধীরে নিজের অস্তিত্ব ও ভবিষ্যৎকেই বিপন্ন করে তুলছে।’

গাজায় ইসরায়েলের চালানো গণহত্যা এবং লেবানন ও সিরিয়ায় ‘বেপরোয়া হামলা’ তুরস্কের হৃদয়কে রক্তাক্ত করছে বলে মন্তব্য করেন এরদোয়ান। তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা বিবেচনা না করে এই অঞ্চলে নেওয়া প্রতিটি পদক্ষেপ আরও বড় বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যায়। আর এসব বিপর্যয়ের শেষ পরিণতি সাধারণত স্বৈরশাসকদের পতন দিয়েই হয়।’

পশ্চিমাদের অসীম সমর্থনপুষ্ট ইসরায়েল পুরো অঞ্চলের ওপর দাদাগিরি করছে উল্লেখ করে এরদোয়ান সতর্ক করে বলেন, ‘যারা আলোচনার টেবিলে সমাধানযোগ্য বিষয়কে অস্ত্র, ধ্বংসযজ্ঞ, রক্তপাত আর নির্বিচার বোমা হামলার মাধ্যমে সমাধান করতে চায়, তাদের কর্মকাণ্ডের পরিণতি কী হতে পারে, তা কেউ অনুমান করতে পারে না।’

পাশাপাশি, তুরস্কের প্রতিরক্ষাশিল্পের অগ্রগতির কথাও তুলে ধরেন এরদোয়ান। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনাবলির আলোকে আঙ্কারা তার স্বল্প ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের মজুদকে এমন একটি প্রতিরোধমূলক স্তরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে, যা মোকাবিলা করার সাহস কেউ করবে না।