জেনেভায় উত্তাপ: আলোচনার টোপ দিয়ে ইরানকে বাগে আনতে চায় যুক্তরাষ্ট্র?
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই তেহরানকে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এই প্রস্তাবের পাশাপাশি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করতে ইসরায়েলি হামলায় ওয়াশিংটনের যোগ দেওয়ার সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা শুক্রবার জেনেভায় এক বৈঠকে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচিকে এই দ্বিমুখী বার্তা দেবেন বলে দুটি কূটনৈতিক সূত্র রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছে।
বৈঠকের ছবি
পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সম্ভাবনা রোধ করতে ইরানের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের জন্য চাপ ক্রমশ বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে ইরানকে একটি ‘সুস্পষ্ট সংকেত’ দিতে বলা হবে বলে কূটনীতিকরা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, জেনেভা বৈঠকের আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বেশ কয়েকজন পশ্চিমা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তেহরানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসার জন্য ওয়াশিংটনের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন। যদিও ওয়াশিংটন আনুষ্ঠানিকভাবে এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেনি, তবে সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন একজন মার্কিন কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে যে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মিত্রদের কূটনৈতিক উদ্যোগকে সমর্থন করছেন, যা ইরানকে একটি চুক্তির কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারে।
তবে তেহরান বরাবরই বলে আসছে, ইসরায়েলি হামলা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তারা ট্রাম্প সরকারের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনায় বসবে না।
ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচির সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনার আগে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির (যারা ই৩ নামে পরিচিত) পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন।
একজন ইউরোপীয় কূটনীতিক বলেন, ‘ইরানিরা সরাসরি আমেরিকানদের সঙ্গে বসতে পারে না, কিন্তু আমরা পারি। আমরা তাদের বলব, পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার আগেই যেন তারা পারমাণবিক সমস্যা নিয়ে আলোচনার টেবিলে ফিরে আসে। একই সঙ্গে আমরা তাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, রাশিয়াকে সমর্থন এবং আমাদের নাগরিকদের আটকের বিষয়ে উদ্বেগ তুলে ধরব।’
ট্রাম্প প্রশাসন চাইছে ইরান সম্পূর্ণরূপে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করুক। অন্যদিকে, অতীতে ই৩ দেশগুলো ইরানকে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য সীমিত পরিসরে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সুযোগ দেওয়ার পক্ষে ছিল, যার বিনিময়ে ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম কঠোর আন্তর্জাতিক পরিদর্শনের অধীনে থাকবে। তবে শুক্রবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ট্রাম্পের অবস্থানের কাছাকাছি এসে বলেছেন, তেহরানের সঙ্গে যেকোনো নতুন চুক্তিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্য থাকতে হবে।
এদিকে ইরানের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের ওপর সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত, তবে ‘জিরো এনরিচমেন্ট’ বা সমৃদ্ধকরণ শূন্যে নামিয়ে আনার প্রস্তাব নিঃসন্দেহে প্রত্যাখ্যান করা হবে, বিশেষ করে যখন ইসরায়েল ইরানে হামলা চালাচ্ছে।
যুদ্ধ বন্ধের দাবি ইরানের
২০১৩ সালে জেনেভাতেই ইরান ও বিশ্বশক্তির মধ্যে একটি প্রাথমিক চুক্তি হয়েছিল, যা ২০১৫ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে। সেই চুক্তি অনুযায়ী, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করতে সম্মত হয়েছিল।
কিন্তু গত ১২ জুন ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির বিরুদ্ধে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামক অভিযান শুরু করলে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনা ভেস্তে যায়।
শুক্রবার ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে আব্বাস আরাকচিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার কোনো সুযোগ নেই।’
ফরাসি এক কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল বারো মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিওর সঙ্গে কথা বলেছেন। এ সময় রুবিও জানান, ওয়াশিংটন যেকোনো সময় ইরানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার জন্য প্রস্তুত।
ইউরোপীয় কূটনীতিকরা আরাকচিকে মূলত এই বার্তাই দেবেন যে, যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার জন্য প্রস্তুত, তবে ইরানকেও একটি ইতিবাচক সংকেত দিতে হবে।
যদিও জেনেভার এই বৈঠক থেকে বড় কোনো অগ্রগতির আশা করছেন না কূটনীতিকরা, তবুও তারা ইরানের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়াকে অপরিহার্য বলে মনে করছেন। কারণ যুদ্ধ থামলেও পারমাণবিক সমস্যাটি অমীমাংসিতই থেকে যাবে।
এ বিষয়ে আরাকচি বলেন, ‘এখনও যদি তাদের (ইউরোপীয়দের) কিছু বলার থাকে, আমরা শুনব। আমরা আমাদের জাতির অধিকার রক্ষা করতে লজ্জিত নই এবং আমরা কাউকে এড়িয়ে চলছি না।’
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়াডেফুল বলেছেন, ইউরোপীয় শক্তিগুলো সবসময় আলোচনার জন্য প্রস্তুত ছিল, যদি ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি না করার প্রতিশ্রুতি দেয়। তিনি বলেন, ‘এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পালা ইরানের।’
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ইসরায়েলি হামলায় যোগ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.