খাজা আসিফ: চীনের সহায়তা ‘স্বাভাবিক’, তবে লড়াই ও বিজয় দুটোই ‘মেড ইন পাকিস্তান’
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সামরিক সংঘাতে কৌশলগত মিত্র চীনের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানকে ‘খুবই স্বাভাবিক’ বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। তবে তিনি এই সংঘাতে বেইজিংয়ের সরাসরি কোনো সক্রিয় ভূমিকা বা স্যাটেলাইট সহায়তার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। খাজা আসিফের মতে, এই লড়াইয়ে পাকিস্তানের বিজয় সম্পূর্ণভাবে ‘মেড ইন পাকিস্তান’।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ
গত ৭ থেকে ১০ মে পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এই সংঘাত হয়। এই লড়াই পশ্চিমা সামরিক বিশ্লেষক এবং কূটনীতিকদের ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। তারা এটিকে ভারতীয় পাইলট, যুদ্ধবিমান, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের সক্ষমতা বাস্তব যুদ্ধের পরিস্থিতিতে পর্যবেক্ষণ করার একটি বিরল সুযোগ হিসেবে দেখছেন।
ভারতের সঙ্গে চীনের নিজস্ব সীমান্ত বিরোধ এবং কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকায় বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পাকিস্তানের কাছ থেকে পাওয়া যেকোনো তথ্য চীনের সামরিক প্রস্তুতিকে আরও শানিত করতে পারে।
এ সপ্তাহে আরব নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে খাজা আসিফকে প্রশ্ন করা হয়, পাকিস্তান কি ভারতীয় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ এবং কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সম্পর্কিত তথ্য বেইজিংকে দিচ্ছে? জবাবে তিনি বলেন, “আমাদের কাছে এমন কোনো তথ্য থাকলে যা আমাদের বা চীনের জন্য হুমকিস্বরূপ, তা আদান-প্রদান করা খুবই স্বাভাবিক। কারণ ভারতের সঙ্গে চীনেরও সমস্যা রয়েছে। আমি মনে করি, স্যাটেলাইট বা অন্য কোনো মাধ্যমে সংগৃহীত গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় করা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়।”
‘মেড ইন পাকিস্তান’ বিজয়
গত ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মির এক হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার জবাবে ৭ মে ভারতীয় যুদ্ধবিমান পাকিস্তানে বোমাবর্ষণ করে। নয়াদিল্লি এটিকে ‘সন্ত্রাসী পরিকাঠামো’ বলে অভিহিত করে। ইসলামাবাদ এই হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে এবং পাল্টা সামরিক পদক্ষেপ নেয়, যেখানে যুদ্ধবিমান, ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও কামান ব্যবহার করা হয়। ১০ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়।
পাকিস্তান দাবি করেছে, তাদের চীনা প্রযুক্তিতে তৈরি যুদ্ধবিমান চার দিনের সংঘর্ষে অন্তত ছয়টি ভারতীয় সামরিক বিমান ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে তিনটি ফরাসি নির্মিত রাফাল বিমানও ছিল। ভারতের চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান অনির্দিষ্ট সংখ্যক বিমান হারানোর কথা স্বীকার করেছেন।
লন্ডনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (আইআইএসএস) এর মতে, চীনের বর্তমানে কমপক্ষে ১১৫টি গোয়েন্দা, নজরদারি ও পরিদর্শন স্যাটেলাইট এবং ৮১টি সামরিক ইলেকট্রনিক ও সিগন্যাল ডেটা পর্যবেক্ষণের জন্য স্যাটেলাইট রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের পরেই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম নেটওয়ার্ক এবং ভারতের সক্ষমতার চেয়ে অনেক এগিয়ে।
ইসলামাবাদভিত্তিক দুজন পশ্চিমা কূটনীতিক এবং একজন পাকিস্তানি নিরাপত্তা কর্মকর্তার মতে, ভারতের সঙ্গে সংঘাতের সময় চীনের ৪৪টি স্যাটেলাইট পাকিস্তানের ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত ছিল। তাদের মতে, চীনের স্যাটেলাইট এবং সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্স হয়তো ভারতীয় সেনা ও ক্ষেপণাস্ত্রের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে পাকিস্তানকে রিয়েল-টাইম সুবিধা দিয়েছে।
তবে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, “আপনি আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতাকে ছোট করে দেখছেন।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই বিজয় ছিল সম্পূর্ণ পাকিস্তানি। খাজা আসিফ বলেন, “চীনের সাহায্য সবসময়ই অত্যন্ত মূল্যবান... কিন্তু এই লড়াইটা ছিল পাকিস্তানি, এই বিজয় ‘মেড ইন পাকিস্তান’।”
পারমাণবিক সতর্কতা ও ভবিষ্যৎ উত্তেজনা
পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে সংঘাত পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে—এমন আশঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে খাজা আসিফ স্পষ্টভাবে বলেন, “না... আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে পারমাণবিক সতর্কতার কোনো প্রশ্নই ওঠেনি।”
তিনি আরও জানান, ১০ মে যুদ্ধবিরতির পর ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির মধ্যে কোনো পর্দার আড়ালের কূটনীতি হয়নি, তবে উভয় দেশের সামরিক অপারেশন প্রধানদের মধ্যে হটলাইনে যোগাযোগ হয়েছে।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপের কারণে নতুন করে সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারেন। তিনি বলেন, “মোদিকে মে মাসের সংঘাতের প্রতিশোধ নিতে হতে পারে... সামনে নির্বাচন এবং তার জনপ্রিয়তা কমে গেছে। এই পরিস্থিতি তাকে কিছু বেপরোয়া পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করতে পারে।” এ কারণে পাকিস্তান সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.