ইসরায়েলি অভিমত: গাজা ইস্যু ঢাকতেই ইরানে হামলা, সরকার পতন অসম্ভব

ইসরায়েলের সাম্প্রতিক ইরান হামলা মূলত গাজার মানবিক সংকট থেকে বিশ্বের মনোযোগ সরিয়ে দেওয়ার একটি কৌশল। ইরানে সরকার পরিবর্তনের যে লক্ষ্য তেল আবিব নির্ধারণ করেছে, তা সফল হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। বহিরাগত চাপ ও সামরিক হামলার মাধ্যমে কোনো দেশের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন করা অত্যন্ত কঠিন। এমনটাই মনে করছেন ইসরায়েলের নিজস্ব বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকরা।

ইসরায়েলের পতাকা

ইরানে হামলার আগে গাজায় সৃষ্ট মানবিক সংকটের কারণে ইসরায়েল এক ‘আন্তর্জাতিক সমালোচনার সুনামির’ মুখে পড়েছিল। কিন্তু ইরানের ওপর হামলা শুরুর পর সেই পরিস্থিতি আমূল বদলে যায়। ইউরোপীয় দেশগুলো ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নেয় এবং বিশ্ব গণমাধ্যমের মনোযোগ গাজা থেকে সরে ইরানের দিকে চলে যায়।

তুরস্কের আঙ্কারায় অবস্থিত ইসরায়েলি দূতাবাসের প্রাক্তন চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব অ্যালন লিয়েল আনাদোলু সংবাদ সংস্থাকে বলেন, ‘ইরানে হামলার আগে আমরা আন্তর্জাতিকভাবে তীব্র সমালোচনার শিকার হচ্ছিলাম। কিন্তু এই হামলা পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।’

লিয়েল স্বীকার করেন যে, ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে এবং তাদের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতার উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। তবে তিনি মনে করেন না যে তেহরানের পারমাণবিক আকাঙ্ক্ষা পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না করলেও, ইরানি শাসনব্যবস্থার পতন ঘটানো তাদের অন্যতম লক্ষ্য। আমি মনে করি না আমরা তাদের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা সম্পূর্ণ শেষ করতে পারব, তবে বিলম্বিত করতে পারব। সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের মধ্য থেকে প্রতিরোধ তৈরি হবে কি না, তা নির্ভর করছে ইরানের জনগণের ওপর।’

ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের বৈষম্যমূলক নীতির কট্টর সমালোচক এবং হারেৎজ পত্রিকার কলামিস্ট গিডিয়ন লেভিও এই হামলার উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘ইরান পরমাণু অস্ত্রের কতটা কাছাকাছি, তা আমরা নিশ্চিতভাবে জানি না। ইসরায়েল দাবি করছে, তারা খুব কাছাকাছি। যদি তা সত্যি হয়, তবে এই অভিযানকে বৈধ হিসেবে দেখা যেতে পারে।’

লেভি আরও যোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখতে তার জীবন উৎসর্গ করেছেন। হিজবুল্লাহর শক্তি হ্রাস এবং যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে তিনি এই হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। লেভি এই অভিযানকে একটি ‘বিপজ্জনক দুঃসাহসিক অভিযান’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, ‘আমরা এখনও এর মাঝপথে আছি এবং জানি না এর শেষ কোথায়।’

ইরানের টেলিভিশন স্টেশনে বোমা হামলার ঘটনাকে সরাসরি ‘সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা’ হিসেবে উল্লেখ করে লেভি বলেন, ‘ইসরায়েল ইরানের টেলিভিশন স্টেশনে বোমা ফেলেছে। এর সঙ্গে পারমাণবিক সক্ষমতার কোনো সম্পর্ক নেই। টেলিভিশন স্টেশনে তো আর ইউরেনিয়াম তৈরি বা সমৃদ্ধ করা হয় না। তারা এটা করেছে কারণ ওই স্টেশনটি ছিল ইরানি শাসনব্যবস্থার প্রতীক।’

উল্লেখ্য, গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের একাধিক সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালালে এই সংঘাতের সূত্রপাত হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় তেহরানও পাল্টা হামলা শুরু করে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের মতে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ২৫ জন নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। অন্যদিকে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় তাদের দেশে ৪৩০ জন নিহত এবং সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি