আপনি পড়ছেন

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের আকস্মিক সামরিক হামলায় বিশ্বজুড়ে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এই হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সৌদি আরব, তুরস্ক, রাশিয়া, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘ এই হামলাকে ‘বিপজ্জনক উত্তেজনা’ বলে আখ্যা দিয়েছে। তবে, ইসরায়েল এই হামলাকে স্বাগত জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশংসা করেছে।

flag iran 3ইরানের পতাকা

রবিবার (২২ জুন) এক বিবৃতিতে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ইরানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা জানায় এবং এই ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, উত্তেজনা পরিহার করে সংকট নিরসনে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালানো উচিত।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই হামলাকে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি বলে অভিহিত করেছেন। 

বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া

সৌদি আরব

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সৌদি আরব। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, তারা ইরানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানায় এবং উত্তেজনা পরিহার করে সংকট নিরসনে সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানায়।

জাতিসংঘ

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই হামলাকে একটি ‘বিপজ্জনক উত্তেজনা’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের এই শক্তি প্রয়োগে আমি গভীরভাবে শঙ্কিত। এটি এমন একটি অঞ্চলের জন্য বিপজ্জনক উত্তেজনা, যা ইতোমধ্যেই অস্থিতিশীলতার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে এবং এটি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি সরাসরি হুমকি।” তিনি আরও বলেন, “এই সংকটের কোনো সামরিক সমাধান নেই। একমাত্র পথ কূটনীতি, একমাত্র আশা শান্তি।”

তুরস্ক

তুরস্ক সতর্ক করে বলেছে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলা ইরান-ইসরায়েল সংঘাতকে একটি বৈশ্বিক সংঘাতে রূপ দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে, যার পরিণতি ‘বিপর্যয়কর’ হতে পারে।

ভারত

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান, “বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সাম্প্রতিক উত্তেজনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছি এবং সংকট নিরসনে অবিলম্বে উত্তেজনা প্রশমন, সংলাপ ও কূটনীতির পথে হাঁটার জন্য আমাদের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছি।”

সংযুক্ত আরব আমিরাত

সংযুক্ত আরব আমিরাত এই অঞ্চলে ‘গুরুতর পরিণতি এড়াতে’ অবিলম্বে উত্তেজনা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সতর্ক করে দিয়েছে যে, এ ধরনের পদক্ষেপ অঞ্চলটিকে ‘অস্থিতিশীলতার নতুন মাত্রায়’ নিয়ে যেতে পারে।

মিশর

মিশর ইরানের সাম্প্রতিক ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, এই ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, সব রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করা এবং জাতিসংঘের সনদ ও আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পাকিস্তান

পাকিস্তান এক বিবৃতিতে জানায়, তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার নিন্দা জানাচ্ছে। বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা এই অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এই হামলা আন্তর্জাতিক আইনের সকল নীতিমালার লঙ্ঘন এবং জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী ইরানের আত্মরক্ষা করার বৈধ অধিকার রয়েছে।”

রাশিয়া

রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের উপ-প্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, “শান্তির বার্তা দিয়ে ক্ষমতায় আসা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি নতুন যুদ্ধ শুরু করলেন।”

কাতার

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম সামরিক ঘাঁটির আয়োজক দেশ কাতার এই হামলার পর গুরুতর পরিণতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “এই বিপজ্জনক উত্তেজনা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিপর্যয়কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে।”

ওমান

ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে পারমাণবিক আলোচনার মধ্যস্থতাকারী দেশ ওমান মার্কিন হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। দেশটির সরকারি বার্তা সংস্থা জানায়, সালতানাত এই হামলার ফলে সৃষ্ট উত্তেজনায় গভীর উদ্বেগ, নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছে।

লেবানন

লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন এক বিবৃতিতে বলেছেন, “ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা এমন এক উত্তেজনা বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি করেছে, যা একাধিক অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। আমরা সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের এবং এই অঞ্চলের দেশগুলোতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে আলোচনা শুরু করার আহ্বান জানাই।”

যুক্তরাজ্য

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, “ইরানকে কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে দেওয়া যাবে না এবং যুক্তরাষ্ট্র সেই হুমকি কমাতেই পদক্ষেপ নিয়েছে।” তবে তিনি সংকট নিরসনে ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার আহ্বান জানান।

ইরাক

ইরাক সতর্ক করে বলেছে, প্রতিবেশী দেশ ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলা মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। দেশটির সরকারি মুখপাত্র বলেছেন, “এই সামরিক উত্তেজনা মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুতর হুমকি।”

ইউরোপীয় ইউনিয়ন

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কাজা কালাস বলেছেন, “ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে দেওয়া উচিত নয়, তবে আমি সব পক্ষকে উত্তেজনা পরিহার করে আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার আহ্বান জানাই।”

নিউজিল্যান্ড 

নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স সকল পক্ষকে আলোচনায় ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “কূটনীতিই সামরিক পদক্ষেপের চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান দিতে পারে।”

ইতালি

ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি বলেছেন, “আমরা আশা করি, এই হামলার পর উত্তেজনা হ্রাস পাবে এবং ইরান আলোচনার টেবিলে বসতে রাজি হবে।”

চীন

চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম প্রশ্ন তুলেছে, যুক্তরাষ্ট্র কি ইরানে তার ইরাক ভুলের পুনরাবৃত্তি করছে? এক প্রতিবেদনে বলা হয়, “ইতিহাস বারবার দেখিয়েছে যে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক হস্তক্ষেপ দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত এবং আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করে।”

জাপান

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা বলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব পরিস্থিতি শান্ত করা অত্যন্ত জরুরি। একইসঙ্গে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়নও অবশ্যই প্রতিরোধ করতে হবে। তিনি জানান, এই অঞ্চলে থাকা জাপানি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তার সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।

দক্ষিণ কোরিয়া

দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতির কার্যালয় জানিয়েছে, মার্কিন হামলার নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক প্রভাব এবং এর প্রতিক্রিয়ায় করণীয় নির্ধারণ করতে একটি জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়া এই সংঘাতের কূটনৈতিক সমাধানের ওপর জোর দিয়েছে। দেশটির এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, “আমরা উত্তেজনা প্রশমন, সংলাপ এবং কূটনীতির আহ্বান জানাচ্ছি।”

ইসরায়েল

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এই হামলার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, “ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর আপনার সাহসী সিদ্ধান্ত ইতিহাস বদলে দেবে। যুক্তরাষ্ট্র এমন কাজ করেছে, যা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশ করতে পারত না।”

জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যাননও ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আজ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রমাণ করেছেন যে ‘আর কখনো নয়’ শুধু একটি স্লোগান নয়, এটি একটি নীতি।”

ভিন্ন সুর ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে 

রিপাবলিকানদের প্রশংসা: কংগ্রেসের রিপাবলিকান সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন। সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম এটিকে ‘চমৎকার কাজ’ বলে অভিহিত করেছেন। সিনেটর জন কর্নিন বলেছেন, এটি একটি ‘সাহসী ও সঠিক সিদ্ধান্ত’।

ডেমোক্র্যাটদের ভিন্নমত ও সমর্থন: ডেমোক্র্যাট দলের অনেকেই এই হামলার সমালোচনা করলেও পেনসিলভানিয়ার সিনেটর জন ফেটারম্যান হামলার প্রশংসা করে বলেন, “এটি প্রেসিডেন্টের নেওয়া সঠিক পদক্ষেপ। ইরান বিশ্বের প্রধান সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক এবং তাদের পারমাণবিক সক্ষমতা থাকতে পারে না।”

সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন: অন্যদিকে, অনেক আইনপ্রণেতা কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া এমন হামলার সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান টমাস মেসি বলেছেন, “এটি সাংবিধানিক নয়।” হাউজ ইন্টেলিজেন্স কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট জিম হাইমস বলেন, “সংবিধান অনুযায়ী, বোমা ফেলার আগেই এই বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি দেওয়া উচিত ছিল।”

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.