হিজরি নববর্ষ: কী এর তাৎপর্য, কীভাবে পালন করা হয়?

বিশ্বজুড়ে মুসলিম সম্প্রদায় ইসলামি চন্দ্র বর্ষপঞ্জির নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। হিজরি নববর্ষ নামে পরিচিত এই নতুন বছরের সূচনা হয় মহররম মাসের প্রথম দিনে। পবিত্র হজের পর এই মাসটি মুসলিমদের জন্য আধ্যাত্মিক আত্মানুসন্ধান এবং ধর্মীয় সংকল্প গ্রহণের এক বিশেষ সুযোগ নিয়ে আসে। তবে এবারের নববর্ষ এমন এক সময়ে আসছে, যখন মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংঘাত মুসলিম বিশ্বের ওপর এক বিষাদের ছায়া ফেলেছে।

ছবি - সংগৃহীত

ইসলামি বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, মহররম মাসের চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে হিজরি নববর্ষের প্রথম দিন নির্ধারিত হয়। চন্দ্র বর্ষপঞ্জি হওয়ায় প্রতি বছরই ইসলামি মাস ও ছুটির দিনগুলো (রমজান ও  ঈদ) পরিবর্তিত হয়। এই বর্ষপঞ্জির গণনা শুরু হয় ৬২২ খ্রিস্টাব্দ থেকে। ওই বছর মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) নির্যাতন থেকে বাঁচতে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। এই ঐতিহাসিক যাত্রার স্মৃতিকে ধারণ করেই এই বর্ষপঞ্জি হিজরি নামে পরিচিত। এই হিজরতের ঘটনাই তৎকালীন মুসলিম উম্মাহর ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক ভিত্তি স্থাপন করেছিল।

অন্যান্য নববর্ষ উদযাপনের মতো হিজরি নববর্ষ উৎসবমুখর হওয়ার চেয়ে অনেক বেশি ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ ও আত্মপর্যালোচনামূলক। মহররম ইসলামে যে চারটি পবিত্র মাস রয়েছে তার অন্যতম, যে মাসগুলোতে যুদ্ধবিগ্রহ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এই মাসে ইবাদত, দান এবং আত্মশুদ্ধির ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাত, মরক্কো ও সিরিয়াসহ প্রায় ২০টিরও বেশি দেশে হিজরি নববর্ষে সরকারি ছুটি পালন করা হয়।

মুসলিমদের বিভিন্ন মাজহাব বা মতাদর্শ অনুযায়ী নববর্ষ পালনের রীতিতে ভিন্নতা দেখা যায়। শিয়া মুসলমানদের জন্য মহররমের প্রথম দশ দিন অত্যন্ত শোকাবহ এক অধ্যায়। ৬৮০ খ্রিস্টাব্দের ১০ই মহররম কারবালার প্রান্তরে মহানবী (স.)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসেন (রা.) শাহাদাতবরণ করেন। এই দিনটিকে আশুরা বলা হয়। আশুরার দিনে শিয়া মুসলমানরা কালো পোশাক পরে শোক মিছিল বের করেন এবং বুক চাপড়ে বা নিজেদের আঘাত করে শোক প্রকাশ করেন।

অন্যদিকে, সুন্নি মুসলমানরা আশুরার দিনটিকে ভিন্ন কারণে স্মরণ করেন এবং এদিন রোজা পালন করে থাকেন। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী, এই দিনে হযরত মুসা (আ.) তার অনুসারীদের নিয়ে লোহিত সাগর পার হয়েছিলেন এবং অত্যাচারী ফেরাউনের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন।

এবারের হিজরি নববর্ষ এমন এক সংকটময় মুহূর্তে পালিত হতে যাচ্ছে, যখন গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন অব্যাহত রয়েছে। গত বছরের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই সংঘাতে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, নিহতের সংখ্যা ৫৫,০০০ ছাড়িয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ঐতিহ্যগতভাবে পাকিস্তান, লেবানন ও ইরাকের মতো দেশগুলোতে আশুরার শোক মিছিল ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশের একটি বড় মাধ্যমে পরিণত হয়। চলমান এই সংঘাতের কারণে এবারের মহররম পালন বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের জন্য আরও বেশি বেদনা ও সহানুভূতির বিষয় হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।