আপনি পড়ছেন

মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত তথা ফিলিস্তিনের গাজা, লেবানন, সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন- সর্বশেষ ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে ইসরায়েলকে বরাবরই অস্ত্র-অর্থ দিয়ে রসদ জুগিয়ে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। শুধু তাই নয়, ইরানে তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালানোর মধ্য দিয়ে সাম্প্রতিক মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতে সরাসরিই জড়িয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র। এরমধ্যে দিয়ে অঞ্চলটিতে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক দশক ধরে সামরিক সম্পৃক্ততা ফের বাড়লো বৈকি। তবেই যুক্তরাষ্ট্রের এই যুদ্ধ ও সম্পৃক্ততা কেড়ে নিয়ে অন্তত ১০ লাখের বেশি মানুষের প্রাণ। তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্য ও আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের গত ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে খরচ হয়েছে ৫.৮ ট্রিলিয়ন ডলার।

us wars costsআড়াই দশকে মার্কিন যুদ্ধের ব্যয় ও তাতে প্রাণহানি দুটোই অনাকাঙ্খিত

ইরানে সরাসরি হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের আয়োজন

ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হামলা সম্পর্কে মার্কিন জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইনের ব্রিফিং অনুসারে, সাতটি বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান, যার প্রতিটির মূল্য প্রায় ২.১ বিলিয়ন ডলার, ফোর্ডো ও নাতাঞ্জে কমপক্ষে ১৪টি বাঙ্কার-বাস্টার বোমা ফেলেছে, যার মূল্য লাখ লাখ ডলার।

মোট ১২৫টিরও বেশি মার্কিন বিমান এই অভিযানে অংশগ্রহণ করে, যার মধ্যে বোমারু বিমান, ফাইটার, ট্যাঙ্কার, নজরদারি বিমান এবং সহায়তাকারী বিমানসহ কর্মীরা অন্তর্ভুক্ত ছিল, যার সবকিছু মিলে ব্যয় কয়েকশ মিলিয়ন ডলার।

top 10 military spenderবিশ্বে সবচেয়ে বেশি সামরিক ব্যয় যুক্তরাষ্ট্রের

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সামরিক ব্যয় যুক্তরাষ্ট্রের:

যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় নিজেদের সামরিক বাহিনীর পেছনে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করে। সেটি ‘টপ টেন’ তালিকায় থাকা অন্য নয়টি দেশের মিলিত ব্যয়ের চেয়েও বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ব্যয় চীনের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি এবং রাশিয়ার চেয়ে সাতগুণ বেশি।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র তার সামরিক খাতে ৯৯৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে, যা বিশ্বজুড়ে মোট সামরিক ব্যয়ের ৩৭ শতাংশ।

তথ্যমতে, বছরটিতে চীনের সামরিক ব্যয় ৩১৪ বিলিয়ন ডলার, রাশিয়ার ১৪৯, জার্মানির ৮৮.৫, ভারতের ৮৬.১, যুক্তরাজ্যের ৮১.৮, সৌদি আরবের ৮০.৩, ইউক্রেনের ৬৪.৭, ফ্রান্সের ৬৪.৯, ও জাপানের ৫৫.৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে।

মার্কিন নেতৃত্বাধীন যুদ্ধের মানবিক মূল্য:

ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াটসন ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের বিশ্লেষণ অনুসারে, ২০০১ সাল থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন যুদ্ধগুলো সরাসরি আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন এবং ৯/১১-পরবর্তী অন্যান্য সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে প্রায় ৯ লাখ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছে। তাছাড়া এসব যুদ্ধের কারণে পরোক্ষ মৃত্যু অর্থাৎ খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা বা যুদ্ধ-সম্পর্কিত রোগের কারণে মৃত্যু হয়েছে আরও অন্তত ৩.৮ মিলিয়ন মানুষের।

২০০১ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত কমপক্ষে ৩০০০০ মার্কিন সেনা, সামরিক কর্মী, ঠিকাদার ও মিত্র সৈন্যও নিহত হয়েছে। এর মধ্যে কমপক্ষে ৭০৫২ জন সৈন্য, ৮১৮৯ জন ঠিকাদার এবং ১৪ হাজার ৮৭৪ জন মিত্র সেনা রয়েছে।

আফগানিস্তান ইরাক যুদ্ধ প্রাণ কেড়েছে পাঁচ লাখ মানুষের

১১ সেপ্টেম্বরের হামলার জবাবে আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুরু হয় ৭ অক্টোবর, ২০০১ সালে এবং এর লক্ষ্য ছিল আল-কায়েদাকে ধ্বংস করা ও তালেবানদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা। দুই বছরেরও কম সময় পর ২০০৩ সালের ২০ মার্চ যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইরাকে যুদ্ধ শুরু করে, যার লক্ষ্য ছিল গণবিধ্বংসী অস্ত্র নির্মূল করা এবং সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা। যদিও ইরাকে কোনো গণবিধ্বংসী কোনো অস্ত্রের মজুদ কখনও পাওয়া যায়নি।

প্রায় ২০ বছর ধরে, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে যুদ্ধে আনুমানিক ২৪৩,০০০ জন সরাসরি নিহত হয়। ইরাকে যুদ্ধের সময় প্রায় ৩১৫,০০০ মানুষ সরাসরি নিহত হয়।

ওয়াটসন ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত এই যুদ্ধে কমপক্ষে ৫ লাখ ৫৮ হাজার মানুষ সরাসরি নিহতের ঘটনা ঘটেছে।

মার্কিন নেতৃত্বাধীন যুদ্ধের আর্থিক খরচ

দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্র আনুমানিক ৫.৮ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রতিরক্ষা বিভাগ কর্তৃক ব্যয় করা ২.১ ট্রিলিয়ন ডলার, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কর্তৃক ব্যয় করা ১.১ ট্রিলিয়ন ডলার, প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধির জন্য ৮৮৪ বিলিয়ন ডলার, প্রবীণদের চিকিৎসা সেবার জন্য ৪৬৫ বিলিয়ন ডলার এবং যুদ্ধের জন্য নেওয়া ঋণের সুদের জন্য অতিরিক্ত ১ ট্রিলিয়ন ডলার।

ইতিমধ্যে ব্যয় করা ৫.৮ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়াও, আগামী ৩০ বছরে প্রবীণদের যত্নের জন্য যুক্তরাষ্ট্র কমপক্ষে ২.২ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর ফলে ২০০১ সাল থেকে মার্কিন যুদ্ধের মোট আনুমানিক ব্যয় ৮ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার জন্য মার্কিন অর্থায়ন

ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াটসন ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুসারে, ১৯৫৯ সাল থেকে মুদ্রাস্ফীতি-সমন্বিত ডলারে কমপক্ষে ২৫১.২ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্র ২০১৬ সাল থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত ১০ বছরের সমঝোতা স্মারকের অধীনে ইসরায়েলকে প্রতি বছর ৩.৮ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর বেশিরভাগই বিদেশি সামরিক অর্থায়ন হিসেবে বরাদ্দ।

তবে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে অতিরিক্ত ১৭.৯ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা দিয়েছে, যা সর্বকালের সর্বোচ্চ বার্ষিক সহায়তা। এর মধ্যে ৬.৮ বিলিয়ন ডলার সামরিক অর্থায়ন, ৪.৫ বিলিয়ন ডলার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষার জন্য এবং ৪.৪ বিলিয়ন ডলার মার্কিন মজুদ থেকে ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ করার পেছনে গেছে।

গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার মানবিক মূল্য

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, ২৪ জুন, ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত গাজায় নিশ্চিত নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫৬ হাজার ৭৭ জন। আহত হয়েছে কমপক্ষে ১ লাখ ৩১ হাজার ৮৪৮ জন। এছাড়া আরও ১০ হাজারের বেশি মানুষ বাড়িঘরের ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে রয়েছে, যাদের উদ্ধার করাও সম্ভব হয়নি। তাদের ধরা হচ্ছে নিখোঁজ হিসেবে।

সূত্র: আল জাজিরা

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.