আজীবন ক্ষমতায় থাকার পথে মুসেভেনি, ছেলেকেও বানাচ্ছেন উত্তরসূরি?

সপ্তম মেয়াদে উগান্ডার প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ইয়োওয়ারি মুসেভেনি। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে তিনি প্রায় পাঁচ দশক ধরে দেশ শাসনের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন।

উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ইয়োওয়ারি মুসেভেনি

৮০ বছর বয়সী মুসেভেনি ১৯৮৬ সালে বিদ্রোহী নেতা হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এরপর তিনি আরও ছয়বার নির্বাচনে জয়ী হন, যদিও এর অনেকগুলোই সহিংসতা ও কারচুপির অভিযোগে বিতর্কিত। দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকার ব্যাপারে দেশে-বিদেশে সমালোচনা থাকলেও মুসেভেনি তার শাসন অব্যাহত রেখেছেন। ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স মুভমেন্ট পার্টির ভেতরেও তার নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দৃশ্যত কোনো জোরালো বিরোধিতা নেই। গত শনিবার রাজধানী কাম্পালায় দলীয় কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে গেলে বিপুলসংখ্যক সমর্থক তাকে স্বাগত জানান।

আগামী ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও রাজনীতিক ববি ওয়াইন, যার আসল নাম কিয়াগুলানি সেন্টামু। তিনি এরই মধ্যে নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে ববি ওয়াইন ও তার সমর্থকেরা সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর তীব্র দমন-পীড়নের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে, অনেকে আবার আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য হয়েছেন।

মুসেভেনি তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ববি ওয়াইনকে ‘বিদেশি শক্তির দালাল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তাকে অযোগ্য বলেও মন্তব্য করেছেন। ওয়াইনকে এর আগেও বিভিন্ন অভিযোগে বহুবার গ্রেপ্তার করা হলেও কোনোটিতেই তাকে দোষী সাব্যস্ত করা যায়নি। তিনি বরাবরই অহিংস উপায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলে আসছেন।

অথচ একসময় মুসেভেনি নিজেই আফ্রিকার দীর্ঘমেয়াদী শাসকদের কঠোর সমালোচনা করতেন। কিন্তু এখন তার নেতৃত্বেই নিজ দলের আইনপ্রণেতারা সংবিধান থেকে রাষ্ট্রপতির বয়সসীমা তুলে দিয়ে তার আজীবন ক্ষমতায় থাকার পথ তৈরি করে দিয়েছেন। এরই মধ্যে তার ছেলে ও দেশের সেনাপ্রধান মুহুজি কাইনেরুগাবা প্রকাশ্যে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, যা দেশটিতে পারিবারিক শাসন প্রতিষ্ঠার আশঙ্কা তৈরি করেছে।

এদিকে, দেশটির আরেকজন বর্ষীয়ান বিরোধী নেতা ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা কিজা বেসিজিয়ে গত নভেম্বর থেকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে কারাগারে আছেন। তার আইনজীবীদের দাবি, এই অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

উল্লেখ্য, ১৯৬২ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটিতে কখনোই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়নি।