বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় পাশে থাকার অঙ্গীকার জাপানের

এশিয়ায় জাপানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম এবং দেশের উন্নয়ন যাত্রায় জাপান তার অব্যাহত সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) নির্বাহী জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মিয়াজাকি কাৎসুরা বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে এই আশ্বাস দেন।

ছবি - সংগৃহীত

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে মিয়াজাকি কাৎসুরা গত জুলাই মাসের আন্দোলনে নিহত ও আহতদের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেন।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিনিয়োগ, মৎস্য খাত, রোহিঙ্গা মানবিক সহায়তা এবং শিক্ষা ও ক্রীড়াসহ যুব উন্নয়নের মতো ক্ষেত্রগুলোতে জাপানের সহযোগিতা আরও জোরদার করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “জাপান সবসময়ই আমাদের একজন বিশ্বস্ত বন্ধু। আমি সম্প্রতি আপনার দেশ সফর করেছি এবং সেখানকার উষ্ণ আতিথেয়তায় আমি ও আমার প্রতিনিধিদল মুগ্ধ হয়েছি।”

আলোচনাকালে প্রধান উপদেষ্টা মাতারবাড়ী প্রকল্পের গুরুত্ব তুলে ধরে একে ‘দেশের ভবিষ্যতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল’ হিসেবে বর্ণনা করেন। বাংলাদেশের সামুদ্রিক সম্ভাবনার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “জাপানে জাইকার সভাপতির সঙ্গে আলাপকালে আমি বলেছিলাম যে আমরা একটি সমুদ্রনির্ভর অর্থনীতিতে পরিণত হতে চাই।”

অধ্যাপক ইউনূস জাপানে বাংলাদেশি তরুণদের পড়াশোনার জন্য বৃত্তির সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারণের জন্যও অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, “আমাদের অনেক তরুণ জাপানে কাজ করতে যেতে পারে। মূল প্রতিবন্ধকতা হলো ভাষা। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, জাপানি শিক্ষকরা এদেশে এসে অথবা দূরশিক্ষণের মাধ্যমে আমাদের জনগণকে জাপানি ভাষা ও কর্মক্ষেত্রের শিষ্টাচার শেখাতে পারেন।”

প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “এটি একটি অত্যন্ত দুঃখজনক পরিস্থিতি। হাজার হাজার তরুণ-তরুণী আশ্রয় শিবিরে কোনো আশা ছাড়াই বেড়ে উঠছে। এর ফলে তারা হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ছে।”

জবাবে মিয়াজাকি কাৎসুরা বলেন, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের প্রস্তুতি হিসেবে জাইকা দেশটির বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্য খাতে সংস্কার কার্যক্রমে সহায়তা করছে। তিনি আরও জানান, উভয় দেশের স্থানীয় সরকার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় বাংলাদেশে উন্নত তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে মানবসম্পদ প্রশিক্ষণের জন্য একটি বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

নারী ক্রীড়া ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যের কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের মেয়েরা সব জায়গায় জয়ী হচ্ছে। গতকালও তারা একটি ম্যাচ জিতে চূড়ান্ত পর্বে উঠেছে। আমরা তাদের জন্য ছাত্রাবাসের সুবিধা বাড়াচ্ছি, তবে তাদের স্বাস্থ্য ও প্রশিক্ষণের জন্যও সহায়তা প্রয়োজন।” মিয়াজাকি কাৎসুরা এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়ে জানান যে জাপান ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে শিক্ষামূলক প্রকল্পে স্বেচ্ছাসেবী পাঠাচ্ছে এবং নারী ক্রীড়া ক্ষেত্রে আরও সহযোগিতার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবে।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অর্থনৈতিক সংস্কার, রেলপথ নির্মাণ এবং মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য সম্প্রতি স্বাক্ষরিত ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যের ঋণ ও অনুদান চুক্তির জন্য জাপানকে ধন্যবাদ জানান। একইসাথে আরও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তিনি জাপানের বার্ষিক সরকারি উন্নয়ন সহায়তার (ওডিএ) সীমা ৩০০ বিলিয়ন ইয়েন থেকে বাড়িয়ে ৪৫০ বিলিয়ন ইয়েন করার অনুরোধ করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশ জাপানের এই বন্ধুত্ব ও অবদান সর্বদা স্মরণ করবে।”