ট্রাম্পের ‘বিগ বিউটিফুল বিল’ পাস, কী আছে তাতে

রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে যেন বিশাল জয় পেলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে তার বিতর্কিত কর ছাড় ও ব্যয় বিল ‘বিগ বিউটিফুল বিল’ উৎড়ে গেছে। এখন শুধু নিজের সইয়ের অপেক্ষা। অবশ্য সেজন্য মুখিয়ে আছেন ট্রাম্প। তবে নামে ‘বিগ বিউটিফুল’ হলেও এই বিলের প্রভাব আরও বেশি ‘বিগ আগলি’, যার শিকার হতে যাচ্ছেন নিন্মবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষ, বিশেষ করে বয়োবৃদ্ধ সুবিধাভোগী মার্কিন নাগরিকরা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

রিপাবলিকানদের বিরোধিতার মুখে বিল পাস:

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দেশটির পার্লামেন্ট কংগ্রেসের নিন্মকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে (প্রতিনিধি পরিষদ) পাস হয়েছে ট্রাম্পের ট্রাম্পের ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট’। দীর্ঘ ২৯ ঘণ্টার তর্ক-বিতর্ক আর ট্রাম্পের নিজ দল রিপাবলিকানের কয়েক সদস্যের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও হাউসে বিলটি ২১৮-২১৪ ভোটে পাস হয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট থেকে বিলটি পাস হয়ে আসে। সেখানে বিলটি ৫১-৫০ ভোটে পাস হয়। সিনেটেও বিলটির বিরুদ্ধে থাকা ডেমোক্র্যাট ৪৭ সদস্যের সঙ্গে ভোট দেন ৩ রিপাবলিকান। ভোটাভুটিতে বিলের পক্ষে-বিপক্ষে ভোট সমান হয়ে যায়। পরে ‘টাই’ ভাঙতে বিলের পক্ষে ভোট দেন ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স।

বিগ বিউটিফুল বিল পাসের পর উল্লসিত রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যানরা

স্বাধীনতা দিবসের আগেই সই করতে চান ট্রাম্প:

হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে বিলটি পাস হওয়ার পর তাতে সই করেছেন রিপাবলিকান স্পিকার মাইক জনসন। এখন বিলটি আইনে পরিণত হতে কেবল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সইয়ের পালা। তবে সেজন্য তিনি অপেক্ষা করেই আছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসের আগেই এই স্বাক্ষর করতে চান ট্রাম্প।

হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, স্থানীয় সময় শুক্রবার (৪ জুলাই) বিকেল ৫টায় বিলে সই করে সেটি আইনে পরিণত করবেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

কংগ্রেসের বাধা উৎরে যেতেই উচ্ছ্বসিত ট্রাম্পও সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এবার যুক্তরাষ্ট্রের উন্নতি ঘটবে রকেট গতিতে। সেটি হবে সত্যিই দুর্দান্ত ।’

কী আছে ট্রাম্পের বিলে:

ট্রাম্পের বিগ বিউটিফুল বিলে মূলত করের আওতা কমানো, সেনাবাহিনীর পেছনে ব্যয় বাড়ানো, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ কমানো ও অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে খরচ বাড়ানোর কথা বলা আছে।

বিলটি মূলত ২০১৭ সালে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদকালে ঘোষিত কর ছাড় পরিকল্পনারই সম্প্রসারিত রূপ। ওই পরিকল্পনায় করপোরেট কর ও ধনীদের ব্যক্তি কর কমানো হয়েছিল।

কোন খাতে কত আসছে-যাচ্ছে:

নতুন বিল অনুযায়ী, আগামী ১০ বছরে মার্কিন ফেডারেল সরকারের খরচের খাতায় কর ছাড় যাবে ৪.৫ ট্রিলিয়ন ডলার, প্রতিরক্ষায় খরচ বাড়বে ১৫০ বিলিয়ন ডলার, সীমান্ত সুরক্ষা তথা অভিবাসী তাড়ানোর কাজে ব্যয় হবে ১২৯ বিলিয়ন ডলার।

অন্যদিকে আয় আসবে অর্থাৎ, খরচ কমানো হচ্ছে মেডিকেইড নামের স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে ৯৩০ বিলিয়ন ডলার, পরিবেশবান্ধব জ্বালানি বা গ্রিন এনার্জিখাতে ৪৮৮ বিলিয়ন ডলার এবং খাদ্যসহায়তা কর্মসূচি থেকে ২৮৭ বিলিয়ন ডলার।

গরীব মারার বিল:

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কম আয়ের নাগরিকদের জন্য চালু রয়েছে মেডিকেইড নামের স্বাস্থ্য কর্মসূচি। স্বল্প আয়ের ও নিন্মবিত্তদের জন্য রয়েছে খাদ্যসহায়তা কর্মসূচি। এসব কর্মসূচিতে বাজেট কাটছাঁটের ফলে লাখ লাখ আমেরিকান একদিকে যেমন স্বাস্থ্য বিমার বাইরে চলে যাবেন, তেমনি খাদ্য সহায়তা বঞ্চিত হবেন তারা।

জাতীয় ঋণের বোঝা বাড়ছে:

আইনটি কার্যকরের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের ঋণ গ্রহণ নির্ধারিত সীমার চেয়ে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার বেড়ে যাবে। তাতে আগামী এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণের বোঝা বেড়ে যাবে আরও ৩.৩০ ট্রিলিয়ন ডলার। দেশটির ঘাড়ে বর্তমানে এই ঋণের পরিমাণ ৩৬.২০ ট্রিলিয়ন ডলার।

বিবিসি ও আল জাজিরা অবলম্বনে।