আপনি পড়ছেন

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় বেসামরিক এলাকাগুলো পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। তবে এই অভিযানে অংশ নেওয়া সেনারাই এখন শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। প্রচণ্ড মানসিক চাপ ও ভয়াবহ অভিজ্ঞতার শিকার হচ্ছেন তারা। ইসরায়েলের প্রভাবশালী দৈনিক হারেৎজে প্রকাশিত এক বিশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে গাজা যুদ্ধের এই ভিন্ন চিত্র, যা সরকারি বিবৃতির পুরোপুরি বিপরীত। সেখানে পাঁচজন ইসরায়েলি সেনা নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাদের দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন।

israeli amy in gaza 2গাজায় ইসরায়েলি সেনা

প্যারাট্রুপার ইউনিটের ২০ বছর বয়সী সেনা ‘অর’ জানান, খান ইউনিসে বিমান হামলায় ধসে পড়া একটি বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে তারা দুটি শিশুসহ পাঁচ-ছয়জনের মরদেহ খুঁজে পান। তিনি বলেন, “মরদেহগুলোতে পচন ধরে গিয়েছিল। সম্ভবত কুকুর দেহগুলো খুবলে খেয়েছিল। হাড় ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। আমি সেই গন্ধ আজও ভুলতে পারিনি। শরীর, পোশাক—সবকিছুতে গন্ধটা মিশে গিয়েছিল। সারা রাত সুগন্ধি স্প্রে করেও লাভ হয়নি।”

এক দফা অভিযান শেষে কয়েকদিনের মাথায় তাকে আবার গাজায় পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। অর বলেন, “আমি ফিরতে চাইনি। গাড়িতে ওঠার সময় মনে হচ্ছিল লাফ দিয়ে পালিয়ে যাই। কিন্তু সাহস পাইনি। ফেরা মানেই আবার বিস্ফোরণ, চামড়ায় মোজা আটকে থাকার যন্ত্রণা আর অসহ্য গরম। সব মিলিয়ে এক জীবন্ত দুঃস্বপ্ন। আমি শুধু চাই, এই দুঃস্বপ্ন শেষ হোক, দয়া করে এটা থামান।”

কেফির ব্রিগেডের ২১ বছর বয়সী সদস্য জনাথন জানান, জাবালিয়ায় এক অভিযানে বিস্ফোরণে তার এক বন্ধুর রক্তে শরীর ভেসে গিয়েছিল। তিনি বলেন, “প্রথমে ভেবেছিলাম আমিই আহত হয়েছি। পরে বুঝলাম, এটা আমার বন্ধুর রক্ত। ও চিৎকার করে সাহায্য চাইছিল, কিন্তু আমি কিছুই করতে পারছিলাম না।” ওই ঘটনার পর তিন দিন ঘুমাতে পারেননি জনাথন। তার কথায়, “খাবারেও যেন রক্তের স্বাদ পেতাম। দিনে অসহ্য গরম, রাতে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা। শরীরজুড়ে বালি আর ধুলো লেগেই থাকত। মানুষ দেখিনি বললেই চলে, শুধু কুকুর ঘুরে বেড়াত।”

গিভাতি ব্রিগেডের ২১ বছর বয়সী ওমর জানান, ৭ অক্টোবরের হামলার পর গাজায় প্রবেশের বিষয়ে প্রথমে উত্তেজনা কাজ করলেও এখন সবকিছু অর্থহীন মনে হয়। তিনি বলেন, “আমার চেনা কত মানুষ যে মারা গেল! ব্রিগেড, স্কুল বা পাড়ার আর কাউকে হারানোর শক্তি আমার নেই।” কমান্ডারদের অবহেলায় অনেক সেনার মৃত্যু হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “আমাদের ফোনে এখন উইলের খসড়া রাখা থাকে। রাতে ঘুমানোর আগে কেউ কেউ নিজের শেষকৃত্যের কথা ভাবি—কতজন আসবে, পুরোনো প্রেমিকা কাঁদবে কি না, আরও কত কী!”

নাহাল রিকন ইউনিটের ২১ বছর বয়সী ইয়াইর বলেন, “টানা দশ দিন বুট না খোলার কষ্ট, মাটিতে মুখ গুঁজে পড়ে থাকা আর ক্লান্তিতে চোখ খোলা রাখতে না পারার যন্ত্রণা আপনারা বুঝবেন? মানসিক চাপে আমার চুল পড়ে যাচ্ছে।” কান্না চেপে তিনি আরও বলেন, “আমি আর কাঁদি না, নিজেকে শক্ত রাখি। আমার পুরো দলটিই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আমি বেঁচে আছি, কিন্তু মানসিকভাবে স্বাভাবিক হতে পারব কি না, জানি না। শুধু চাই, সবকিছু আবার আগের মতো হোক।”

সবচেয়ে তীব্র হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইয়াহালোম নামের প্রকৌশল ইউনিটের সদস্য ২২ বছর বয়সী উরি। তিনি বলেন, “প্রথমদিকে আমি যুদ্ধের পক্ষে ছিলাম। প্রতিটি অভিযানে নিজেকে উজাড় করে দিতাম। ভাবতাম, আমরা ইতিহাস গড়ছি, দেশের মানুষকে রক্ষা করছি। কিন্তু সহযোদ্ধার জানাজা আর বিমান হামলায় জিম্মিদের মৃত্যু দেখতে দেখতে সেই বিশ্বাস ভেঙে গেছে। এই যুদ্ধ এখন আর হৃদয়ে ধারণ করা যায় না।”

উরির অভিযোগ, তিনি এখন আর আগের মতো অভিযানে মন দিতে পারেন না। বিস্ফোরক পাতা বাড়িতে ঢুকতে ভয় পান। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, “এই যুদ্ধ এখন আর সামরিক অভিযান নয়, পুরোটাই রাজনৈতিক খেলায় পরিণত হয়েছে। আমাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কিছুই অর্জিত হচ্ছে না।”

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো ব্যক্তিত্বদের দিকে ইঙ্গিত না করে তিনি সরাসরি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে উদ্দেশ করে বলেন, “আর কত মৃত্যু হলে আপনি বুঝবেন? ৯০০? এক হাজার? দয়া করে থামুন।”

হারেৎজ জানিয়েছে, সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হননি অধিকাংশ সেনা। তবে যারা কথা বলেছেন, তাদের সবার আকুতি একটাই— “আপনারা আমাদের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠিয়েছেন, এখন আমাদের কথা শুনুন। এই যুদ্ধ থামান।”

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.