কার্ডে লেনদেনে ২২৮% উল্লম্ফন, নগদবিহীন ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে দেশ

দেশে নগদ মুদ্রার ব্যবহার কমিয়ে ডিজিটাল বা কার্ডভিত্তিক লেনদেন উৎসাহিত করার সরকারি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রচেষ্টা আলোর মুখ দেখছে। গত পাঁচ বছরে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে, যা একটি ডিজিটাল ও নগদবিহীন আর্থিক ব্যবস্থার দিকে দেশের ইতিবাচক অগ্রযাত্রাকে নির্দেশ করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ উপাত্তে এই চিত্র উঠে এসেছে।

ছবি - সংগৃহীত

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে দেশে ডেবিট, ক্রেডিট ও প্রিপেইড কার্ড ইস্যু করার হার ১৪০ শতাংশ এবং এসব কার্ডের মাধ্যমে মোট লেনদেনের পরিমাণ ২২৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২০ সালের মে মাস থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত পাঁচ বছরে ডেবিট কার্ড ইস্যুর সংখ্যা ১ কোটি ৯৪ লক্ষ থেকে ১১৩ শতাংশ বেড়ে ৪ কোটি ১৫ লক্ষে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা ১৫ লক্ষ থেকে ৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২৫ লক্ষে পৌঁছেছে। তবে এই সময়ে সবচেয়ে অভাবনীয় পরিবর্তন এসেছে প্রিপেইড কার্ডের ব্যবহারে। পাঁচ বছর আগের সাড়ে পাঁচ লক্ষ প্রিপেইড কার্ডের সংখ্যা ১,২৮৩ শতাংশের অসাধারণ উল্লম্ফনে ৭৬ লক্ষে উন্নীত হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, গত পাঁচ বছরে দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় একটি উল্লেখযোগ্য রূপান্তর ঘটেছে, যার পেছনে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে কার্ডভিত্তিক লেনদেনের দ্রুত বিস্তার। তিনি বলেন, “নগদবিহীন ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রসারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া উদ্যোগগুলো সফল হয়েছে। কার্ডের ব্যবহারে এই ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশে একটি ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক ব্যবস্থা তৈরির ইতিবাচক প্রবণতাকেই নির্দেশ করে।”

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ইলেকট্রনিক লেনদেনের পদ্ধতিকে আরও গতিশীল করতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু লক্ষ্যভিত্তিক নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রক সংস্কার বাস্তবায়ন করেছে। ডিজিটাইজেশনের ওপর এই কৌশলগত মনোযোগের ফলে কার্ডভিত্তিক লেনদেনে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। কারণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ ভোক্তা উভয়েই ক্রমশ ডিজিটাল আর্থিক মাধ্যমের দিকে ঝুঁকছে। দেশের উন্নয়ন, মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক লেনদেন বাড়ার সাথে সাথে কার্ডের ব্যবহার আগামীতে আরও বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

লেনদেনের ধরন ও খাত

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের এপ্রিলে দেশের অভ্যন্তরে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ব্যয়ের প্রায় অর্ধেক (৫০ শতাংশ) হয়েছে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে। অন্যদিকে, দেশের বাইরে ডেবিট কার্ডে মোট লেনদেন হয়েছে ৩,১০৮ মিলিয়ন টাকা, যার মধ্যে নগদ অর্থ উত্তোলন (২০.৭৮%), খুচরা বিক্রয় সেবা (২০.৫৩%) এবং ডিপার্টমেন্টাল স্টোর (১৭.৮৫%) ছিল শীর্ষে। একই সময়ে প্রিপেইড কার্ডের মাধ্যমে বিদেশে ৮৪৫ মিলিয়ন টাকা লেনদেন হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে সরকারি সেবায় (২৪.৬৮%), এরপর রয়েছে নগদ অর্থ উত্তোলন (১৮.৪৩%) এবং ব্যবসায়িক সেবা (১৮.২৯%)।

ভৌগোলিক ব্যবহার

বাংলাদেশি নাগরিকরা তাদের ক্রেডিট কার্ড সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে (১৪ শতাংশ)। অন্যদিকে, ডেবিট কার্ডের সর্বোচ্চ ব্যবহার হয়েছে চীনে (২১ শতাংশ) এবং প্রিপেইড কার্ড যুক্তরাজ্যে (২২ শতাংশ)। আর বাংলাদেশে বিদেশি নাগরিকদের কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা, যাদের ব্যয়ের পরিমাণ মোট বিদেশি লেনদেনের ৪২ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ, বহির্গামী এবং অন্তর্মুখী—এই তিন ধরনের লেনদেনেই সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হিসেবে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে ভিসা কার্ড।