বাণিজ্য উত্তেজনা: এবার ইউরোপের ওপর চড়াও বেইজিং

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল চীন। রবিবার বেইজিং ঘোষণা করেছে, বড় অঙ্কের সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ইউরোপের চিকিৎসা সরঞ্জাম কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। এই পদক্ষেপের ফলে দুই অর্থনৈতিক পরাশক্তির মধ্যে বাণিজ্য সংঘাত আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পতাকা

চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যেসব চুক্তির মূল্য ৪ কোটি ৫০ লাখ ইউয়ান (প্রায় ৬২ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার) বা তার বেশি, সেসব ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। তবে যেসব ইউরোপীয় কোম্পানি চীনে বিনিয়োগ করেছে এবং স্থানীয়ভাবে পণ্য উৎপাদন করছে, তারা এই নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে। এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর করা হয়েছে।

এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে এলো, যার মাত্র দুদিন আগে শুক্রবার চীন ইউরোপীয় ব্র্যান্ডির ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যার মূল লক্ষ্য ছিল ফরাসি কনিয়াক। যদিও কয়েকটি বড় ব্র্যান্ডি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এই শুল্ক থেকে ছাড় পেয়েছে, তবে এটি চীন ও ইইউ-এর মধ্যে চলমান বাণিজ্য বিরোধের সর্বশেষ সংযোজন।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ির ওপর শুল্ক আরোপ করার পর থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে শুরু করে। এর প্রতিক্রিয়ায় চীনও ইউরোপ থেকে শূকরের মাংস এবং দুগ্ধজাত পণ্য আমদানির বিষয়ে তদন্ত শুরু করে।

মূলত, গত জুন মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছিল। সে সময় ইইউ ৫০ লাখ ইউরোর (প্রায় ৫৮ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার) বেশি মূল্যের সরকারি চুক্তিতে চীনা কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ব্রাসেলস তখন যুক্তি দেখিয়েছিল যে, চীনের বাজারে ইউরোপীয় সংস্থাগুলোর প্রবেশে যে ‘উল্লেখযোগ্য এবং বারবার আইনগত ও প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতা’ রয়েছে, তা দূর করতে বেইজিংকে চাপ দেওয়ার জন্যই এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইইউ-এর এমন পদক্ষেপের জবাবেই তারা পাল্টা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, “চীন বারবার সংলাপ, আলোচনা এবং দ্বিপাক্ষিক সরকারি ক্রয় চুক্তির মাধ্যমে ইইউ-এর সঙ্গে মতপার্থক্য সঠিকভাবে সমাধান করার সদিচ্ছা প্রকাশ করেছে।”

তিনি আরও যোগ করেন, “দুর্ভাগ্যবশত, ইইউ চীনের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতাকে উপেক্ষা করেছে এবং ক্রমাগত সীমাবদ্ধতামূলক ব্যবস্থা আরোপ করে নতুন সুরক্ষাবাদী প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে চলেছে। তাই পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় ছিল না।”