প্রধান উপদেষ্টা: মুক্তিযুদ্ধের নির্মোহ ইতিহাস তুলে ধরতে হবে

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নির্মোহ ও সঠিক ইতিহাস উপস্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আগামী দিনগুলোতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সকল প্রকল্পের মাধ্যমে যেন মুক্তিযুদ্ধের আসল ইতিহাস ফুটে ওঠে, তা নিশ্চিত করতে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা দিয়েছেন।

সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তিনি এই নির্দেশনা দেন। বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, প্রধান উপদেষ্টার প্রধান সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া এবং মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীন থাকা সম্পত্তিগুলো কীভাবে আরও ভালোভাবে কাজে লাগানো যায় এবং ট্রাস্টকে শক্তিশালী করা যায়, তা পর্যালোচনার জন্য অবিলম্বে একজন পরামর্শক নিয়োগ এবং একটি কমিটি গঠনের আহ্বান জানান অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, ‘কল্যাণ ট্রাস্টকে পুনরুজ্জীবিত করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এর সক্ষমতা বাড়াতে সম্পত্তিগুলো ব্যবহার করে কোন ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যায়, তা আমাদের চিহ্নিত করতে হবে।’

বৈঠকে উপদেষ্টা ফারুক ই আজম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বিভ্রান্তিকর উপস্থাপনার বিষয়ে কথা বলেন। তিনি দাবি করেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়া ব্যয়বহুল অবকাঠামো প্রকল্পগুলোতে রণাঙ্গন বা মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিকার মতো গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক উপাদানগুলো সঠিকভাবে চিত্রিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘এর পরিবর্তে, এসব স্থানে কোনো বিস্তারিত ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ছাড়াই ছবি ও সরঞ্জাম ব্যবহার করে একটি পরিবারকে কেন্দ্র করে অতিরঞ্জিত তথ্য প্রদর্শন করা হয়েছে।’

উপদেষ্টা ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন’ শীর্ষক ২৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের উদাহরণ দিয়ে দাবি করেন যে, বিপুল পরিমাণ তহবিল পাওয়ার পরও এ বিষয়ে কোনো প্রকৃত গবেষণা করা হয়নি।

উপদেষ্টা আজম অভিযোগ করেন যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়টিকে রাজনীতিকরণ করে তাদেরকে একটি দলীয় গোষ্ঠীতে পরিণত করেছিলেন এবং মন্ত্রণালয়ের অবকাঠামো ও তহবিল আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করতেন।

তিনি আরও বলেন, ‘কল্যাণ ট্রাস্টের অধীন সম্পত্তিগুলো অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে, অথচ এগুলো মূল্যবান জাতীয় সম্পদ। এগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বর্তমান সরকারের মেয়াদে গৃহীত প্রধান উদ্যোগগুলোর একটি সারসংক্ষেপ এবং আগামী ছয় মাসের কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন।