ফয়েজ আহমদ: টেলিকম খাত থেকে শত শত কোটি টাকা লুট হয়েছে
- Details
- by বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক
দেশের টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট খাতে দীর্ঘদিন ধরে চলা ‘স্বৈরাচার ও মাফিয়াদের’ সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকার নতুন টেলিযোগাযোগ নীতি প্রণয়ন করছে। এই খাতের লুটপাট বন্ধ করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি ফিরিয়ে আনাই এই নীতির মূল লক্ষ্য।

সোমবার (৭জুলাই) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
ফয়েজ আহমদ বলেন, এই খাতটি পূর্ববর্তী স্বৈরাচারী শাসন দ্বারা সুরক্ষিত একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রভাবে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে এমন কিছু লাইসেন্স ব্যবস্থা রয়েছে যা বিশ্বের অন্য কোথাও নেই। এসবের অপব্যবহার করে সিন্ডিকেট ও মাফিয়ারা টেলিযোগাযোগ খাত থেকে শত শত কোটি টাকা লুট করেছে।”
তিনি দাবি করেন, কিছু প্রতিষ্ঠান মাত্র ৫-১০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে লাইসেন্স নিলেও বার্ষিক ৪০০ কোটি টাকা পর্যন্ত আয় করেছে। তিনি জানান, “গত ১৫ বছরে পূর্ববর্তী সরকার এমন ৩,৪০০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দিয়েছে। সরকার রাজস্বের মাত্র ৫০ শতাংশের মতো পায়, বাকিটা আত্মসাৎ করা হয়। এই লুটপাট বন্ধ করতেই নতুন টেলিযোগাযোগ লাইসেন্সিং নীতি আনা হচ্ছে।”
ফয়েজ আহমদ আরও উল্লেখ করেন যে, টেলিযোগাযোগ লাইসেন্স পেতে ৭-৮টি ধাপ পার হতে হতো, যা একাধিক স্তরের মধ্যস্বত্বভোগী তৈরি করেছে। তিনি বলেন, “এই মধ্যস্থতাকারীরা কার্যত অবৈধ চাঁদা আরোপ করেছে। আমরা যখন ব্যবস্থা নিতে যাই, তখন আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ও সমালোচনা করা হয়।”
নতুন নীতি স্থানীয় সংস্থাগুলোর ক্ষতি করবে—এমন দাবি নাকচ করে দিয়ে ফয়েজ আহমদ বলেন, “যাদের বৈধ লাইসেন্স আছে, তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে না। তবে তারা নবায়ন করতে চাইলে নতুন নীতির অধীনেই করতে হবে। যারা নতুন এই কাঠামো প্রত্যাখ্যান করছে, তারা মূলত পূর্ববর্তী শাসনের দুর্নীতিকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে।”
দেশের ইন্টারনেট সেবার মান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পরিষেবা এখনও নিম্নমানের। তিনি জানান, “কিছুদিন আগেও বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ ইন্টারনেট ভারতের ওপর নির্ভরশীল ছিল। অনেক ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে অবৈধভাবে ব্যান্ডউইথ আনত।”
অবস্থার উন্নতির জন্য গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমরা দেশের সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ ইন্টারনেট সংযোগ বাধ্যতামূলক করেছি। ইন্টারনেটের মান মূল্যায়নের জন্য আমরা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সাথে একটি ‘মূল কার্যকারিতা সূচক’ (কেপিআই) ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে আলোচনা করেছি। নিম্নমানের পরিষেবা প্রদানকারীদের জরিমানা করা হবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, সরকার ইন্টারনেট সেবাদাতাদের ব্রডব্যান্ডের সর্বনিম্ন গতি ৫ এমবিপিএস থেকে বাড়িয়ে ১২-১৫ এমবিপিএস করার আহ্বান জানিয়েছে। ফয়েজ আহমদ বলেন, “পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে, ৫ এমবিপিএসকে আর ব্রডব্যান্ড বলা যায় না।”
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) সমস্যা নিয়ে ফয়েজ আহমদ অভিযোগ করেন, অনেক বেসরকারি সংস্থা চায় না বিটিসিএল বাজারে টিকে থাকুক। তিনি বলেন, “তারা নিজেদের অবকাঠামো উন্নত করলেও বিটিসিএল পিছিয়ে পড়ছে। বিটিসিএলের ৩০০ কোটি টাকার ফাইবার নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত না হলে পুরো অর্থই নষ্ট হবে।”
পূর্ববর্তী প্রশাসনের অধীনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং টেলিযোগাযোগ খাতে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, প্রতিটি খাতের জন্য আলাদা শ্বেতপত্র কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা কেবল যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে দরপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় অনেকেই মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছেন এবং এই মন্ত্রণালয় সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন।”
তিনি আশ্বস্ত করেন যে, বর্তমান প্রশাসনের অধীনে কোনো নতুন তথ্যপ্রযুক্তি প্রকল্প শুরু করা হয়নি এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহযোগিতায় অতীতের প্রকল্পের অনিয়মগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ফয়েজ আহমদ বলেন, “নতুন নীতি সম্পর্কে সব পরামর্শ গুরুত্ব সহকারে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। সরকার সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নীতিটি চূড়ান্ত করার জন্য কাজ করছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা কোনো স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় আসিনি, আমরা জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে এসেছি। এই নতুন নীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নয়, সংস্কারের জন্য। এটি দুর্নীতির শৃঙ্খল ভেঙে একটি ন্যায্য, দক্ষ ও ভবিষ্যৎ-প্রস্তুত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পদক্ষেপ।”
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.