কেনিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভে পুলিশের গুলি, নিহত ১১

কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। সোমবার (৭ জুলাই) গণতন্ত্রপন্থী ‘সাবা সাবা’ আন্দোলনের ৩৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত বিক্ষোভে এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

গত মাসে পুলিশি জিম্মায় ব্লগার আলবার্ট ওজোয়াংয়ের মৃত্যুর ঘটনা বিক্ষোভে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ৩১ বছর বয়সী শিক্ষক ও ব্লগার আলবার্ট ওজোয়াংয়ের মৃত্যুর পর গত ২৫ জুন দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, যাতে ১৯ জন প্রাণ হারান। এ ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ছয়জনকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে অভিযুক্তরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন। ওজোয়াংয়ের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সরকারবিরোধী ক্ষোভ আবারও তীব্র আকার ধারণ করেছে এবং শত শত মানুষ রাজপথে নেমে এসেছেন।

সোমবার কাঙ্গেমি থেকে নাইরোবির কেন্দ্রস্থলের দিকে এগিয়ে যাওয়া বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে ধাওয়া করলে গুলি চালানো হয়।

রয়টার্সের একজন প্রতিবেদক নাইরোবির কাঙ্গেমি এলাকায় পুলিশের এই গুলিবর্ষণের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন। এ সময় তিনি এক বিক্ষোভকারীকে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেন। স্থানীয় ঈগল নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গুলিবিদ্ধ ছয়জনকে সেখানে ভর্তি করা হয়েছিল, যাদের মধ্যে দুজন মারা গেছেন। কেনিয়াটা ন্যাশনাল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সেখানে ২৪ জন আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে তাদের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

কেনিয়া পুলিশ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘সারাদেশে ১১ জন বিক্ষোভকারী নিহত এবং ৫২ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।’ তবে কাদের গুলিতে এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, তা বিবৃতিতে স্পষ্ট করা হয়নি। প্রাথমিক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে পুলিশ বিবৃতিতে আরও জানায়, ‘দেশজুড়ে বহু জায়গায় প্রাণহানি, ক্ষয়ক্ষতি, যানবাহন ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।’

চলতি বছরের জুনে কর বৃদ্ধির বিরুদ্ধে তরুণদের নেতৃত্বে এই আন্দোলন শুরু হলেও পরে তা সরকারের দুর্নীতি, পুলিশের বর্বরতা এবং সরকারবিরোধীদের গুমের প্রতিবাদে রূপ নেয়।

কেনিয়ার জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (কেএনসিএইচআর) জানিয়েছে, বিক্ষোভ চলাকালে অসংখ্য মুখোশধারী ও পোশাকবিহীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যকে পরিচয়হীন গাড়িতে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। অথচ গত বছরের এক গুলিবর্ষণের ঘটনার পর আদালতের নির্দেশ ছিল, দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশ সদস্যদের অবশ্যই শনাক্তকরণযোগ্য পোশাকে থাকতে হবে। কমিশন আরও জানায়, নাইরোবি ও এলডোরেট শহরে পুলিশের সঙ্গে থাকা কিছু সশস্ত্র অপরাধী গোষ্ঠী চাবুক ও দা দিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে।

স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, নাইরোবি ছাড়াও নয়েরি, এমবু ও নাকুরু শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। নাকুরুতে পাথর নিক্ষেপকারী বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে অশ্বারোহী পুলিশ নামানো হয়েছিল।

দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিপচুম্বা মুরকমেন গত মাসে এ আন্দোলনকে ‘বিক্ষোভের ছদ্মবেশে সন্ত্রাস’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। গত রোববার তিনি বলেন, ‘সরকার জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে সন্ত্রাসী অনুপ্রবেশকারীদের কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে।’

উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালের ৭ জুলাই তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল আরাপ মোইয়ের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে কেনিয়াকে বহুদলীয় গণতন্ত্রে রূপান্তরের লক্ষ্যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। সেই আন্দোলনের ফলেই ১৯৯২ সালে দেশটিতে প্রথমবারের মতো বহুদলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই ঐতিহাসিক দিনটির স্মরণে প্রতি বছর ৭ জুলাই ‘সাবা সাবা’ বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়।